|
|
|
|
|
|
|
বেড়ানো... |
|
মধু মিষ্টি মোর |
বদলে গিয়েছে হানিমুনের ঠিকানা। লিখছেন
দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায় |
• বিরাটির ঋতম বসু। সেক্টর ফাইভে এক আইটি কোম্পানির প্রোগ্রামার। বিয়ে করছেন এ মাসেই। তার দিন কুড়ি বাদেই হানিমুনে যাচ্ছেন ব্যাংকক-পাটায়া।
•
সুলগ্না নন্দী। থাকেন সোনারপুরে। কলকাতার এক প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা। বিয়ের পর সদ্য হানিমুন কাটিয়ে এলেন মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি জঙ্গলে।
•
সরকারি চাকুরে উলুবেড়িয়ার অভ্রজিৎ কুণ্ডু। হানিমুন স্পট বেছেছিলেন সিকিমের ইয়াকসাম। শেষ মুহূর্তে মত বদলে চলে গেলেন শিলঙের বড়াপানি। নীল জলের হ্রদের ধারে নির্জন এক রিসর্টে।
|
তালিকাটা তিনের জায়গায় তিরিশও হতে পারত। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। তবে কি হানিমুন স্পট বাছাবাছিতেও এখন ঘোরতর বদলের হাওয়া? দিঘা-পুরী থেকে দার্জিলিং-মানালির মতো চেনা ট্যুরিস্ট স্পট কি ইদানীং বাতিলের দলে!
“না, ঠিক অতটা বলব না। তবে একটা বদল তো এসেছেই।’’ বলছিলেন মধ্য কলকাতার এক ভ্রমণ সংস্থার বুকিং-এজেন্ট সৌরভ নাগ।
ওঁর কথায়, দশ জনের মধ্যে ছ’জন জন যদি দার্জিলিং-গ্যাংটক যান, বাকিরা কিন্তু তুলনায় অনেক নিরালা কালুক, উত্তরে কী রিংচেনপঙের দিকে ঝুঁকছেন।
আবার অনেকে আছেন, নৈনিতালে না থেকে, তার থেকে অল্প দূরে ভীমতালে গিয়ে উঠছেন। অরুণাচলের পাহাড়ি এলাকা বমডিলা-তাওয়াংও এখন হানিমুনার্সদের নজরে।
|
|
অতি চেনা স্পটে ভিড় বাড়ছে। নির্জনতা-প্রেমী বহু পর্যটকই তার থেকে দূরে সরছেন। “তা ছাড়া বেড়ানোর রুচি বদলাচ্ছে। স্পটের সংখ্যাও বেড়েছে। তাহলে মধুচন্দ্রিমারই বা ঠিকানা বদলাবে না কেন!” বলছিলেন সৌরভ।
তাল বুঝে এই ফাঁকে অনেক হোটেল-ব্যবসায়ীও বদল আনছেন তাঁদের রিসর্টের চেহারায়। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা কী শুনশান জঙ্গলেও হানিমুন-কাপলের জন্য আলাদা ঘর পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সঙ্গে আলাদা প্যাকেজ।
“দার্জিলিংয়ের লাভার কাছে নেওড়াভ্যালিতে আমাদের রিসর্ট আছে। জঙ্গলের অনেকটা ভেতরে। চারপাশে কিচ্ছু নেই। সেখানে একটা ঘর রেখেছি পুরোপুরি হানিমুন কাপলের জন্য। বেশ ভাল বুকিং পাই।” বলছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক ট্র্যাভেল-এজেন্ট সংস্থার কর্মী চন্দ্রশেখর পাল।
শীত, গ্রীষ্ম আর পুজো। বেড়ানোর জন্য এগুলোই ছিল ভরা মরসুম। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি। বিয়ের মরসুম। সেখানে সিকিম বা কেরল ট্যুরিজম যেখানে দাঁড়িয়ে, গোয়া কিংবা মধ্যপ্রদেশও তাই। বিয়ের সিজনের আগে থেকেই বুকিং-এর ধুম পড়ে যাচ্ছে। তার বেশ কিছু স্পটই স্বল্প চেনা।
একটু অন্য কথা শোনালেন সল্টলেকের অনুরাগ মিত্র। “পেশার ধরনটাও একটা ব্যাপার। অফিস-ব্যবসা কোনওটাই তো আর আগের মতো নেই। ফলে হানিমুনের স্পট বাছাবাছিতে তার ছাপ পড়ছে।” অনুরাগ মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। ওঁর স্ত্রী অহনা থাকেন চেন্নাই। এক বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাকাউনটেন্ট। অসম্ভব ব্যস্ত চাকুরে দুজনেই।
