শনিবারের নিবন্ধ
মার্চ ৩১
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মতো মার্চও কেনাকাটার মাস।
প্রথমটা দুর্গাপুজোর, পরেরটা কর সাশ্রয়ের জন্য কেনাকাটা।
পুজোর মুখে অনেকেই বোনাস পান। তাই খুব একটা অসুবিধা হয় না। আর্থিক বছরের শেষে কিন্তু অতিরিক্ত কোনও আয় হাতে আসে না। অর্থাৎ এ সময়ে মোটা লগ্নি করা বেশ কষ্টকর।
পরিকল্পনামতো গোটা বছর ধরে সঞ্চয় এবং লগ্নি করে গেলে এই সমস্যায় পড়তে হয় না। তা অবশ্য অনেকেরই করা হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া কর সাশ্রয়কারী কোনও কোনও প্রকল্প বাজারে আসে শেষ দু’তিন মাসে। আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র মাসখানেকের কিছু বেশি। শেষ মাসে মোটা কর কাটা এড়াতে এই ক’দিনের মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে প্রয়োজনমতো লগ্নি। লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে হলে জানতে হবে কোন প্রকল্পে কতটা লগ্নি করলে কী পরিমাণ কর ছাড় পাওয়া যেতে পারে। দেখে নেব এক নজরে।
আয়কর আইনের ৮০ ধারার অধীনে কয়েকটি উপধারা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করে কর বাঁচানো যেতে পারে অনেকটাই। এক এক করে দেখে নেওয়া যাক সেই উপধারাগুলি। বিশেষ নজর থাকবে নতুন কর সাশ্রয়কারী প্রকল্প রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম (আর্গেস)-এর প্রতি।

৮০ সি ধারা: কর সাশ্রয়ের ব্যাপারে সব থেকে জনপ্রিয় ধারা। এই ধারা অনুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে বছরে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি/ খরচ করলে লগ্নির সমপরিমাণ অর্থ বাদ দেওয়া হয় ওই বছরের আয় থেকে। অর্থাৎ সেই অঙ্কের উপর কোনও আয়কর দিতে হয় না। যে প্রকল্পগুলি ৮০সি ধারায় অনুমোদিত তার মধ্যে আছে
১. সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা। বাধ্যতামূলক জমা ছাড়াও সীমা এবং শর্ত সাপেক্ষে স্বেচ্ছায়ও জমা করা যায় অতিরিক্ত টাকা।
২. পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ। ১৫ বছর মেয়াদি পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বছরে সর্বাধিক জমা করা যায় এক লক্ষ টাকা অনধিক ১২ কিস্তিতে। এই জমার উপর বর্তমান সুদ ৮.৮ শতাংশ। এই সুদ পুরোপুরি করমুক্ত।
৩. ব্যাঙ্কের কর সাশ্রয়কারী জমা প্রকল্প। এই প্রকল্পে টাকা রাখতে হবে পাঁচ বছর মেয়াদে। বর্তমান সুদের হার কম বেশি ৯ শতাংশ। এ ছাড়া টাকা রাখা যায় ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্কের সুবৃদ্ধি প্রকল্পে এবং হাডকোর জমা প্রকল্পে। সুদের হার যথাক্রমে ৯.২৫ এবং ৯ শতাংশ।
৪. জীবন বিমার প্রিমিয়াম- নিজের, স্বামী/ স্ত্রী এবং সন্তানের জীবন বিমার উপর প্রদত্ত প্রিমিয়াম ৮০সি ধারায় কর ছাড়যোগ্য (শর্ত সাপেক্ষে)
৫. জাতীয় সঞ্চয়পত্র (এনএসসি) - মেয়াদ ৫ বছর এবং ১০ বছর। সুদের হার যথাক্রমে ৮.৬ শতাংশ এবং ৮.৯ শতাংশ। মূল লগ্নি ছাড়া সুদের উপরও কর ছাড় পাওয়া যায়। সুদ নিয়ে কিন্তু করযোগ্য।
৬. মিউচুয়াল ফান্ডের ইউলিপ এবং পেনশন প্রকল্পে লগ্নি।
৭. অনধিক দু’জন সন্তানের পুরো সময়ের শিক্ষা বাবদ ব্যয়।
৮. গৃহ ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয়।
৯. মিউচুয়াল ফান্ডের ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম অনুযায়ী লগ্নি।

