বন্দর রাজনীতিতে ভারসাম্যের খেলায় এ বার কি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ‘হাত শক্ত’ হবে? নড়বড়ে হবে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)-এর ভিত?
ফৌজদারি অপরাধে ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ইকবাল গ্রেফতার হওয়ার পরে ফের এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই অবশ্য প্রবীণ কাউন্সিলর সামসুজ্জামান আনসারিকে ওই বরো দেখভাল করতে বলেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও শোভনবাবুর বক্তব্য, “ইকবাল যত ক্ষণ না নিজে ওই পদ ছাড়ছেন, তাঁকে সরানোর প্রশ্ন নেই।”
পুরসভার নিয়মে প্রতি বছর বরোর চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়। আগামী ৩১ মার্চ বর্তমান বরোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইকবালের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় পুর প্রশাসন আর তাঁকে চেয়ারম্যান পদে চাইছে না। তা হলে কে বসবে ওই পদে? বন্দর এলাকার এক নেতার মতে, ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিনা নাজ দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তৃণমূল কাউন্সিলর রবিনা মেয়র পারিষদ তথা গার্ডেনরিচ এলাকার প্রভাবশালী নেতা সামসুজ্জামান আনসারির পুত্রবধূ।
উঠে আসছে কাউন্সিলর মইনুল হক চৌধুরীর নামও।
কেন এগিয়ে রবিনা? বন্দরের ওই নেতার কথায়, “মাস কয়েক আগেও গুরুত্বহীন দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন সামসুজ্জামান। গোষ্ঠী বিন্যাসে ববি-ঘনিষ্ঠ ইকবালের প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত তিনি। মেয়র বনাম ববি-র ঠান্ডা লড়াইয়ের সুযোগে তিনি শোভনের দিকেই ঝুঁকেছেন। আর
তার জন্য ইনামও পেয়েছেন সাম্প্রতিক মেয়র পারিষদের দফতর রদবদলে। পুরসভায় তথ্য ও জনসংযোগের মতো প্রায় গুরুত্বহীন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মেয়রের সুপারিশে তার সঙ্গে বাড়তি পেয়েছেন এন্টালি ওয়ার্কশপ ও নলকূপ-এর শাঁসালো দফতর।
পুরসভার একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, এ বার বন্দরের সাম্রাজ্যও নিজের হাতে রাখতে মেয়র হাত মেলাতে চলেছেন ববি-বিরোধীদের সঙ্গে। আর এই কাজে সামসুজ্জামানের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর বেয়াই কংগ্রেসের মোক্তার। সামসুজ্জামান-মোক্তার জুটি জোরদার হলে ববির আধিপত্য খর্ব হবে, এমনটা ধরেই রবিনাকে চেয়ারম্যান করার ছক কষছে মেয়র ঘনিষ্ঠরা। এই কাজে সামসুজ্জামান তাঁর ভাই সিপিএমের কাউন্সিলর ঝুন্নু আনসারিকেও পাশে পাওয়ার আশা করছেন।
১৫ নম্বর বরোয় ৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৭ জন তৃণমূলের। এঁরা হলেন রঞ্জিত শীল, মহম্মদ ইকবাল, রবিনা নাজ, সামসুজ্জামান আনসারি, তপসিরা বেগম, মমতাজ বেগম ও মইনুল হক চৌধুরী। বাকি দু’জন সিপিএমের মহম্মদ আমিন আনসারি (ঝুন্নু) ও
বদরুদ্দোজা মোল্লা। |
তৃণমূলের কর্মিসভায় আরাবুল এবং সাংসদ সুব্রত বক্সী। শনিবার বারুইপুরে। |
ক’জন রয়েছেন মেয়রের পক্ষে? ওই বরোর এক কাউন্সিলরের কথায়, গার্ডেনরিচ ঘটনার পর ফিরহাদ হাকিমের আধিপত্য কমেছে। কিন্তু তাতে মেয়র-ঘনিষ্ঠদের উল্লাসের কারণ নেই। কাউন্সিলর মইনুল হক চৌধুরী বলেন, “এই বরো চিরকাল অবহেলিত। শহরের অন্যান্য বরোর মতো কাজ এখানে হয় না। বরো পরিচালনায় দক্ষ লোক দরকার।” রবিনা নাজের কথা উঠতেই ওই এলাকার এক কাউন্সিলর বলেন, “তাঁকে তো পুরসভায় দেখাই যায় না। হাজিরা খাতা দেখলেই বোঝা যাবে পুরসভার প্রতি তাঁর দরদ কতটা!”
তবে বরো চেয়ারম্যান বদলের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই বলে দাবি পুরসভার এক পদস্থ অফিসারের। তিনি জানান, মার্চের পর শুরু হবে বরোর নির্বাচন। ১৫ নম্বর একেবারে শেষে। অর্থাৎ ওই বরোর নির্বাচন করতে এপ্রিল কাবার হয়ে যেতে পারে। তত দিনে সমীকরণ বদলে যেতে পারে।
যদিও তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল বলেন, “ওই পদে কে বসবে, এখনও ঠিকই হয়নি। নানা ছক কষা হচ্ছে শুনছি। দল এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।” তিনি নিজে কি ওই দৌড়ে রয়েছেন? রঞ্জিতবাবুর জবাব, “না নেই। মুন্নাদা ফেঁসে যাওয়ায় নানা জনে নানা কথা বলছে।”
কাল, সোমবার পুরসভায় দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন মেয়র। আসন্ন বাজেটের পাশাপাশি বরোর চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে।
|