“বিয়ে করারই সময় মিলছিল না। শেষে কোনও ক্রমে চারটে মাত্র দিন ম্যানেজ করা গেল। ফলে হানিমুন প্রায় ভেস্তেই যাচ্ছিল।” বললেন অনুরাগ।
বিয়ের মাস দুয়েক বাদে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে একটা হেল্থ চেকআপের নাম করে অনুরাগ উড়ে যান অহনার কাছে।
ঠিক ছিল উইক-এন্ডে মহাবলীপুরম কী পুদুচেরি ঘুরে আসবেন। তা না করে গাড়িতে ইয়ারকাড। চেন্নাই থেকে ঘণ্টা ছ-সাত দূরে সালেমের কাছে। লেকের ধারে, পাহাড়ের ওপর।
অফিসের এই ছুটির ফাঁদে পড়ে হানিমুন পিছিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। তার পর রেস্তো জমিয়ে ফাঁক পেলে দূরে পাড়ি। কেউ স্বদেশে। অনেকে আবার বিদেশেও।
|
|
ইয়ারকাড |
“একটু হাই-এন্ড গ্রুপকে দেখছি,কিছু না হলে অন্তত ব্যাংকক-পাটায়ায় চলে যাচ্ছেন। যাঁরা আরেকটু বেশি ক্ষমতা রাখেন, তাঁরা যাচ্ছেন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, এমনকী মরিশাসেও।’’ বলছিলেন কলকাতার এক নামী ট্যুর-এজেন্ট ইন্দ্রজিৎ সরকার।
ওঁর কাছেই শোনা গেল, চিনের একদল ট্যুরিস্ট-এজেন্ট সদ্য উঠে পড়ে লেগেছেন কুনমিং-এ এ দেশের হানিমুনার্সদের নিয়ে যেতে। ইউনান রাজ্যের এই শহর নাকি চিরবসন্তের। তার সঙ্গে ডালি আর লিজিয়ান নামে দুটি জায়গা জুড়ে আস্ত প্যাকেজ বানিয়েছেন ওঁরা। পাঁচ রাত-ছ’দিনে এক-এক জনের খরচ ষাট হাজার টাকা করে। তাতেও কিন্তু ধীরে ধীরে বুকিং হচ্ছে। বদলের হাওয়ায় বাঁক নিচ্ছে মধুচন্দ্রিমার চেনা পথ। দুর্গের মধ্যে রাজারানিদের ঘর নিয়ে তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের বিলাসবহুল হোটেল। বেতোয়ার ধারে রয়েছে সরকারি কটেজ। ওরছায় যাতায়াত সমেত কমপক্ষে তিন-চারদিনের জন্য দু’জনের থাকার খরচ কমবেশি ২০-২৫ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ২২৮৭৫৮৫৫ |
দেশে পাঁচে পাঁচ |
ওরছা: হাওড়া থেকে ট্রেনে ঝাঁসি। সেখান থেকে গাড়িতে দেড় ঘণ্টায় ওরছা। পাহাড়ি টিলা, দুর্গ, প্রাসাদ মিলে মধ্যপ্রদেশের ওরছা আরেকটি নিরালা জনপদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে বুন্দেল-প্রধান রুদ্রপ্রতাপ সিংহের তৈরি এই অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। গঞ্জ থেকে অল্প এগোলেই খরস্রোতা বেতোয়া নদী। এ পারে ওরছা নগরী, ও পারে ঘন জঙ্গল। সেতু পেরিয়ে গাড়ি পথে জঙ্গলে যাওয়া যায়। নদীতীরে রাজারাজড়ার সমাধি। স্থানীয় ভাষায় ছত্রী। বসন্তে ওরছা ঝাঁকে ঝাঁকে শিমুল, পলাশে আগুন রঙা।
ওরছায় দুর্গের অনেক মহল। সবচেয়ে বিখ্যাত রাজা মহল, জাহাঙ্গির মহল।
পঞ্চগোনি: হাওড়া থেকে দু’দিন ট্রেনে যাওয়ার পর পুণে নামতে হবে। সেখান থেকে গাড়িতে পঞ্চগোনি। দূরত্ব মোটামুটি ১১০/১১৫ কিমি। আগ্নেয়গিরি থেকে তৈরি পঞ্চগোনির পাহাড়ের রং কোথাও লাল, কোথাও কালো, কোথাওবা খয়েরি। অসংখ্য গাছ, গাছে গাছে ফল। মাইলের পর মাইল স্ট্রবেরি। পঞ্চগোনি থেকে মহাবালেশ্বর ৬ কিমি দূরে। ও পথেই ভেনা লেক। লেকে বোটিং হয়। ভেনা যাওয়ার রাস্তা প্রায় গোটাটাই গাছে ছাওয়া। পঞ্চগোনির পাহাড়ের বহু নীচ দিয়ে বয়ে চলে কৃষ্ণা নদী। যাতায়াত সমেত এখানে পাঁচ-ছদিন দুজনে থাকতে খরচ ২০-২৫ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ১৮০০ ২২৯৯ ৩০, (০২২) ২২০৪ ৪০৪০
