‘মোটা টাকা দিলেই ট্রেড লাইসেন্স’
অশোভন পুর-কীর্তি নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী
বিরোধীরা নয়, কলকাতা পুরসভাকে দুর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। বিষয়: ট্রেড লাইসেন্স।
শনিবার টাউন হলে এক অনুষ্ঠানে পুর-কমিশনারকে পাশে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন, বিভিন্ন বাজারে যথাযথ ব্যবস্থা না-করেই মোটা টাকার বিনিময়ে পুরসভা থেকে বেআইনি ভাবে ব্যবসার লাইসেন্স আদায় হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “বাজারে আগুন রোখার কোনও ব্যবস্থা নেই। ঢোকা-বেরোনোর ব্যবস্থা নেই। শুধু মোটা টাকা দিয়ে পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স বেরিয়ে যাচ্ছে।” পুর-কমিশনারকে সাক্ষী রেখে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ক্ষমতা প্রয়োগ করে কেউ কেউ লাইসেন্স পাইয়ে দিচ্ছে। এটা হতে দেবেন না। এমনকী, আমার নাম করে কেউ গেলেও তা করবেন না।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য ভাবে অনুপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরে ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মেয়র জানান, তিনি এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলীয় কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তা জানেন। তবে মেয়রের অনুপস্থিতিতে পুরসভার দুর্নীতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অনুষ্ঠানে মেয়রের উপস্থিতি জরুরি ছিল বলে মত প্রকাশ করছেন পুরসভারই একাধিক অফিসার। মেয়র অবশ্য মমতার মন্তব্য শুনে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই কাজ করবে কলকাতা পুরসভা। বললেন, “তিনি যা বলেছেন, সেই মতোই ব্যবস্থা নেব।”
সূর্য সেন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারের হাতে অর্থসাহায্যের
চেক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার, টাউন হলের অনুষ্ঠানে।
এ দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, সেই সাহসীদের পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দুর্ঘটনায় মৃত সাত জনের প্রত্যেকের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন তিনি। মৃতদের পরিবারের লোকজন ছাড়াও সেখানে হাজির ছিলেন শহরের একাধিক বাজারের ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধিরা। ছিলেন শিয়ালদহে পুড়ে যাওয়া সূর্য সেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও। বেসরকারি বাজারের দোকানদারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাজারগুলির হাল খুবই খারাপ। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। ঢোকার রাস্তা নেই। এ সব আপনাদেরই করতে হবে। নিজেরা টাকা তুলে বাজারের আধুনিকীকরণ করুন।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শহরের বাজারগুলি ঠিকঠাক ভাবে চলছে কি না, নজর রাখার মূল দায়িত্ব পুরসভার। ওদেরকেই তা দেখতে হবে।”
এক সময়ে বক্তৃতা থামিয়ে হঠাত্‌ তিনি খোঁজ করেন, “পুর-কমিশনার খলিল কোথায়?” পুর-কমিশনারের নাম ধরে মুখ্যমন্ত্রী আবার ডাকলে কেউ এক জন জানান, তিনি মঞ্চের নীচে আছেন। তা শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু নীচে ঘুরলে হবে? উপরে আসুন। আপনাকে বড় দায়িত্ব নিতে হবে।” মমতার বক্তব্য, ১৫ দিনের মধ্যে শিয়ালদহের বাজার খোলার ব্যবস্থা করতে হবে পুরসভাকে। পাশাপাশি, অন্য বাজারগুলির বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুর-প্রশাসনকে।
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গড়ে বাজারের হাল ফেরানোর নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্‌ কর পুরকায়স্থ, দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান ও পুর-কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সকলে মিলে একসঙ্গে এ সবের মোকাবিলা করুন।”
শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসন, হাসপাতাল, সরকারি অফিস ও বাজারগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যে নড়বড়ে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তা একাধিক বার উঠে এসেছে। এক সময়ে তিনি বলেন, “মহাকরণও নিরাপদ নয়। জতুগৃহ হয়ে আছে। বাইরে থেকে ওই বাড়িটা দেখতে ভাল লাগলেও পিছন দিকের অবস্থা খুবই খারাপ। খুপড়ি খুপড়ি ঘর। আগুনের ভয়ে আতঙ্কে থাকি।” এ প্রসঙ্গে তাঁর কথা, “আমি সঞ্জয়ের (মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র) সঙ্গে এ নিয়ে মাঝেমাঝে আলোচনাও করি।”
টাউন হলের সভায় ছিলেন না মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
সরকারি অফিসারদের পাশাপাশি তিনি নিজের দলের সাংসদ, বিধায়ক ও কাউন্সিলরদেরও সতর্ক করেছেন। এ দিন অনুষ্ঠানের মঞ্চে হাজির ছিলেন উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, “আপনাদেরও কিছু কাজ করতে হবে। শুধু দিল্লিতে বসে থাকলে হবে না।”
ব্যবসায়ীদের এ দিন ফের এক বার সতর্ক করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাজারে একসঙ্গে ব্যবসা আর রান্না, দুই-ই চালানো যাবে না। সরকার বুলডোজার দিয়ে নির্মাণগুলি ভেঙে দিলে, সেটা কি ভাল দেখাবে? তা করতে হলে তো এক লক্ষ মার্কেট ভাঙতে হবে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “নিজেরাই ভাল করে বাজার চালান। বাজারে আসা মানুষজনের জীবন সুরক্ষিত করতে আপনারা নিজেরাই উদ্যোগী হোন।”

—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.