|
|
|
|
রাতের দিল্লিতে নিগ্রহ, পুলিশ বলছে বেরোবেন না |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নারী দিবসে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বলেছেন, “দেশে মহিলাদের উপর যে ধরনের অপরাধ হচ্ছে, তা দেখে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়।” আর তার ঠিক আগের রাতেই নিগ্রহের অভিযোগ জানাতে যাওয়া এক মহিলা সাংবাদিককে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে, ‘রাতে বেরোবেন না’।
গত কাল রাতেই অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিগৃহীতা হন ওই মহিলা সাংবাদিক। সেই রাজধানী দিল্লিতেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে প্রাথমিক সহযোগিতা পাওয়া তো দূর, উল্টে তাঁকেই শুনতে হয়েছে, “এত রাতে একা বেরোন কেন? বেরোবেন না।” গত শনিবারও দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে একটি অটোয় উঠে গণধর্ষিতা হয়েছেন দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। আজ হরিয়ানার এক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন। কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন। সাহস দেখিয়ে মেয়েদের বাইরে বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। ইউপিএ সরকার নারী সুরক্ষায় কী কী কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও বলেছেন। অথচ সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও পুলিশের মনোভাব কিন্তু একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।
কী হয়েছিল কাল রাতে? ওই মহিলা সাংবাদিক জানাচ্ছেন, দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ওখলা এলাকায় তাঁর অফিস। রাত ন’টা নাগাদ নিজের স্কুটিতে তিনি বাড়ির জন্য রওনা হন। সূর্যনগরের কাছে একটি সিগন্যালে কিছু ক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। সিগন্যালের আলো সবুজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পাশে দাঁড়ানো একটি মোটরবাইক থেকে এক ব্যক্তি তাঁর হাত ধরে টানার চেষ্টা করেন। সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল। মোটরবাইকটিতে দু’জন ছিল। কোনও মতে নিজেকে ছাড়িয়ে ওই মহিলা তাঁর স্কুটির গতি বাড়িয়ে দেন। কিন্তু পিছন থেকে তাঁর স্কুটিতে তিন বার ধাক্কা দেয় বাইক আরোহীরা। ওই সাংবাদিকের কথায়, “ওই সময় রাস্তায় প্রচুর ট্র্যাফিক। সীমাপুরি আন্ডারপাসে পুলিশের ব্যারিকেডও থাকে। কিন্তু কারও চোখে কিছুই পড়ল না।” সেই সঙ্গেই তাঁর আক্ষেপ, “ওদের দু’জনের মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশের চোখে সেটাও পড়ল না। পড়লে অন্তত গাড়ির নম্বরটা দেখে ওদের ধরা যেত।” তিনি আরও জানিয়েছেন, মানসরোবার পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছে ওই দু’জনকে তিনি আবার দেখতে পান। এ বার বিষয়টি পুলিশের নজরে আনবেন বলে তিনি গাড়ি থামান। কিন্তু ওই লোক দু’জন ফের তাঁর হাত ধরে টানাটানি করে। টানাহেঁচড়ায় ওই মহিলার শরীরের কিছু অংশে আঘাতও লাগে। ঠিক সেই সময় পুলিশ আসছে দেখে দু’জনে তাঁকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।
ওই মহিলার বক্তব্য, “এই অবস্থায় আমি নিজেই বাড়ি ফিরি। কিন্তু বাবাকে সঙ্গে নিয়ে মানসরোবর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে আরও অবাক হয়ে যাই। থানায় উপস্থিত পুলিশরা আমায় পরামর্শ দেন, রাতের দিল্লি মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ নয়। রাতে যেন কখনও আমি একা না বেরোই।” স্তম্ভিত মহিলা এর পর পুলিশের উঁচু মহলে বিষয়টি জানান। এর পরই নড়েচড়ে বসে তারা। পুলিশই জানায়, যেই এলাকা থেকে ঘটনার শুরু, সেই রাস্তায় কমপক্ষে সাতটি সিসিটিভি রয়েছে। তার ফুটেজ থেকে ওই দুই মোটরবাইক আরোহীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ভি ভি চৌধুরি বলেন, “অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।” |
|
|
|
|
|