উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
টিটাগড় মাতৃসদন
নতুন আশা
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তারও নয় বছর পরে ১৯৭২ সালে সূচনা টিটাগড় মাতৃসদনের। এর পরে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের ভরসা ছিল পুরসভা পরিচালিত এই মাতৃসদন। অভিযোগ, মাঝের কিছু বছরের চরম অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত যাবতীয় পরিকাঠামো। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে ২০০০ সালে আইপিপি-৮ প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয় নতুন একটি বাড়ি। সেখানেই টিমটিম করে চলতে থাকে মাতৃসদন।
ক্ষমতায় আসার পরে গত তিন বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড নতুন বাড়িটির এক তলায় শুরু করেছে বহির্বিভাগ।
স্নায়ুরোগ ছাড়া সব রোগের চিকিৎসায় সপ্তাহে ছ’দিন চলে এই বহির্বিভাগ। সম্প্রতি আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চক্ষু পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে নতুন বাড়িটির দোতলায় ২০ শয্যার মাতৃসদনে আপাতত শয্যাসংখ্যা আট। চাহিদার কথা মাথায় রেখে দুই শয্যার পুরুষ ওয়ার্ড করা হয়েছে ওখানে।
সিজার ছাড়াও অ্যাপেনডিক্স, গল ব্লাডার, হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, মাইক্রো সার্জারি-সহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার হয় এখানে। টিটাগড় পুরসভার প্রধান প্রশান্ত চৌধুরী জানান, অপারেশন থিয়েটারে নতুন ওটি টেবিল, লাইট-সহ বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে সিইএসসি। জন্মের পরে অনেক শিশুরই স্বাস্থ্যের কারণে বড় সমস্যা দেখা যায়। সে কথা ভেবেই নিও-নাটাল কেয়ার ইউনিট করার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।
পুরসভার তরফে জানানো হচ্ছে, মাতৃসদনের পুরনো বাড়িটিকে না ভেঙে ওই কাঠামোতেই পলেস্তরা খসিয়ে নতুন করে বানানো হচ্ছে মাতৃসদন। কাজ শেষ হলেই ২০টি শয্যা নিয়ে শুরু হবে নতুন মাতৃসদন। সেখানেই শুরু হওয়ার কথা দু’শয্যা বিশিষ্ট নিও-নাটাল কেয়ার ইউনিট। অপারেশন থিয়েটারও চলে যাবে সেখানে।
আধুনিক ব্যবস্থায় চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা থাকবে দু’টি শয্যা। তখন আইপিপি-৮ প্রকল্পের টাকায় তৈরি বাড়ির এক তলায় এখনকার মতোই চলবে বহির্বিভাগ। দোতলায় থাকবে ২০ শয্যার পুরুষ বিভাগ।
পুরপ্রধান প্রশান্তবাবু বলছেন, মাতৃসদনের পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে সব মিলে পুরসভার খরচ পড়ছে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। চিকিৎসা সংক্রান্ত আধুনিক পরিকাঠামোর জন্য যাবতীয় খরচ বহন করছে সিইএসসি।
সিইএসসি-র তরফে বলা হচ্ছে, সংস্থার নিজস্ব ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’ (সিএসআর) তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক পরিকাঠামোর এই সাহায্য। সংস্থা জানাচ্ছে, টিটাগড় পুরসভা নিও-নাটাল কেয়ার ইউনিটের পরিকাঠামোগত সাহায্য চেয়েছে তাদের থেকে। এই বিষয়টি এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়।
পুরসভার নাকের ডগায় থাকা মাতৃসদনের অকেজো পুরনো বাড়িটিতে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুরপ্রধান বলছেন, “আমরা আসার পরেও বেশ কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে ওখানে। বিয়েবাড়ির ভাড়ার টাকা কে বা কারা নিত তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।” বহির্বিভাগে চিকিৎসায় আসা টিটাগড় স্টেশন রোডের বাসিন্দা আফসানা বেগম বলছেন, “বহির্বিভাগ ফের কয়েক বছর ধরে শুরু হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে।” খুশি সদ্য সন্তানসম্ভবা শেফালি প্রসাদও। তাঁর কথায়: “মাতৃসদন আরও ভাল হলে আমাদেরই উপকার। জায়গা না পাওয়ায় অনেক সময় দূরের হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানেও সব সময়ে জায়গা মেলে না। শয্যা বাড়লে কিছুটা হলেও তো মানুষের কষ্ট কমবে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.