গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • চুঁচুড়া |
দিনটা মাথায় ছিল। জেদটাও চেপে বসেছিল। তাই দু’তিন বছর ধরে চলা স্বামীর অত্যাচারের বিহিত চেয়ে শুক্রবার, নারী দিবসের দিনই বৈদ্যবাটীর বছর চল্লিশের দেবযানী মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত) দ্বারস্থ হলেন চুঁচুড়ার মহিলা থানার।
সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ মিটছে না। মহিলা হাজির মহিলা থানায়।
এ দিনই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে মহিলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন এক আইনজীবী।
নরমে-গরমে চুঁচুড়া মহিলা থানার পুলিশকর্মীরা নারী নির্যাতন রোখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দু’বছর ধরে। শুক্রবার, নারী দিবস উপলক্ষে আপ্যায়নের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল থানায়। যাঁরাই অভিযোগ জানাতে এসেছেন, হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে গোলাপ ফুল, মিষ্টি, শরবৎ। যা পেয়ে প্রাথমিক জড়তা উধাও অভিযোগকারিণীদের। |
নারী দিবসে আপ্যায়ন থানায়। ছবি: তাপস ঘোষ। |
দেবযানীদেবী বলেন, “মেয়ে বড় হয়েছে। স্বামীকে ছেড়ে আর কোথায় যাব? তাই দিদিমণিদের কাছে এসেছি, যদি ওঁরা আমার স্বামীকে একটু বোঝান। তা হলে সংসারটা বাঁচে।” কিন্তু এ দিনই কেন থানায়? মহিলার কথায়, “নারী দিবস নিয়ে চারিদিকে অনেক কিছু হচ্ছে। তাই সাহস করে চলে এলাম।” বিষয়টি নিয়ে মহিলা থানার তরফে দেবযানীদেবীর সঙ্গে কথা বলছিলেন অফিসার বর্ণালি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের সব দিক বিবেচনা করতে হয়। মামলা করে গ্রেফতার করলেই সব ফুরিয়ে যায় না। সংসার বাঁচানোর কথা ভাবতে হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে আশ্রয় একটা বড় ব্যাপার। ওঁর স্বামীকে আমরা ডেকে বোঝাব।”
মহিলা থানার পুলিশকর্মীরা মূলত এই বোঝানো বা ‘কাউন্সেলিং’-এর উপরেই জোর দেন। ‘কাউন্সেলিং’য়ের ফলে এই দু’বছরে বহু মহিলা নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে দাবি বর্ণালির। তাঁর কথায়, “হয়তো মেলা বা খেলার কোনও ডিউটি করছি। কত মেয়ে এসে বলে আমরা এখন ভাল আছি। এই পেশায় আসা সার্থক বলে মনে হয়।”
সমাজে মহিলাদের উপর অত্যাচার যত বাড়ছে মহিলা-পুলিশের কাজও তত বাড়ছে। জেলার ৪০ জন মহিলা পুলিশকর্মীকে নিয়ে গড়া হয়েছে ‘প্রমীলা বাহিনী’। বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন জেলার ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল। জেলায় যাতে মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার প্রতিরোধে মহিলারাই বা কী ধরনের প্রস্তুতি নেবেন সেই সংক্রান্ত সেমিনার করা হয় মেয়েদের স্কুলগুলিতে। দেবশ্রীর কথায়, “আমরা মেয়েদের স্কুলগুলিতে নিয়মিত সেমিনার করছি। খারাপ কোনও পরিস্থিতিতে পড়লে জানানোর জন্য আমি মেয়েদের আমার ফোন নাম্বার দিয়ে আসছি। এতে মেয়েদের উপকার হচ্ছে।”
এই ‘প্রমীলা বাহিনী’র দাপটে হুগলিতে উঠতি ‘ইভটিজার’রা এখন অনেকেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে। সাদা পোশাকে যখন-তখন ওই বাহিনী নানা জায়গায় হানা দিচ্ছে। জগদ্ধাত্রী পুজোতেই সেই শিক্ষা হয়েছে বেয়াদপ কিছু ছেলের। হাজতবাস এড়াতে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবোস পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের।
মহিলা-পুলিশ ভরসা জোগাচ্ছে হুগলির মহিলাদের। |