|
|
|
|
সুবনসিরি বাঁধ বিতর্ক, দাবি বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট প্রকাশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
যোজনা কমিশনের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অসমে, নামনি সুবনসিরি বাঁধের ভাগ্য অনিশ্চিত করে দিতে পারে। কৃষক নেতা অখিল গগৈ জানান, থাট্টে-রেড্ডি কমিটির রিপোর্টের যে প্রতিলিপি তাঁর হাতে এসেছে, সেখানে প্রকল্পটির বিপক্ষেই বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। অখিলের অভিযোগ, রাজ্য সরকার রিপোর্টটি হাতে পেয়েও বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের স্বার্থে তা প্রকাশ করেনি। বিদ্যুৎ ও শিল্পমন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ অখিলের অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি। তিনি রিপোর্ট পাওয়ার কথা মেনে নিয়ে জানান, রিপোর্টটি পড়ার সময় পাননি।
নামনি সুবনসিরি নদীর উপরে, গেরুকামুখে এনএইচপিসি যে বৃহৎ নদীবাঁধ তৈরি করছে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে আন্দোলন চলছে। নদীবাঁধ প্রতিরোধ কমিটির অবরোধে ২০১০ সাল থেকেই থমকে রয়েছে বাঁধের কাজ। ধুবুরি থেকে টারবাইন আনার চেষ্টাও সফল হয়নি। এর আগে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে দু’দফায় বাঁধের নির্মাণকাজ পরীক্ষা করানো হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞরা বাঁধের নক্শায় বদলের পরামর্শ দেন। গৌহাটি ও ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয় ও আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা সাফ জানান, ১১৫ মিটার উঁচু বাঁধের নকশা ও পরিকল্পনা ঢেলে সাজা প্রয়োজন। কিন্তু ততদিনে বাঁধের ৫০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ। তাই সরকার ও এনএইচপিসি ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অধ্যাপক যতীন কলিতা জানান, ব্রহ্মপুত্রের উপনদী, সুবনসিরির এই অংশে ১৩৭ প্রজাতির মাছ, ২৯টি প্রজাতির শুশুক, ৩০৮ প্রজাতির পাখি, ১৯ ধরণের স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৬ রকম সরীসৃপ, ৬০ ধরণের গাছ রয়েছে। বাঁধ গড়লে পুরো বাস্তুতন্ত্রই নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে, বাঁধের নক্শা না বদলালে ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় গড়ে ওঠা এই বাঁধ ভেঙে পড়ে নিশ্চিহ্ন হতে পারে বহু জনপদ। বাঁধ গড়া ঠেকাতে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, টিআইপিকে, আসু, জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ-সহ প্রায় ৫০টি সংগঠন মিলিতভাবে মাঠে নেমেছে।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে যোজনা কমিশন গেরুকামুখের বাঁধ নিয়ে জলসম্পদ মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব দামোদর থাট্টে ও এম এস রেড্ডিকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে। তাঁরা সরেজমিনে বাঁধ দেখে, বিশেষজ্ঞ, প্রতিবাদকারী, পরিবেশবিদদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের রিপোর্ট তৈরি করেন। অখিল দাবি করেন, “গত বছর জুলাই মাসে থাট্টে-রেড্ডি কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে। অথচ রাজ্য সরকার বিষয়টি জনসমক্ষে আনেনি। আমার হাতে রিপোর্ট আসার পরে আমি সেটি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও বিদ্যুৎমন্ত্রীকে পাঠিয়েছি। সাহস থাকলে তরুণ গগৈ রিপোর্টটি প্রকাশ করুন।” কী রয়েছে রিপোর্টে? অখিল জানান, থাট্টে-রেড্ডি রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, বাঁধ তৈরির ব্যাপারে পরিবেশ বা বন্যা-ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণের দিকটিকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অখিলের দাবি, “রিপোর্ট জানাচ্ছে, বাঁধ গড়ার ফলে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের উপরে প্রতিকূল প্রভাব পড়বেই। সেই সঙ্গে সাবধান করা হয়েছে, অসম-অরুণাচল সীমান্তের বিপজ্জনক ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায় এমন বড় বাঁধ তৈরি করা প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বাস্তবসম্মত নয়।”
গেরুকামুখ বাঁধ নিয়ে রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভার যে বিশেষ প্রতিনিধিদল তৈরি করেছে তার সদস্যরা পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্ট মেনে নেবে বলে জানিয়েছিলেন। অখিলের চ্যালেঞ্জ, “আমার পাঠানো কমিটির রিপোর্ট সত্য কী না যাচাই করে বিশেষজ্ঞদের নিষেধাজ্ঞা মেনে নিক গগৈ সরকার। বন্ধ হোক বাঁধ নির্মাণ।” আজ বিধানসভায় প্রদ্যোৎ বরদলৈকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রিপোর্টটি তিনদিন আগে পেয়েছি। এখনও পড়ে দেখা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।” |
|
|
|
|
|