|
|
|
|
এ বার আক্রমণ জেটলিকে |
তথ্যের বুনোটে ফের আগ্রাসী অচেনা মনমোহন |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
ফের ‘সিংহ’ গর্জন।
সংসদের যৌথ অধিবেশনের পর এ বার রাজ্যসভা। কবিতার পংক্তির বদলে এ বার অর্থনীতির পরিসংখ্যান। মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার ব্যবধানে সংসদীয় রাজনীতিতে আরও এক বার ঝড় তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। অর্থনীতির পরিসংখ্যান আর যুক্তির বুনোটে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিজেপির দিকে। ক্রমাগত বিঁধলেন রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুণ জেটলিকে। যার ফল হিসেবে ফের সেই অচেনা, আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক মনমোহন সিংহকে দেখল সংসদ। দিনের শেষে যা উস্কে দিল হাজারো জল্পনাকে।
চলতি আর্থিক বছরের শেষে বৃদ্ধির হার যে ৫ শতাংশে নেমে আসতে চলেছে, তা অনেক আগেই মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আর তা নিয়েই বিজেপি ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারকে। তাদের বক্তব্য, ঠিক ভাবে পরিচালনা করতে না পারার কারণেই আজ দেশের অর্থনীতির এই হাল। আর সরকারের মাথা হিসেবে মনমোহনের অক্ষম নেতৃত্ব এবং দলের উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা যে তার বড় কারণ, তা-ও বার বারই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা। প্রায়শই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছে ব্যক্তিগত স্তরে। যার উত্তর দিতে পরশু সকলকে চমকে দিয়েই পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছিলেন মনমোহন। তার পর শুক্রবার রাজ্যসভাতেও বেছে নিলেন সেই প্রতিআক্রমণের অস্ত্রকেই।
এ দিন বিরোধী পক্ষের যাবতীয় অভিযোগ প্রথম সুযোগেই মাঠের বাইরে তুলে ফেলে দিতে চেয়েছেন মনমোহন। জানিয়েছেন, “অর্থমন্ত্রীর মতো আমিও বিশ্বাস করি বৃদ্ধির এই ঢিমে গতি সাময়িক। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই তা ফিরে যাবে ৭ থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির কক্ষপথে।”
অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে বিজেপির আক্রমণকে ভোঁতা করে দিতে এ দিন ফের এনডিএ জমানার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে এনেছেন, সেই ১৯৯৮-’৯৯ থেকে চলতি অর্থবর্ষের সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান। দেখিয়েছেন, ২০০০-’০১ সালে এনডিএ জমানাতেই বরং বৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৪.৩ শতাংশে। ২০০২-’০৩ তা আরও কমে পৌঁছেছিল ৪ শতাংশের তলানিতে। বরং প্রথম ইউপিএ সরকার দিল্লির মসনদে আসার পরই (২০০৩-’০৪) ৮% ছাড়িয়েছিল বৃদ্ধির হার। ২০০৫-’০৬ থেকে ২০০৭-’০৮ পর্যন্ত পর পর তিন বছর ৯% ছাপানো সোনার দৌড়ও এসেছে মনমোহন-সরকারের জমানাতেই।
অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি যে পরিসংখ্যানে স্বচ্ছন্দ হবেন, তা প্রায় সকলের কাছেই প্রত্যাশিত। কিন্তু দু’দিনই বিরোধী দল-সহ রাজনীতির অলিন্দকে চমকে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর যত্নে করা শব্দ চয়ন আর আক্রমণের শরীরী ভাষা। কারণ, এমনিতে স্বভাব-শান্ত, মিতবাক্ মনমোহনকে এই ভূমিকায় দেখতে অভ্যস্ত নন কেউই।
এ দিন যেন কিছুটা বিদ্রূপ মেশানো স্বরেই জেটলিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধী দল নেতা বলেছেন, বৃদ্ধির হার আরও বেশি হওয়া উচিত। বলেছেন, আরও দ্রুত শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা। আমি শুধু এই কক্ষকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সরকারেরও লক্ষ্য ঠিক সেটাই।” একই সঙ্গে, লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে তাঁর ঘোষণা, “জানি, বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুল টাকা খরচ করি আমরা। সে জন্য আমি গর্বিত। এনডিএ সরকার অবশ্য এই সব খাতে বরাদ্দ করত নামমাত্র টাকা।”
দিনের শেষে অবশ্য সমস্ত পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে আলোচনার ‘স্পটলাইট’ ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ‘বদলে যাওয়া’ মনমোহন। আগের দিনও যিনি সরাসরি লালকৃষ্ণ আডবাণীকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘লৌহ-পুরুষ’-এর সঙ্গে ‘মেষ’ মনমোহনের যুদ্ধের ফল স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ২০০৯ সালের নির্বাচনেই। এ বারও নিজেদের ঔদ্ধত্যের জন্যই ফের হারবে বিজেপি।
রাজধানীতে জল্পনা, হঠাৎ কেন এমন আক্রমণের রাস্তা বেছে নিলেন বরাবর হাজার প্ররোচনাতেও নির্বিকার থাকা প্রধানমন্ত্রী? নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে স্রেফ ‘নৈশ প্রহরী’ বলেছেন, সেটাই কি তাতিয়ে দিল তাঁকে? না কি হবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গাঁধীকে দেখতে উদ্গ্রীব তাঁর নিজের দলই এমন ভাবান্তরের আরও বড় কারণ? আগের দিন কবিতায় যে বিশ্বাস ভাঙার কথা তিনি বলেছেন, তা কি শুধু বিরোধীদের জন্য? না কি তাতে সূক্ষ্ম খোঁচা ছিল দল ও মন্ত্রিসভায় নিজের সতীর্থদের প্রতি?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আপাতত অমিল। কিন্তু আপাতত সকলেই কিছুটা চোখ কচলে দেখতে বাধ্য হচ্ছেন এই আগ্রাসী আক্রমণাত্মক মনমোহনকে। যেন টেস্ট ম্যাচের প্রথম বলেই পিচ ছেড়ে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়! |
|
|
|
|
|