পুস্তক পরিচয় ৩...
ভারতের প্রতি প্রেম নিবেদন
ল্পের মতোই লাগে পড়তে, তবে গল্প নয়। বেড়ানোর গল্প বলা যেতে পারে একরকম, কিন্তু সে বেড়ানোয় লেগে থাকে সেই সব বেঁচে-থাকার গল্প, যাতে ছায়া ফেলে স্পন্দমান কঠিন কোনও দিনযাপন। যেমন গর্ভবতী সরযূ, স্বামী যখন অফিসে, সে বাজার করে ফিরছিল, ফেরার পথেই পেটের খিঁচ-ধরা ব্যথার তীব্রতায় ব্যাগগুলো নামিয়ে পাঁচিল ধরে টাল সামলাতে হল। আর তখনই তার ব্যাগগুলো তুলে ধরে আর একটি বালিকা, তাকে বলে ‘এসো আমার কাঁধটা ধরে টাল সামলাও।’ বালিকাটির নাম সুরিয়া। ‘রাস্তার মেয়ে, তেল সাবান পড়েনি বহুদিন, গায়ে ময়লা ভর্তি, লম্বা কালো চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মুখের ওপর এসে পড়েছে, পরনের পোশাকটা, নাকি বলা উচিত, যেটা এককালে পোশাক ছিল আর বর্তমানে ধূসর বাদামী রং-এর জীর্ণবাস ছাড়া আর কিছু নয়।... মেয়েটার চাহনিতে কোনো প্রশ্ন ছিল না, ছিল না কোনো ভিক্ষাবৃত্তি, না ছিল কোনো আবেদন অথবা নিবেদন, ছিল অসীম শোক, যা সরযূর নিজের চোখে ফুটে-ওঠা শোকের বেদনার সঙ্গে মিলে গেল।’
আশ্চর্য নজর এলিজাবেথ গু্যন্টার-এর, তাঁর কলমেই উঠে আসে এমন পর্যবেক্ষণ, ভারতবাসীর মুখ। কলকাতার ফুলের বাজার থেকে বারাণসীর গঙ্গা, মুম্বইয়ের জিপিও থেকে সারনাথ, ভরতনাট্যম থেকে মিনিয়েচার— অজস্র টুকরো গদ্যের কোলাজ, কবিতার চিত্রকল্প, যেন-বা শিল্পমুহূর্তও। নানান সময়ে নতুন-পুরনো ভারতবর্ষে তাঁর অনুপুঙ্খ ভ্রমণ থেকে গদ্যে-পদ্যে মেশা যে আখ্যান তৈরি হয়েছে, শ্বাসেপ্রশ্বাসে ভারত আমার (অভিযান, ২৫০.০০), একে পর্যটন-রোজনামচা বলা যেতেই পারত, কিন্তু হয়ে উঠেছে সাহিত্য।
মিউনিখের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটের গেয়র্গ লেশনার-এর অবশ্য মনে হয়েছে ‘আদতে এটি ভারতবর্ষের প্রতি এক প্রকার প্রেম নিবেদন।... লেখিকার ভারতভ্রমণ এমনই এক পর্যটন, যা বৃহত্তর নিজের কাছেই নিজের যাওয়া এবং একই সঙ্গে ফিরে-না-আসাও বটে। এ একরকম আবিশ্ব যাত্রা যেন।’ গেয়র্গের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মত: ‘এমন এক আত্মতা তৈরি হয়েছে আমাদের দেশের সঙ্গে এলিজাবেথের যে তাঁর চোখে আবার নতুন ভাবে ভারতবর্ষ আবিষ্কারের স্বাদ পাচ্ছি।’ আখ্যানের কবিতাগুলি অলোকরঞ্জনেরই ভাষান্তর, আর গদ্যাংশটি পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়ের, অবশ্যই মূল জার্মান থেকে। চমৎকার কিছু আলোকচিত্রও রয়েছে।
একালের জার্মান সাহিত্যে স্বচিহ্নিত এলিজাবেথ ন্যুর্নবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথের শেষপর্বের কবিতা জার্মানে ভাষান্তর করছেন অলোকরঞ্জনের সঙ্গে। অলোকরঞ্জনের কলমে ভাষান্তরিত তাঁর ‘জীবিকা, মনের মতো’ কবিতাটির একটি স্তবক:
আটপৌরে জামা আর
ব্যবহারজীর্ণ এই ট্রাউজার্স্ সম্বল,
বর্ণময় অধিকার ছেড়ে দেয় কাপড়ের হাতে।
শুধু কিনা দুই হাতে নরম সিল্কের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.