পুলিশ লেখা গাড়িটি আদালত চত্বর ছাড়ার আগেই শ’খানেক মানুষ ছেঁকে ধরল। তাঁদের মুখে স্লোগান: ‘মুন্নাভাই জিন্দাবাদ, মুন্নাভাই বেকসুর হ্যায়।’ আওয়াজ কানে যেতেই গাড়ির ভিতরে পাঞ্জাবি পরা শরীরটা নড়েচড়ে উঠল। পুলিশ-খুনে অভিযুক্ত গার্ডেনরিচের তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে আদালত থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শনিবার, বিকেল তখন ৫টা।
তার অনেক আগে থেকেই ভিড় জমেছিল আলিপুরে। গার্ডেনরিচ থেকে বাসে চেপে গোপালনগর মোড়ে নেমে হেঁটে এসেছিলেন অনেকে, অনেকে আবার ম্যাটাডর ভাড়া করেছিলেন দল বেঁধে। সকলেরই গন্তব্য ছিল আলিপুর আদালত। সেই ভিড়েই ছয়লাপ হয়ে যায় গোটা চত্বর। মুন্নাকে আদালতে হাজির করানোর সময়ে স্থানীয় ভিড় যে হবে, তা জানত পুলিশও। সেই মতো পুলিশি ব্যবস্থাও ছিল জোরদার। ছিল সাদা পোশাকের এসবি-ও। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও নেতাকে আদালতে হাজির করানো হচ্ছে না দেখে জনতা ধীরে ধীরে চঞ্চল হয়ে ওঠে। কিন্তু কোনও রকম বিক্ষোভ দেখাননি তাঁরা। শেষে দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ মুন্নাকে নিয়ে আদালত চত্বরে ঢোকে সিআইডি-র গাড়ি। |
মুন্নাকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালত চত্বরে বিক্ষোভ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র |
জনতার ভিড়ে এজলাসের সামনে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশের গাড়িটি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এ বার ময়দানে নামে পুলিশ। নামানো হয় র্যাফও। তারাই ভিড়টাকে কোনও রকমে দূরে সরিয়ে দেয়। তার পরে তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যানকে মুখ ঢাকা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন সিআইডি-র অফিসারেরা। মুন্নার পক্ষে স্লোগান চলতেই থাকে। সেই ভিড়ে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাজির গার্ডেনরিচের বহু মহিলারাও। তাঁদের সামনে মুন্নার ভাইঝি সগুফতা। কিন্তু কারও হাতেই নেই তৃণমূলের দলীয় পতাকা।
তবে এঁরা কারা? শুধুই কি নেতার বাড়ির লোকজন? আত্মীয়-স্বজন? একান্তই ঘনিষ্ঠদের ভিড়?
পুলিশ বলছে, ওই ভিড়ে মিশে ছিলেন গার্ডেনরিচের বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকও। মূলত মুন্নার খাসতালুক কলকাতা পুরসভার ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাঁরা। ওই তৃণমূলকর্মীরা এক দিকে যেমন মুন্নার ঘনিষ্ঠ, তেমনই বন্দর রাজনীতিতে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর অনুগত বলে জানে পুলিশ। কিন্তু তাঁদের হাতে দলের পতাকা নেই কেন? তবে কি তৃণমূল নেতৃত্বের উপরে আস্থা হারাচ্ছেন মুন্না-ঘনিষ্ঠেরা? মুখে তেমন কিছু না বললেও আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কার্যত সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের কোনও নেতা আমাদের সাহায্য করলে পরিবারটার এমন অবস্থা হত না।”
এর মধ্যেই বিকেল ৫টা নাগাদ পুলিশের কাছে খবর এল, মুন্নাকে আদালত থেকে বার করতে হবে। পুলিশকে নড়াচড়া করতে দেখে সকাল থেকে জমে থাকা ভিড়টাও নড়েচড়ে উঠল। আদালত থেকে বার করতেই আর এক দফা জয়ধ্বনি। যা বিক্ষোভের রূপ নিল কিছু ক্ষণেই। |