পূর্ব কলকাতা
‘ঝুলি’ হাতে পুরসভা
বাজারি রাজস্ব
‘শূন্য’ কোষাগার। তা কিঞ্চিৎ ভরাতে বাজারের সামনে কার্যত ‘ঝুলি’ পাতলেন বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এমন ঘটনাই ঘটেছে বিধাননগরের সিএ মার্কেটে। ছিলেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন, চেয়ারম্যান, পারিষদবর্গ ও পুর আধিকারিকেরা। পুরকর্তৃপক্ষের অনুমান, বিভিন্ন বাজারের রাজস্ব থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা আয় হবে।
চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কথায়: “বামবোর্ড কিছুই করেনি। বকেয়ার হিসাব নিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে দীর্ঘ দিন রাজস্ব বাকি পড়ে আছে। তাই এই অভিযান। আমরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলাম।” যদিও আগের বামবোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পারিষদ সিপিএমের নন্দগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের সময় রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া চালু ছিল। এ জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনও চাওয়া হত। ব্যবসায়ীদের কাছে বিলও পাঠানো হত।”
যদিও ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ঠিকমতো বিল পাঠায়নি প্রশাসন। নিয়মিত বিল পেলে তাঁরা কর বকেয়া রাখতেন না। দীর্ঘ দিন বিল না আসায় তাঁদের উপর বিপুল করের বোঝা চেপেছে বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিধাননগরে ৭০ দশক থেকে তৈরি হওয়া বাজারগুলির দায়িত্বে ছিল নগরোন্নয়ন দফতর। সম্প্রতি তা পুরসভার হাতে এসেছে। খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যায়, ১৬টি বাজারের অধিকাংশ দোকানই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই তথ্য পুরসভার রেকর্ডে নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, দোকান বিক্রি হলে ক্রেতাকে পুরসভার কাছে আবেদন করে প্রতি বর্গ ফুট অনুযায়ী অর্থ জমা দিতে হয়। আধিকারিকদের অনুমান, এই বাবদ পুরসভার মোট পাঁচ কোটি টাকা আয় হতে পারে। তা ছাড়া বাজারগুলির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি বর্গ ফুট হিসাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পুরসভা পায়। তা-ও দীর্ঘ দিন বকেয়া রয়েছে। এর থেকে প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা পুরসভার আয় হতে পারে। এ ছাড়া, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আরও এক কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে আয় হতে পারে প্রায় ৭ কোটি টাকা।
গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে বিধাননগর পুরসভা। তাই এই বকেয়া অভিযানে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই সিএ মার্কেটে এই অভিযান চালানো হয়েছে। প্রথম তিন দিনে শুধু সিএ মার্কেট থেকেই পুরকোষাগারে জমা পড়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা।
আধিকারিকদের অনুমান, এই বাজার থেকে আরও দেড় লক্ষ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে কোনও বিলই ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না। ফলে এই অভিযানে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে বিপুল পরিমাণ টাকা পুরসভাকে দিতে হবে। সল্টলেক কেন্দ্রীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শ্যামলকান্তি রায় বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই পুর প্রশাসন ও নগরোন্নয়ন দফতরকে সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। অবশেষে সেই কাজ শুরু হল। এর ফলে পুর আয় বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। তবে এক বারে বকেয়া আদায় না করে কিছু সময় দিলে সুবিধা হয়।”
চেয়ারপার্সন বলেন, “আর্থিক সমস্যা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। পুর রেকর্ডেও পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। তবে ব্যবসায়ীরা সাড়া দিয়েছেন। টাকাপয়সা জমা পড়ছে।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.