ইস্টবেঙ্গল: ২ (চিডি-২)
প্রয়াগ ইউনাইটেড: ০ |
হারের পরম্পরার সমাপ্তি। এরিয়ানের পরে প্রয়াগ ইউনাইটেডের কাঁটাও গলা থেকে নামিয়ে ফেললেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।
ডাচ ঘরানার ‘টোটাল’ ফুটবল বনাম ব্রিটিশ ঐতিহ্যের লং বল থিওরি। সাতোরি নিজে ডাচ, তাই তাঁর পক্ষে ‘টোটাল ফুটবল’ ফর্মূলার শরণাপন্ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু হল ঠিক উল্টো। মর্গ্যান কার্যত ডাচ ঘরানা ধার করে সাতোরি-বধ করে গেলেন। লং বল-এ নয়, ‘টোটাল’ ফুটবল খেলে। যা দেখে বলা যেতেই পারে, ‘ডাচ-বিপ্লব’-য়েই ডাচ কোচের দলকে জয় মর্গ্যানের।
শুক্রবারের ম্যাচে মর্গ্যানের চতুষ্কোণ-ফাঁদে ধরা পড়ে গেল প্রয়াগ।
চিডি-বলজিৎ ধাঁধা: ‘টোটাল’ ফুটবলে গোলকিপার বাদে টিমের বাকি দশ জনকে মাঠের যে কোনও পজিশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। ইস্টবেঙ্গল কোচ চিডিকে উইথড্রন করে বলজিতকে ব্যবহার করলেন স্ট্রাইকিং ফোর্সে। যা সামলাতে প্রয়াগ রক্ষণ তালগোল পাকিয়ে গেল। যে ফুটবলারকে চিডির ‘রয়্যাল গার্ড’ হিসেবে রাখা হয়েছিল, সেই বেলো রাজাক শুরুতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। চিডিকে আটকাবেন? না, বলজিতকে ধরবেন? |
বোতলবন্দি বিশ্বকাপার: কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা বোধহয় একেই বলে! এলকো আটকাতে চেয়েছিলেন চিডিকে। উলটে মর্গ্যান-ই প্রয়াগের প্রধান অস্ত্র কার্লোসের নড়াচড়ায় তালাচাবি লাগিয়ে দিলেন। উগা ওপারার কড়া নজরদারির মধ্যে নব্বই মিনিট খুঁজেই পাওয়া গেল না কোস্টারিকার গেমমেকারকে।
সুবোধ-সঞ্জু ঘুমের বড়ি: মেহতাব হোসেন যে নেই, সেটা টের পেতে দিলেন না সুবোধ কুমার ও সঞ্জু প্রধান। দু’জনেই অনবরত দিক পরিবর্তন করে প্রয়াগের মাঝমাঠকে ধাঁধায় ফেলে দিলেন। কখনও উইং দিয়ে গতি বাড়িয়ে ইনসাইড কাট করে ভিতরে ঢুকলেন। কখনও নিজেদের মধ্যে অজস্র পাস খেলে বিপক্ষকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। জাতীয় দল থেকে সদ্য ফেরা লালকমল ভৌমিকও প্রয়াগকে দিশা দেখাতে পারলেন না।
মোরিনহোর ট্যাকল-ট্যাকটিক্স: র্যান্টিদের সাপ্লাইলাইন বন্ধ করতে নিজেদের অর্ধেই লালকমল-রফিকদের ‘ট্যাকল’-এ বেঁধে ফেললেন মর্গ্যান। বার্সেলোনার তিকিতাকা ফুটবল থামাতে যে থিওরি মোরিনহোর প্রখর মস্তিস্ক থেকে বেরিয়ে এখন ইউরোপের প্রায় সব কোচের নোটবুকে ঢুকে পড়েছে।
শুক্রবারের শিল্ডের হাইভোল্টেজ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল কোচের স্ট্র্যাটেজি আরও কাজে লেগে গেল বিপক্ষের গোলমেশিন চিডি ও পেনকে নিয়ে সাতোরির অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে পড়ায়। মাস চারেক আগে আই লিগের প্রথম লেগে প্রয়াগের বিরুদ্ধে ঠিক একই ভুলের জন্য মুখ থুবড় পড়তে হয়েছিল মর্গ্যানকে। পার্থক্য হল, সে বার র্যান্টিদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে ডুবেছিলেন মর্গ্যান। প্রয়াগের এ দিনের আতঙ্ক বুঝতে ডাচ কোচের স্ট্র্যাটেজি যথেষ্ট। চিডির পিছনে বেলোকে লাগিয়েছিলেন। পেনের জন্য জোড়া মার্কার করে দেওয়া হয় রফিক-তপনকে। মার্কার হতে গিয়ে এলকোর তিন-তিন জন ফুটবলার অকেজো। খেলা যত এগোল মাঝমাঠের দখলও চলে গেল পেন-সুবোধদের হাতে। দীপক মণ্ডলরা কোনও রকমে বিরতির আগে পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলকে আটকে রাখলেও বিরতির পরে চিডির জোড়া বিস্ফোরণে ছারখার হয়ে গেল সাতোরির দলের ডিফেন্স। তবে দু’টো গোলের পিছনেই পেনের অনবদ্য দু’টো থ্রু-র কথা বলতেই হবে।
ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছিলেন, “ম্যাচটা দারুণ উপভোগ করলাম। ভাল লাগছে গ্রুপ সেরা হয়েই সেমিফাইনাল যাচ্ছি।” সাতোরিও মেনে নিলেন, “ইস্টবেঙ্গল সব বিভাগেই আমাদের চেয়ে ভাল খেলেছে।”
কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর সময় চিডিকে দেখে একটাই মুখ বার বার ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। ওডাফা ওকোলি। কয়েক ঘণ্টা আগেই কল্যাণীর শিল্ডে বাগানের ‘কিং কোবরা’ ওডাফার পাঁচ গোলের বন্যা কি লাল-হলুদের গোলমেশিনকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছিল? চিডি বলে গেলেন, “ওডাফা সবার কাছেই অনুপ্রেরণা। আমারও।”
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, ওপারা, রবার্ট, গুরবিন্দর, সঞ্জু (ইসফাক), সুবোধ, পেন, খাবরা, চিডি (বরিসিচ), বলজিৎ (মননদীপ)। |