তাঁরা দু’জনেই আজ দর্শক ছিলেন। এক জন বার্মিংহামে কোর্টের বাইরে, কোচের ভূমিকায়। অন্য জন ভারতে, টিভি-র সামনে। পুলেল্লা গোপীচন্দ এবং প্রকাশ পাড়ুকোন দু’জনেই দেখতে চেয়েছিলেন তাঁদের অল ইংল্যান্ড খেতাব জেতার কৃতিত্বের দিকে আরও একধাপ এগোতে পারেন কিনা সাইনা নেহওয়াল। কিন্তু দু’জনকেই দেখতে হল স্বপ্ন চুরমার হওয়ার এক কাহিনি। যা দেখে দুই ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারের এক জন— প্রকাশ পাড়ুকোন রীতিমতো বিরক্ত। ফোনে আনন্দবাজারকে বলেই ফেললেন, “এটা কী করল সাইনা?”
বারো বছর আগে শেষ বার অল ইংল্যান্ড থেকে খেতাব জিতে ফিরেছিলেন গোপী। শনিবার সন্ধ্যায় সেমিফাইনালে তাঁর ছাত্রীর স্বপ্ন চুরমার করে দিলেন বিশ্বের আট নম্বর, তাইল্যান্ডের নতুন তারকা রচানক ইন্থানন। যাঁর কাছে এর আগেও দু’বার হেরেছেন সাইনা।
১৫-২১, ১৯-২১-এ মাত্র ৪০ মিনিটেই শেষ বিশ্বের তিন নম্বরের চ্যালেঞ্জ, যা দেখে হতাশ প্রকাশ। ১৯৮০-তে ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় এই খেতাব জিতে যিনি হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, সেই প্রকাশ এ দিন ফোনে বললেন, “সাইনার কোর্ট মুভমেন্ট বেশ স্লো ছিল। উল্টোদিকে তাই মেয়েটা তো সারা কোর্টে প্রায় ভেসে বেরিয়েই টেক্কা দিয়ে গেল সাইনাকে। বুদ্ধি করে যদি খেলাটাকে মন্থর করে দিতে পারত সাইনা, তা হলে হয়তো ম্যাচে ফিরতে পারত। কিন্তু সেটাও করতে পারল না।”
এখানেই শেষ নয়। সাইনার আরও দুর্বলতার কথা তুলে ধরছেন প্রকাশ। পুরো ম্যাচ দেখে উঠে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “সাইনার নেট প্লে যথেষ্ট দুর্বল। বেশ কয়েক বার বেস লাইনে ভুল জাজমেন্ট দিয়ে পয়েন্ট খোয়াল। এটা আমার মোটেই ভাল লাগেনি। ওর মতো একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এই ভুল করবে কেন?”
তিন বারের জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রচানকের এটাই প্রথম সিনিয়র গ্রুপে বড় টুর্নামেন্ট। এবং তাতেই অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ীকে অনায়াসে হারিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ব্যাডমিন্টনে নতুন এক তারকা এসে গিয়েছে। এর আগে ২০১১-য় সুদিরমান কাপে এবং গত বছর সুপার সিরিজ ফাইনালে এই তাই মেয়ের কাছে হেরে গিয়েছিলেন সাইনা। কিন্তু সেই হার থেকে যে শিক্ষা নিতে পারেননি তিনি, তা-ই বোঝা গেল এ দিন। |
প্রথম গেমে পিছিয়ে থেকে সমতা এনে (১০-১০) রচানক আর ফিরে তাকাননি। মাত্র ২২ মিনিটে ২১-১৫-য় জিতে নেন গেমটি। দ্বিতীয় গেমে ১৩-১৩ পর্যন্ত সাইনা লড়েন রচানকের সঙ্গে। কয়েকটি লম্বা র্যালি করে পয়েন্টও জেতেন। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি এই তাই আগ্নেয়গিরিকে। শেষে দু’টি ম্যাচ পয়েন্ট পেয়ে যান রচানক। প্রথমটি সাইনা বাঁচান একটি স্ম্যাশ করে। কিন্তু পরের ম্যাচ পয়েন্টটা আর বাঁচাতে পারেননি। নেটের সামনে ভুল করে বসেন।
প্রথম গেমে সাইনা বিষাক্ত স্ম্যাশ করা এই তাই তরুণীকে বারবার র্যালিতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সারা কোর্টে তখন রচানক যেন উড়ে বেড়াচ্ছেন। খেলার গতিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেও পারেননি সাইনা। বুদ্ধিদীপ্ত নেট-প্লে, নিখুঁত ড্রপ শট, মারাত্মক স্ম্যাশে সাইনাকে হার মানান রচানক। বেস লাইনে সাইনাকে তুমুল দৌড় করিয়ে তাঁকে ক্লান্ত করে তোলেন। এতেই ভারতীয় তারকার লড়াই শেষ।
|