৮০ সিসিজি ধারা: চলতি বছরে প্রথম পাওয়া যাবে এই ধারার অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা। ২০১২-১৩ বছরের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকাশিত হয়েছে রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম। এই প্রকল্প অনুযায়ী ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করেন এমন করদাতারা যাঁরা কোনও দিন ইক্যুইটিতে লগ্নি করেননি, তাঁরা এই প্রকল্পে নির্দিষ্ট শেয়ার এবং মিউচুয়াল প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে লগ্নির ৫০ শতাংশের উপর কর ছাড় পাবেন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য কর ছাড়ের সুযোগ দিয়ে নতুন লগ্নিকারীদের ইক্যুইটির প্রতি আকৃষ্ট করা। যাঁরা ২০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন তাঁরা এই প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা লগ্নি করলে কর বাবদ ৫১৫০ টাকা বাঁচাতে পারবেন।

যে সব ক্ষেত্রে লগ্নি করলে রাজীব গাঁধী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে তার মধ্যে আছে
১. বিএসই ১০০ এবং এনএসই সিএনএক্স ১০০ সূচকের অন্তর্গত যে কোনও শেয়ার।
২. মহারত্ন, নবরত্ন এবং মিনিরত্ন আখ্যাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার।
৩. সেই সব এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) যার তহবিল রাজীব গাঁধী প্রকল্প অনুমোদক শেয়ারে লগ্নি করা হবে।
৪. অনুমোদিত শেয়ার আর মিউচুয়াল ফান্ডের সরাসরি এবং প্রাথমিক ইস্যু।

এরই মধ্যে কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে এনেছে রাজীব গাঁধী প্রকল্প অনুমোদিত ফান্ড। এগুলি হল-
১. ডিএসপিবিআর আর্গেস (রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম) সিরিজ ১
২. আইডিবিআই আর্গেস সিরিজ ১ প্ল্যান-এ
৩. এসবিআই সেনসেক্স ইটিএফ
৪. ইউটিআউ আর্গেস ফান্ড।
রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি প্রকল্পে লগ্নি করতে হলে নতুন ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে ইক্যুইটির বাজারে আনকোরা লগ্নিকারীদের। ইক্যুইটির বাজারে যাঁরা কোনও দিন লগ্নি করেননি তাঁদের প্রথম দিকে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ইক্যুইটির জগতে পরোক্ষ ভাবে প্রবেশ করা উচিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রাজীব গাঁধী প্রকল্পে লগ্নির লক-ইন মেয়াদ তিন বছর।
৮০ ডি ধারা: এই ধারার অধীনে কর ছাড় পাওয়া যায় স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম বাবদ। ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম বাদ দেওয়া হয় মোট আয় থেকে। প্রবীণ নাগরিকরা এই ধারায় ছাড় পান ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামের উপর। অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা ছাড় পাওয়া যায় নির্ভরশীল পিতামাতার মেডিক্লেম বাবদ প্রিমিয়ামের উপর।

৮০ ডিডি: এই ধারায় নির্ভরশীল অক্ষম ব্যক্তির চিকিৎসা এবং ভরণপোষণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। বিশেষ অক্ষমতার ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৮০ ই: এই ধারায় ছাড় পাওয়া যায় নিজের/ স্বামী / স্ত্রী/ সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য নেওয়া শিক্ষা ঋণের সুদের উপর। প্রকৃত সুদ বাদ দেওয়া হয় আয় থেকে।

৮০ জি: কর ছাড় পাওয়া যায় দান করলেও। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। শুধুমাত্র স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে দান করলে ৫০ শতাংশ এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশের উপর পাওয়া যায় কর ছাড়। দানের অঙ্ক মোট আয়ের ১০ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে।

৮০ টিটিএ: এই ধারায় এ বার কর ছাড় পাওয়া যাবে সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রাপ্ত সুদের উপর। এটি একটি নতুন ছাড়। অনেকটা আগের ৮০ এল ধারার মতো। নতুন এই ধারা অনুযায়ী ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের সেভিংস অ্যাকাউন্টে প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ এ বার করমুক্ত থাকবে।

৮০ জিজি: কর ছাড় পাওয়া যায় বাড়ি ভাড়ার উপর। যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাঁরা নীচের মধ্যে যেটি সব থেকে কম তা ছাড় পেতে পারেন।
১. মোট আয়ের ২৫ শতাংশ।
২. মাস প্রতি ২০০০ টাকা।
৩. বেতনের ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে দত্ত বাড়ি ভাড়া যাঁরা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান তাঁরা এই ধারায় কর ছাড় পাবেন না।

ধারা ২৪: এই ধারায় ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায় গৃহঋণের উপর সুদ বাবদ।

মডেল: নুসরত
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.