বুক বাঁধছে মোর্চা
কেন্দ্রের আশ্বাসে পাহাড়ে বনধ প্রত্যাহার
প্রত্যাশিতভাবেই পাহাড়ে বনধ-সহ তাদের যাবতীয় আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
শুক্রবার, নয়াদিল্লি থেকে ফিরে কার্শিয়াঙে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি বৈঠকের পরে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত সব আন্দোলন প্রত্যাহার করা হল। মোর্চা সভাপতি বলেন, “নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই অভাব-অভিযোগ শুনে আশ্বাস দিয়েছেন। ওঁদের অনুরোধ মেনে আমরা আপাতত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত সব আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করলাম। ওই সময়ের মধ্যে কেন্দ্র আমাদের অভিযোগ, সমস্যার নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগী হবে বলে আশা করছি। না হলে ফের আন্দোলনের কথা ভাবতে হবে।” মোর্চা সভাপতির আশা, ওই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের তরফে জিটিএ ও রাজ্যকে নিয়ে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে। ঘটনাচক্রে, এ দিন সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেছেন, “পাহাড়ের মোর্চা নেতারা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি ওংদের সমস্যা সমাধানের জন্য সকলের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছি। রাজ্য সরকার জিটিএ চুক্তি মেনে সব কিছু কার্যকর করছে না বলে ওঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঠিক হয়েছে, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। বিষয়গুলি মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে কেন্দ্রের তরফে অনুরোধও করা হবে।” আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও কিছুটা চাপ বজায় রাখতে মোর্চার তরফে তাদের সরকারি সংগঠনের সদস্যদের অবশ্য প্রতি দিন দুপুরে এক ঘন্টা করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৪ ও ১৫ মার্চ এবং ২১ ও ২২ মার্চ পাহাড়ে মৌন মিছিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা।

বাগডোগরায় বিমল-রোশন। —নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের আন্দোলন সাময়িক স্থগিত হওয়ায় রাজ্য সরকার স্বস্তিতে। তবে, সরকারি সূত্রের খবর, পাল্টা চাপ বজায় রাখতে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর মতে, “পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি নেই।”
সব ঠিক থাকলে আগামী ১২ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর ফের উত্তরবঙ্গ সফরের কথা। ওই সময়ে তিনি দার্জিলিং পাহাড়েও যেতে পারেন। সেই প্রসঙ্গে মোর্চা সভাপতির বক্তব্য, “উনি তো এ দিক-ও দিক ঘুরে বেড়ান। পাহাড়েও আসবেন। তবে পাহাড়ে আমরা ওঁকে আর স্বাগত জানাব না। ওঁকে আমরা সম্মান দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের দুঃখ দিয়েছেন। উনি বৈঠকে ডাকলেও যাব না।” ফেব্রুয়ারির গোড়ায় রাজ্যের তরফে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের পরে মোর্চার সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে। তখনই মোর্চা নেতারা প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা শুরু করেন। ৯ মার্চ থেকে পাহাড়ের সব সরকারি অফিস অচল করে দু’দফায় ৪ দিন বন্ধের ডাক দেয় মোর্চা। গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম, পাহাড়ের স্কুল ও চা শিল্প মহলের তরফে মোর্চার উপরে আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হয়। জিটিএ-র কাজকর্ম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সাধারণ পাহাড়বাসী, ঠিকাদারদের তরফেও মোর্চা সভাপতির উপরে চাপ বাড়ানো হয়।
তখনই পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে মোর্চা। রাজ্যের তরফে প্রকাশ্যে বারেবারে আর্জি জানানো হলেও সরকারি ভাবে আলোচনার ডাক মেলেনি, এই অভিযোগ তোলে মোর্চা। ইতিমধ্যে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার, কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির মাধ্যমে নয়াদিল্লিতে যোগাযোগ করে ‘মুখরক্ষার’ উপায় খুঁজতে শুরু করেন মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার অন্দরের খবর, সেই সময়ে ঠিক হয়, নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে আশ্বাস পেলে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে মোর্চা। সেই মতো গত তিন দিন ধরে নয়াদিল্লিতে যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে সেই আশ্বাস পেতেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন মোর্চা নেতারা।
এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমরা তো গোড়া থেকেই বলছি বন্ধ, সংঘাত চাই না। এখন রাস্তা সহ নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ থমকে গেলে সমস্যা বাড়বে। কারণ, পাহাড়ে তাড়াতাড়ি বর্ষা নামে। এ সব ভেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য বারেবারে অনুরোধ করেছি।”
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তাঁর কটাক্ষ, “ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে কি না সেই ব্যাপারে দীপাদেবীর বিবৃতি দেওয়ার এক্তিয়ার নেই।” দীপাদেবী অবশ্য পাহাড়ে ফের অশান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য তৃণমূলকেই দূষেছেন। তাঁর অভিযোগ, “পাহাড়ের আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রটা তৃণমূলই তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে একটি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে রাজনীতির কিছু নেই।”
এ দিকে, কালিম্পঙে তৃণমূল নেতাদের উপরে হামলার অভিযোগে মোর্চার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন গুরুঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, “সারা রাজ্যে তৃণমূলের লোকজন গোলমাল করছে। পুলিশকে তৃণমূলের লোক খুন করেছে। এখানেও লেপচা বোর্ড তৈরি করে বিভেদের রাজনীতি করতে চাইছে। কালিম্পঙের ঘটনা একটা চক্রান্ত। আর যাঁকে মারার কথা বলা হচ্ছে, উনি কখন কোন দলে থাকেন তা তো ঠিক নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.