পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
পুর-উদ্যোগ
হাল ফেরার আশা
ফি বর্ষায় নাকানিচোবানি খেতে হত বারাসতবাসীকে। দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশি সমস্যা নিয়ে জেরবার বারাসতবাসীর এ বার হয়তো শাপমোচন হতে চলেছে। পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের জল নিকাশির জন্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি হচ্ছে ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, পাকা ও গভীর নর্দমা। পাশাপাশি পুর-এলাকার তিনটি প্রাচীন খালেরও সংস্কার করে সেগুলি পাকা করা হচ্ছে। বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এর ফলে দীর্ঘ সময় জল জমে থাকবে না। ডুবে থাকবে না নিচু এলাকা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের জেএনএনইউআরএম-এর প্রকল্পে বারাসত শহরের মধ্যে তৈরি হচ্ছে প্রধান নর্দমা। ইতিমধ্যে পুর এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করে কাজ শুরু হয়েছে। দু’বছরের মধ্যে ৬৭.৪৭ কিলোমিটার নর্দমা তৈরি করা হবে। এলাকা উঁচু-নিচু হলেও নর্দমা তৈরি হচ্ছে এক সমতলে। জলের গতি যাতে কোনও কারণে রুদ্ধ হয়ে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও কোথাও নর্দমা বেশি চওড়া রাখা হয়েছে। বাইরের আবর্জনা ঢুকে নর্দমার গতি যাতে না আটকায় তাই ঢাকনা দিয়ে নর্দমা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। প্রধান নর্দমা তৈরি করতে ধার্য হয়েছে ৮৫.৬ কোটি টাকা। মোট খরচের ৫ শতাংশ পুরসভা, ৬০ শতাংশ রাজ্য এবং ৩৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করছে।
কেএমডিএ-র সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ভাস্কর সেনগুপ্ত বলেন, “আগামী বছরের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের জন্য ধার্য মোট টাকার চার ভাগের এক ভাগ কেন্দ্রের কাছ থেকে পেয়েছি। রাজ্য এবং পুরসভার কাছ থেকে এখনও টাকা পাইনি। তবে পুরসভা শীঘ্রই তাদের অংশের টাকা দেবে বলে জানিয়েছে।”
বারাসতবাসীর দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, টানা দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নর্দমা, ডোবা, খাল উপচে জল ঢুকে যায় ঘরে। বন্যার চেহারা নেয় গোটা এলাকা। এক বাসিন্দা জানালেন, গত বছর বর্ষায় জেলা সদর শহরের রাস্তায় মাছ ধরার জন্য বাসিন্দাদের জাল ফেলতেও দেখা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কালী রুদ্রের কথায়: “সামান্য বৃষ্টিতেই নর্দমা উপচে জল জমে যায় রাস্তায়। জল সরানোর পরিকাঠামো নেই। ওয়ার্ডগুলিতে নর্দমা থাকলেও সেগুলি সময়মতো পরিষ্কার ও সংস্কার হয় না। পরিকল্পিত ভাবে নর্দমা তৈরি হলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই মিলবে বলেই আশা করা যায়।”
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর হলেও এত দিন বারাসতের প্রধান নর্দমাগুলির সঙ্গে বহু ওয়ার্ডের শাখা নর্দমার যোগ ছিল নামমাত্র। কিছু ওয়ার্ডের অধিকাংশ নর্দমা এখনও কাঁচা। আগাছা আর পলিতে সেগুলি সারা বছর বুজে থাকে। কিছু এলাকায় আবার নর্দমাই নেই। স্থানীয় রবীন ভট্টাচার্য বললেন, “শহরে প্রধান নর্দমা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডের শাখা নর্দমাগুলিও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। তবেই নিকাশি সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
প্রবীণ বাসিন্দা শঙ্কর চক্রবর্তীর বক্তব্য: “পরিকল্পিত নর্দমা না থাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই এত বড় পুর এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ ডুবে যায়। জমা জল ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে বাণীকণ্ঠ ও সুতি খাল হয়ে মধ্যমগ্রামের নোয়াই খালে পড়ার কথা। কিন্তু খালগুলি দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় জল সরতে পারত না। নবপল্লি, নিবেদিতাপল্লি, বনমালিপুর, রামকৃষ্ণপুর, পালপাকুড়িয়া, আরদেবক, সুভাষপল্লি, উত্তর পূর্ব নপাড়া, রথতলা এলাকার বাসিন্দাদের বৃষ্টির দিনগুলিতে জলমগ্ন হয়েই কাটাতে হত।”
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুর-নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ক্ষমতায় এলে নিকাশি সমস্যার সমাধান করব। কথা রাখতে পেরেছি।” বারাসতের সাংসদ তৃণমূলের কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “বারাসতে কোনও পরিকল্পিত নর্দমা নেই। এক সঙ্গে প্রধান এবং শাখা নর্দমা তৈরি করতে পারলে ভাল হত। ওয়ার্ডগুলির মধ্যে শাখা নর্দমাগুলি অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ফলে জল জমে থাকত।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.