বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তড়পাচ্ছে স্বামী। ঘরে স্ত্রী, যিনি আগেই স্বামীর বিরুদ্ধে অত্যাচারের নালিশ জানিয়েছেন থানায়। স্ত্রী-কে ডেকে দিতে হবে বলে স্বামী হম্বিতম্বি জুড়েছিল পড়শি মহিলার উপরেও। সেখানেই কাল হল। যুবকটির মুখে ঘুঁষি বসিয়ে দিলেন মহিলা প্রতিবেশী। রুখে দাঁড়ালেন আশপাশের মেয়ে-বউরা। পাড়ার জামাইকে লাঠি-ঝাঁটা পেটা করে তুলে দিলেন পুলিশের হাতে। শুক্রবার আলিপুরদুয়ার থানার শালকুমারহাট গ্রামের ঘটনা।
এ দিনই ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ওই বধূকে বাঁচাতে যে ভাবে পড়শি মহিলারা ঝাঁপিয়ে পড়েন, তা দৃষ্টান্তমূলক। এমন দিনে ঘটনাটা ঘটল, তা-ও তাৎপর্যপূর্ণ।” জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগির উচ্ছ্বাস, “মহিলারা প্রতিরোধ করায় ওই সশস্ত্র যুবক ধরা পড়ে। না হলে অঘটন ঘটতে পারত। ওই মহিলাদের পুরস্কার প্রাপ্য।” |
অভিযুক্ত রতন বিশ্বাস। ছবি: রাজকুমার মোদক |
বছর ছ’য়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার বাসিন্দা রতন বিশ্বাসের সঙ্গে শালকুমারহাটের রত্নার বিয়ে হয়। রতন পেশায় দিনমজুর। মাঝেমধ্যে ভিন্-রাজ্যে কাজে যায়। রত্না বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় এজেন্ট। তাঁকেও নানা জায়গায় ঘুরতে হয়। অভিযোগ, সন্দেহের বশে
স্ত্রী-র উপরে অত্যাচার করতে শুরু করে রতন।
অতিষ্ঠ রত্না বিয়ের ছ’মাসের মাথায় বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন। পরে বাপের বাড়ির পাশে ঘর বানিয়ে স্বামীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তাঁদের একটি ছেলে হয়। সে মূক ও বধির। কিন্তু ‘অত্যাচার’ কমেনি। মাস সাতেক আগে থানায় নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন ওই বধূ। পালায় রতন।
অভিযোগ, শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ রতন একটি পিস্তল হাতে চড়াও হয় বাড়ির সামনে। পড়শি রিনা নার্জিনারিকে পিস্তল দেখিয়ে সে রত্নাকে ডেকে দিতে বলে। রাজি না হওয়ায় রিনাকে মারধরের ভয় দেখায় রতন। তারপরেই প্রমীলাদের ‘আক্রমণ’। রিনার কথায়, “আমি তো ঘুঁষি মেরেইছি। অন্য বাড়ির মেয়ে-বউরা মিলেও আচ্ছা করে পিটিয়েছে রতনকে। পিস্তল দেখিয়ে চমকাবে? এটা মগের মুলুক নাকি!” আর এক পড়শি পুতুল রায় বলেন, “একে তো রিনাকে মিথ্যা সন্দেহে মারধর করত! এ দিন আবার পিস্তল নিয়ে এসেছিল বীরপুরুষ! কিন্তু আমরা মেয়েরা কম নাকি!” রতনকে বেঁধে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। রত্না বলছেন, “স্বামীর কী মতলব ছিল কে জানে! গ্রামের মেয়েরাই আমরা ভগবান। স্বামীর সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখব না।” |