গণপতিপুলে: হাওড়া থেকে ট্রেনে মুম্বই। সেখান থেকে কোঙ্কন রেলে ৭ ঘণ্টায় রত্নগিরি। রত্নগিরি থেকে ৫০ কিমি দূরে গণপতিপুলে। আরব সাগরের ধারে ছোট্ট শান্ত বসতি। পাহাড়, প্রশস্ত সৈকত। ব্যাক ওয়াটার। জলে বোটিং হয়। সাগর পারেই টিলার ওপর থাকার কটেজ। প্রায় পুরো এলাকাতেই গাছ আর গাছ। রয়েছে প্রচুর আলফানসো। যাতায়াত সমেত তিন-চার দিন দু’জনে থাকতে খরচ ১৫ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ১৮০০ ২২৯৯ ৩০, (০২২)২২০৪ ৪০৪০
ডেলো: নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে আড়াই ঘণ্টায় ডেলো। ছোট্ট নির্জন পাহাড়ি জনপদ। ডেলো ঢোকার মুখেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি ‘গ্রাহামস হোম’ মিশনারি স্কুল। এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা তাদের খেলার মাঠ, বাগান। পাহাড়ের একেবারে চুড়োয়, সবুজে সবুজ ঢালু ঘাসজমির ওপর ট্যুরিজিমের দোতলা বাংলো। আশপাশে অসংখ্য গাছগাছালি আর পাহাড়ি ফুল। পাথুরে বাঁধাই ছোট ছোট রাস্তা। পাহাড়ি পথ, আকাশের নীল চাঁদোয়া কখনও ঢেকে যায় কুয়াশায়। কুয়াশা সরলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। ডেলো থেকে অল্প দূরে মঙ্গলধাম মন্দির, অর্কিডের বাগান, জেলেপলা ভিউ পয়েন্ট, মনাস্ট্রি। ১ ঘণ্টা গাড়ি পথে লাভা। লোলেগাঁও দেড় ঘণ্টা। ডেলোয় তিন-চার দিন থাকতে দু’জনের খরচ যাতায়াত সমেত কম-বেশি ১০-১২ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ৯৯০৩১৭৪০৪৭/ ৭২৭৮৫৩৯৯৫৩
রম্ভা: হাওড়া থেকে রাতে ট্রেনে উঠে পরদিন ভোরে বালুগাঁও। সেখান থেকে গড়িতে আধ ঘণ্টায় রম্ভা। থাকার একটাই জায়গা। ওড়িশা ট্যুরিস্ট ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের পান্থনিবাস। একেবারে চিলিকার হ্রদের গায়ে। পান্থনিবাসের সামনে বিশাল বাগান। সে-বাগান পেরলেই চিলিকা। ব্যালকনিতে দাঁড়ালে নিস্তরঙ্গ চিলিকা যেন কাছে ডাকে। হ্রদের জলে মিঠে রোদ আর ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মেখে বোটিং-এ সওয়ার হওয়া যায় বহুক্ষণ। যাতায়াত সমেত তিন-চার দিনের জন্য দু’জনের খরচ ১০-১২ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ২২৬৫ ৪৫৫৬
|
ভিনদেশে তারা |
• তাইল্যান্ডের ব্যাংকক-পাটায়া (মাথাপিছু ২৫-৩০ হাজার টাকা, ৪ রাত-৫দিন)
• তাইল্যান্ডের ফুকেট-ব্যাংকক (মাথাপিছু ৫০-৬০ হাজার টাকা, ৬ রাত-৭দিন)
• ইন্দোনেশিয়ার বালি (মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকা, ৫ রাত-৬ দিন)
• মালয়েশিয়ার লাঙ্কাভি (মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা, ৪ রাত-৫দিন)
• মরিশাস (মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকা, ৫ রাত-৬ দিন)
• মিশর (মাথাপিছু ৮০ হাজার টাকা, ৫ রাত-৬ দিন)
|
যোগাযোগ: ৯৮৩০০ ৩২৯৬৯ |
|
তথ্য সহায়তা: অয়ন গঙ্গোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|