|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
হাতের কাছেই গুরুজি |
ভিডিয়ো বুক বা ভারচুয়াল মিউজিয়াম সম্ভবত এই প্রথম নাচের জগতে পা রাখতে চলেছে।
ইন্টারনেটে
সংরক্ষিত
এক ওয়েবসাইট। উদ্যোক্তা নৃত্যশিল্পী সুতপা তালুকদার। কথা বললেন বিপ্লবকুমার ঘোষ। |
প্র: হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ?
উ: যেমন ধরুন, কেলুচরণ মহাপাত্র ১৯৯২ সালে ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ নৃত্যনাট্যটির পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন। সঙ্গীত ও আবহের দায়িত্বে ছিলেন ভি বালসারা। এমন মহান সৃষ্টি কি পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে পাবে না? এমনই নানা কারণে ভিডিয়ো বুক করার ইচ্ছে ছিল বহু দিনের। অনেক বেশি মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছতে এটাই এখন সেরা পথ।
প্র: কিন্তু এর থেকে নতুন প্রজন্ম আর কী শিখবে?
উ: কেলুচরণ মহাপাত্রের কাছে শেখা পঞ্চান্নটি নৃত্য এই ভিডিয়ো বুকে সংযোজিত হয়েছে। অনেকেই সেটা চোখের সামনে দেখতে পারেন। শিখতেও পারেন। আসলে ওড়িশি নৃত্যজগতে এখনও পর্যন্ত বহু প্রতিভা এসেছেন, চলেও গিয়েছেন। তাঁদের প্রতিভাগুলিও এখানে সংরক্ষিত হচ্ছে। সব ‘গুরুগম্ভীর’ সরকারি আর্কাইভে কিছু কিছু তোলা আছে। সেগুলোও ফিরিয়ে আনছি নতুন করে। ধরুন না, ঘরে যদি মা-দিদিমার সোনার গয়না, মুক্তো-জহরত থাকে, তবে বাইরে গিয়ে ইমিটেশন গয়না পরার দরকার হয় না। নতুন প্রজন্ম তো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে।
প্র: শাস্ত্রীয় নৃত্য-সঙ্গীত গুরু পরম্পরা বিদ্যা। এত কাল তো অডিয়ো ভিস্যুয়াল দেখেই অনেকে অনেক কিছু শিখেছে। তাই না?
উ: একটু আগেই তো বললাম, নকল আর আসল সোনার তফাতটা কোথায়। (উত্তেজিত হয়ে) এখনকার নবীন শিল্পীরা কি দেখেছে সংযুক্তা পাণিগ্রাহীর অপূর্ব মুখারী পহ্লবী? কুমকুম মহান্তির হংসধ্বনি পহ্লবী? পঙ্কজচরণ দাসের কোরিওগ্রাফি? আমিও চাই না, আমার গুরুজির কাজ যুগ-পরম্পরায় হারিয়ে যাক।
প্র: যা বলছেন মানছি। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছবে তো?
উ: কেন পৌঁছবে না? এই ‘ভিডিয়ো বুক’ কম করেও পাঁচটি ভাষায় অনূদিত। বিদেশেও যাবে। আপনি বিশ্বাস করবেন না এর আগে লাতিন আমেরিকাতে গিয়ে কী দারুণ সাড়া পেয়েছি। ওরা আমাদের কাজ দেখে কেঁদে ফেলেছে। সুতরাং বুঝতে পারছেন এই ‘ভারচুয়াল মিউজিয়াম’ আমাদের নাচের জগৎটাকে আরও কত ছড়িয়ে দিতে পারে। |
|
প্র: কিন্তু এত দিনের এত দুষ্প্রাপ্য সব ছবি আপনার কাছে এল কী ভাবে?
উ: আমার হবিও বলতে পারেন। এই সব নিখুঁত ভাবে তাই সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম।
প্র: আপনি যখনকার কথা বলছেন তখন তো ভিডিয়ো ছিল না...
উ: না। প্রতিদিনের ক্লাস শেষে রাত জেগে ‘ডান্স নোটেশন’ লিখে রাখতাম। রোজ চিন্তা হত, কটক থেকে কলকাতা ফিরে যদি কিছু ভুলে যাই, পরের বার গেলেই তো গুরুজির লাঠি খেতে হবে। অবশ্য তার কয়েক বছর পরেই ভিডিয়ো চলন শুরু হয়ে গেল। এখনও মনে আছে, তখনকার দিনে পাঁচশো টাকায় ভিডিয়ো ক্যামেরা ভাড়া করে একসঙ্গে ১৬ থেকে ১৭টি নৃত্য রেকর্ডিং করে রাখতাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালের ডিভিডি সংগ্রহ করে তার থেকে বাছাই করা অংশগুলো নিয়ে নিয়েছি।
প্র: শোনা যায়, কেলুচরণ মহাপাত্র নিজে কলকাতায় এসে শুধু আপনার জন্যই নৃত্যের অডিয়ো রেকর্ডিং করিয়েছেন। এটা সত্যি?
উ: আমার সৌভাগ্য বলতে পারেন। ওঁরই সৃষ্টি প্রায় ৭০টি নৃত্যের অডিয়ো রেকর্ডিং তিনি নিজে এসে করে গিয়েছেন। শিল্পী নির্বাচনেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ওড়িশার পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্র, রাখাল মহান্তিরা যেমন আছেন, তেমনই আছেন হৈমন্তী শুক্ল বা নির্মলা মিশ্ররা।
প্র: তার মানে এ বার থেকে নাচের উৎসাহীরা খুব সহজেই এই শিল্পকে আয়ত্ত করতে পারবে?
উ: গুরু পরম্পরা বিদ্যা কঠোর অনুশাসন ও সাধনায় সম্ভব। চোখের সামনে এই সব ঐতিহ্যের ছবি বারবার দেখতে থাকলে ভুল-ত্রুটি আর থাকে না।
প্র: যা হওয়ার কথা ওড়িশাতে, তা হয়নি। এখন হচ্ছে এই বাংলাতে। ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে না?
উ: আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম তবুও ওড়িশা সরকার কোনও দিন আমাদের ডাকেনি। অথচ ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক দেরি করেনি। এই কাজে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে।
প্র: তা হলে তো বলতে হয়, ওড়িশি নাচ নিয়ে ওড়িশাকেই টক্কর দিল এই বাংলা?
উ: অতশত বুঝি না। এটুকু বুঝি, অমূল্য জিনিস হারাবার আগে যতটা পারি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখি।
প্র: এর থেকে নতুন প্রজন্ম আর কী পাবে?
উ: প্রতিটি নৃত্যের ভাব অনুযায়ী কিছু দৃশ্যপট তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হল, নৃত্যটির বিষয়বস্তুর বর্ণনার সঙ্গে গুরুজিদের পরামর্শ জুড়ে দেওয়া। তৃতীয়টি হল, নৃত্যটিতে কী মুদ্রা, কী তাল, কী পাদকর্ম, কী ভাব-রসের ব্যবহার হল তার ব্যাখ্যা করা। |
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|