মোহনবাগান: ৫ (ওডাফা-৫)
ইউনাইটেড সিকিম: ১ (নুরউদ্দিন) |
ডিনামাইটের নাম ওডাফা ওকোলি!
তাতেই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ! ছ’মিনিটের ‘সিরিয়াল ব্লাস্ট’! হুড়মুড় করে ধসে পড়ল সিকিম ইউনাইটেড। আর ভাইচুংয়ের দলকে ধসিয়ে দেওয়ার নিট ফল? ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে শিল্ড সেমিফাইনালের টিকিট করিম বেঞ্চারিফার পকেটে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই।
শেষ কবে এ রকম মসৃণ ভাবে কোনও টুর্নামেন্টে তরতরিয়ে ভেসেছে পালতোলা নৌকো? মনে করা যাচ্ছে না। কিন্তু ওডাফা? নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের হ্যাটট্রিক কিন্তু চলছেই। শুক্রবার সেটা আরও উজ্জ্বলপাঁচ পাঁচটা গোল! ম্যাচ শেষে মহানায়কের গলায় উচ্ছ্বাস। তাঁকে ঘিরে উৎসব যেন থামতেই চাইছিল না। পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছেন সমর্থকেরা। তার মধ্যেই আছড়ে পড়া মিডিয়া সামলাতে গিয়ে পরিষ্কার বাংলায় বলে বসলেন, “আস্তে, আস্তে। সব বলব।”
একুশ বছর আগে এক মালয়ালি ফুটবলার সই করেছিলেন বাগানে। ভারতীয় ফুটবলে পরে যাঁকে সবাই আদর করে ডাকতে শুরু করে ‘কালো হরিণ’ বলে। সেই আইএম বিজয়ন দু’দশক আগে যে ভাবে ম্যাচের আগে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বলতেন, “খেলেগা। গোল মারেগা”, এ দিন আনোয়ার আলিদের রক্ষণকে নিয়ে ম্যাচের শেষ ছ’মিনিট সে ভাবেই ‘খেললেন’ এবং ওইটুকু সময়ই তিন ‘গোল মারলেন’। মরসুমে চতুর্থ হ্যাটট্রিক করার দিনে কল্যাণী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উঁকি মারল সবুজ-মেরুন রঙে লেখা পোস্টার, “ফুটবল ইজ আওয়ার রিলিজিয়ন’, মোহনবাগান ইজ আওয়ার টেম্পল অ্যান্ড ওডাফা ইজ আওয়ার গড।” |
‘মোহনবাগানের ভগবানের’ কাছে সাত দিন আগেই অনুশীলনে পাঁচ গোলের বায়না ধরেছিলেন পুত্র স্ট্যানলি। এ দিন সেই লক্ষ্যে এক ঢিলে তিন পাখি মারলেন সবুজ-মেরুনের ‘পত্নী-নিষ্ঠ কিং কোবরা’। মাঠ ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “স্ট্যানলির আবদার রাখলাম বটে। তবে আজ নারী দিবসে পাঁচ গোল উৎসর্গ করছি কিন্তু স্ত্রী অ্যাঞ্জেলকে।”
দু’মাস আগেও যিনি সাউথ সিটির ফ্ল্যাটে নির্বাসনের আশঙ্কায় দিন গুনতেন সেই ওডাফার দু’পা গোলের ঝর্নায় পরিণত হল কোন জাদুমন্ত্রে? ওডাফার হয়ে রহস্যটা ভাঙলেন ষোলো বছর আগে ১৯৯৭-এর ফেড কাপে গুয়াহাটিতে চার্চিল ব্রাদার্সের জালে একাই পাঁচ গোল জড়িয়ে দেওয়া এক প্রাক্তন মোহন সৈনিক। কলকাতায় ওডাফার সেই ‘ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড’ চিমা ওকোরি বলছিলেন, “ফিট হতে এখন রোজ ছ’হাজার সিট-আপ দেয়। বারণ করলে আরও দু’হাজার বেশি করে। ওডাফাকে আটকাবে কে?”
ওডাফার উৎকর্ষ-বৃদ্ধির আর এক ভাগীদার বাগান কোচ করিম চলতি মরসুমে জয় পাননি সিকিমের দলটির বিরুদ্ধে। তাই শুক্রবার ৪-৩-৩ ছকে নবিদের নামিয়ে আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন। কিন্তু যে দলে ওডাফা আছেন তার কি কোনও ফর্মেশনের দরকার হয়? ওডাফার জোড়া গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাগান। কিন্তু সিকিমের নুরউদ্দিনের পালটা গোল যেন জেদ বাড়িয়ে দিল মরক্কান কোচের। কুইনটন এবং নবিকে তুলে জুয়েল এবং টোলগেকে নামিয়ে দিলেন তিনি। তাতেই কেল্লা ফতে। এতক্ষণ ওডাফাকে চোখে চোখে রাখা আনোয়ার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন টোলগেকে ধরতে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জুয়েল বাড়িয়ে চললেন ওডাফার উদ্দেশ্যে ডিফেন্স চেরা সব পাস। ৮৫ থেকে ৯১ মিনিটের মধ্যে সিকিমের রক্ষণে শুরু হয়ে গেল ওডাফা-সুনামি। হতাশ আনোয়ার মাঠ ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “জানতাম সুযোগ পেলেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে ওডাফা।” সিকিমের সাজঘর উত্তপ্ত হারের পর। গভীর রাত পর্যন্ত ভাইচুংয়ের ফোন বেজেই গেল। ইউনাইটেড সিকিমের মস্তিষ্ক ফোন ধরলেন না।
টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত। শেষ ছয় ম্যাচে জয়-সহ ২৩ গোল। ওডাফার একারই ১৫। স্বস্তির ঢেকুর তুলে করিম তাই বলতে পারেন, “এ বার কোস্তারিকার পালা।”
মোহনবাগান: অরিন্দম, আইবর, ইচে, মেহরাজ, বিশ্বজিৎ, ডেনসন, কুইনটন (টোলগে), মণীশ মৈথানি, নবি (জুয়েল), সাবিথ (মণীশ ভার্গব), ওডাফা। |