উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে অন্যান্য শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। এই মর্মে সুপারিশ করেছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদই। শুক্রবার সংসদের তরফে জানানো হয়, তাদের সেই সুপারিশ মেনে রাজ্য সরকার স্কুলগুলিতে এই নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৫৮৩৮। আগামী ১৩ মার্চ একাদশ শ্রেণি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। চলবে ২৬ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু দু’টি উঁচু শ্রেণির ওই পরীক্ষার জন্য স্কুলের অন্যান্য শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হচ্ছে কেন?
মুক্তিনাথবাবু এ দিন বলেন, “সকালে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস নিয়ে দুপুরে একাদশের পরীক্ষা নেয় অনেক স্কুল। কিন্তু সকালের পড়াশোনার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই বাড়ি চলে যান কিংবা পরীক্ষার নজরদারির কাজটাকে তেমন গুরুত্ব দেন না।” এতে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছিল না বলে মনে করে সংসদ। তাই এ বার একাদশ শ্রেণি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে অন্যান্য শ্রেণির পড়াশোনা বন্ধ রাখার জন্য রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল বলে জানান সংসদ-সভাপতি। তিনি বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষাকর্মীদের দিয়ে বা দু’জন শিক্ষককে দিয়ে চারটি ঘরে ঠিকমতো নজরদারি চালানো যায় না। আমরা চাই, পরীক্ষাটা পরীক্ষার মতো করেই হোক।” মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তো শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষা-ক্যালেন্ডার দিয়ে জানায়, ক্লাসে কোন সময়ের মধ্যে কতটা পড়াতে হবে, কবে পরীক্ষা হবে ইত্যাদি। একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষার সময় সব স্কুলে ক্লাস বন্ধ থাকলে সেই ক্যালেন্ডার বিঘ্নিত হবে না কি?
সংসদের ব্যাখ্যা, পরীক্ষা চললে এমনিতেই পুরো ক্লাস হতে পারে না। তাই এই ব্যবস্থায় তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। আর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষার সময় যদি ক্লাস চললে সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে যাতে সুবিধা হয়, সেটাই করতে হবে। পরিস্থিতি যা, তাতে তো মনে হচ্ছে, বিকল্প কোনও পথ নেই।”
এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন মোট সাত লক্ষ ৬০ হাজার ৯৬৩ পড়ুয়া। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা তিন লক্ষ ৩৩ হাজার ৬১৬ এবং ছাত্রীর সংখ্যা তিন লক্ষ এক হাজার ৮৫৪। মোট ১৮৪৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। মাধ্যমিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যাপক টোকাটুকি হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে নকলবাজি ঠেকানোর জন্য পুলিশি ব্যবস্থার কথাও জানানো হয়েছে। টোকাটুকি রুখতে প্রায় ১৭৫টি কেন্দ্রে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হবে। একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষার উপরে যে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, পরীক্ষার সময় অন্যান্য শ্রেণির পাঠ বন্ধ রাখা তারই প্রমাণ বলে ধারণা শিক্ষাজগতের একাংশের। |