|
|
|
|
বাংলায় বক্তৃতা, কৌশলে রাজ্যে প্রচার অধীরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে গতকাল রেল বাজেট বিতর্কে কেন্দ্র-বিরোধী ঝাঁঝালো আক্রমণ শানিয়েছিল তৃণমূল। সংসদের পরিচিত ছক ভেঙে আজ তারই মোক্ষম জবাব দিতে চাইলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। রেল বাজেট বিতর্কে প্রতিমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিশেষ নেই। কিন্তু অধীর সেই বেড়া যেমন ভাঙলেন, তেমনই মন্ত্রী হয়েও সংসদে আজ বক্তৃতা দিলেন বাংলায়! আর তার মাধ্যমেই বঞ্চনার অভিযোগ খণ্ডন করে কৌশলে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইলেন রাজ্যে।
সংসদে কোনও মন্ত্রীর বাংলায় জবাব দেওয়ায় প্রথাগত বাধা নেই। তবে মন্ত্রীরা সাধারণত ইংরেজি ও হিন্দিতে বক্তৃতা করেন। অধীর চৌধুরীও সংসদে ইংরেজিতে বক্তৃতা দেন, কখনও সখনও বলেন হিন্দিতে। কিন্তু বাংলা?
এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য পরে রেল প্রতিমন্ত্রীই দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মন্ত্রী হওয়ার পর কখনও সংসদে বাংলায় বক্তৃতা করিনি। বাঙালি গরিমার কথা ভেবে আজ ইচ্ছা হল, তাই বাংলায় বললাম।” অনেকের মতে, অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাংসদ ও মন্ত্রীদের বাংলায় শপথ গ্রহণ করিয়ে বাঙালি গরিমাকে রাজনীতির পুঁজি করতে চেয়েছেন। আজ তাতেও কার্যত ভাগ বসাতে চাইলেন অধীর।
কিন্তু সেটাই কি একমাত্র কারণ? প্রকাশ্যে অধীরবাবু এর জবাব না দিলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে বাংলায় বলার নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্য একেবারেই রাজনৈতিক। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। তার আগে তৃণমূল যখন রেল বাজেট নিয়ে বঞ্চনার রাজনীতি করছে, তখন বাংলায় জবাব দিয়ে রাজ্যের ঘরে ঘরে পাল্টা যুক্তি পৌঁছে দিতে চাইলেন অধীর। স্পষ্ট বাংলায় জানাতে চাইলেন, রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ভাল নয়। লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও গত বছর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘রেল এখন আইসিইউ-তে রয়েছে।’ তা সত্ত্বেও বাংলার জন্য যথাসম্ভব বরাদ্দ করা হয়েছে রেল বাজেটে। তাছাড়া গোটা দেশে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে ৩৪৭টি প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭৫টি প্রকল্পই বাংলার।
অধীর আজ বলেন, “এর আগে বাংলা থেকে রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন বরকত গণি খান চৌধুরী। রেলকে ব্যবহার করে তিনি বাংলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। তার পর অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী, মুকুল রায় অনেকেই রেলমন্ত্রী হয়েছেন। আমি রেল প্রতিমন্ত্রী হয়েছি।” এ কথা শেষ করেই প্রকল্প ধরে ধরে তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দেন রেল প্রতিমন্ত্রী। বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মূলত তিনটি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এবং জঙ্গলমহল। তৎকালীন রেলমন্ত্রী হিসাবে তৃণমূল নেত্রী এই এলাকার জন্য কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। যেমন সিঙ্গুরের জন্য কিষাণ ভিশন প্রকল্প। কিন্তু ২০০৯ সালে শিলান্যাসের পর একবিন্দুও কাজ সেখানে এগোয়নি। সেখানে রাস্তা এতটাই সরু যে বড় ট্রাক ঢুকতে পারবে না। তাই প্রকল্প আপাতত শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছে। আবার জঙ্গলমহলে ভাদুতলা থেকে লালগড় হয়ে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেল প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত ২৮৯ কোটি টাকা খরচের অর্ধেক দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার এক পয়সাও দেয়নি। তাই এই প্রকল্পও এগোয়নি। তা সত্ত্বেও রেলমন্ত্রী পবন বনশল প্রকল্পটি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে কিছুটা বরাদ্দ করে রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, রেল বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে গত কাল তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বাংলার প্রকল্পগুলি ধরে ধরে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন। তার মধ্যে যেমন মেট্রো রেল প্রকল্পগুলির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি, তেমনই হলদিয়ায় ডেমু কারখানায় মাত্র দশ কোটি টাকা বরাদ্দ করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জবাবে রেল প্রতিমন্ত্রী আজ জানান, হলদিয়ার ডেমু কারখানার জন্য রাস্তা চওড়া করতে জেলা প্রশাসন এখন অনুমতি দেয়নি। তাই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তা সত্ত্বেও সেখানে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
আবার অনেকের মতে, তৃণমূলের বঞ্চনার রাজনীতির জবাব দিতে গিয়ে অধীর খুব বেশি আক্রমণাত্মক হতে পারেননি। অধীর আগে বলেছিলেন, “রেল মন্ত্রকে তৃণমূল জমানা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করব।” সেই কথাও রাখতে পারেননি অধীর। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে সংসদে দাঁড়িয়ে তা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রীর হাত পা বাঁধা। কেননা রেলে সাম্প্রতিক মমতা বা তৃণমূল জমানা মানে তো আখেরে ইউ পি এ জমানা। ইউপিএ-র মন্ত্রী হয়ে নিজের সরকারের বিরুদ্ধে কী ভাবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন অধীর? তবে সংসদের বাইরে তৃণমূল নেত্রী সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েননি অধীর। মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন যে, তৃণমূল রেল মন্ত্রক ফিরে পেলে বাংলার প্রকল্পগুলি তখন রূপায়ণ করবে। অধীরের কটাক্ষ, “রেলে এতো কীসের মধু যে অন্য মন্ত্রকের কথা উনি ভাবতেই পারেন না!” |
|
|
|
|
|