|
|
|
|
উড়ালপুল বিপর্যয় |
বেয়ারিং ও বোল্টে মাপের ত্রুটি পেল ফরেন্সিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
নির্মাণগত ত্রুটির কারণেই উল্টোডাঙা উড়ালপুলের এক অংশ ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন ফরেন্সিক দফতরের আধিকারিকেরা। এ দিন তাঁরা ঘটনাস্থলে এসে বেয়ারিং, বোল্টের মান ও তার আকারের মাপ নেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হয়েছে বেয়ারিংয়ের তুলনায় বোল্টের মাপ যা হওয়া দরকার, এ ক্ষেত্রে তার থেকে কিছুটা কম রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উড়ালপুলের চাঙড়ের নমুনাও সংগ্রহ করেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তে অবশ্য অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে ফরেন্সিক দফতর। শুক্রবার দুপুরে ওই আধিকারিকেরা জানান, উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় অন্তর্ঘাত আছে কি না, বোঝার জন্যই তাঁরা বেয়ারিং ও বোল্টের মাপ নিয়েছেন ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
উল্টোডাঙা উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ে রয়েছে কেষ্টপুর খালে। ঘটনার পরে ছ’দিন কাটলেও খাল থেকে ওই ভাঙা অংশ সরানো হয়নি। প্রশাসনের যুক্তি, এখনও বেশ কিছু পরীক্ষা বাকি। ফলে এখনই সেখান থেকে ওই ভাঙা অংশ সরানো হচ্ছে না। এ দিকে, উড়ালপুলের চালু লেনের একটি স্তম্ভের উপরে গিয়ে পড়েছে ওই ভাঙা অংশ। সেই স্তম্ভের নীচে কংক্রিটে ফাটল ক্রমশ বাড়ছে। ইঞ্জিনিয়ারেরা একাধিক বার ঘটনাস্থলে সমীক্ষা করেছেন। তাঁরা অবশ্য কোনও আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন।
এ দিন উড়ালপুলের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে রাজ্য ফরেন্সিক দফতরের তিন সদস্যের একটি দল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্য ফরেন্সিকের ডিরেক্টর সুশান্তকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে ফরেন্সিক দফতরের আধিকারিকদের অনুমান, ওই উড়ালপুলের বেয়ারিংয়ের বোল্ট লাগানোর ক্ষেত্রে কোনও জায়গায় খামতি রয়েছে। এ দিন তাঁরা ওই ভাঙা অংশের বেয়ারিংয়ের ব্যাসার্ধ এবং বোল্টের মাপ নেন। তবে সুশান্তবাবু বলেন, “এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। উড়ালপুলের বেয়ারিং, বোল্ট, নির্মাণ-সামগ্রী পরীক্ষা করার পরেই রিপোর্ট পেশ করব আমরা।” উড়ালপুল ভাঙার দিনই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটও নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ জানিয়েছে, ফরেন্সিক রিপোর্ট পেশ করার পরেই তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
ঘটনার দু’দিন পরেই ফরেন্সিক দফতরের কার্যনির্বাহী অধিকর্তা অনুপমা বসুর নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। তাঁরাও ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এ দিন ফরেন্সিক দফতরের আধিকারিকেরা জানান, যে নমুনা তাঁরা সে দিন সংগ্রহ করেছিলেন, তা যথেষ্ট ছিল না। তাই এ দিন তাঁরা ফের এসেছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই দলের মনে হয়েছে, রবিবার ভোরে ভারী ট্রাকের ধাক্কায় সেতুর বোল্ট ভাঙেনি। অনেক দিন ধরেই ভারী গাড়ি ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে করতেই বেয়ারিংয়ের অবস্থা খারাপ হয়েছে। ওই দলটি জানায়, তারা আশা করছে আগামী কয়েক দনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে পারবে। এ দিন দুপুরে রেলেরও এক প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা জানায়, এই উড়ালপুলের প্রযুক্তিতে রেলও দেশের কয়েকটি জায়গায় সেতু তৈরি করছে। এই সেতুর কোথাও কোনও ধরনের ত্রুটি ছিল কি না, তা দেখতে এসেছে তারা। দলটি জানায়, এই উড়ালপুলের ত্রুটি বিচার করে তারা ঠিক করবে, বাকি নিমার্ণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনও সতর্কতা নেওয়া যায় কি না। প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু ছবিও তুলে নিয়ে যান।
কবে খাল থেকে উড়ালপুলের ওই ভাঙা অংশ সরানো হবে, তা নিয়ে কোনও মহলের তরফেই সদুত্তর মেলেনি। ভাঙা অংশ সরানো না হওয়ায় খালের জল রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মশার প্রকোপ বৃদ্ধি রোধ করতে গঙ্গা থেকে জল ছাড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তদন্তের স্বার্থে ওই ভাঙা অংশ এখনও সরানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে যথাস্থানে আলোচনা করা হবে। সেটি সরে গেলেই ফের গঙ্গার জল ছাড়া হবে।” |
|
|
|
|
|