যাদবপুরে উপাচার্যকে দুষছেন মন্ত্রী
দাবি জানাতেই ঘেরাও ২২ ঘণ্টা, ভোটে কী হবে
নির্বাচনের দাবি জানাতেই ঘেরাও চলল ২২ ঘণ্টা। তা হলে ভোটের সময় ছাত্রদের জঙ্গিপনা কোন পর্যায়ে পৌঁছবে?
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়ার আন্দোলনের বহর দেখে এই প্রশ্ন উঠছে। আন্দোলন পক্ষান্তরে ছাত্রভোট স্থগিত রাখার সরকারি সিদ্ধান্তকেই শক্ত জমিতে দাঁড় করাচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের লিখিত আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত ছাত্র সংসদের নির্বাচন করার অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার আলোচনা হবে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র বৈঠকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি শিক্ষক সংগঠন (জুটা এবং আবুটা)-ও পড়ুয়াদের দাবি সমর্থন করেছে। এমনকী প্রয়োজনে এই দাবিতে পড়ুয়াদের সমর্থনে তারাও আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জুটা। যদিও রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর বৃহস্পতিবারেই ফের এক দফা নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র সংসদের নির্বাচন করা যাবে না। শুক্রবার নির্দেশিকাটি পৌঁছেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে।

ঘেরাওয়ে সামিল। —নিজস্ব চিত্র
যাদবপুরে রাতভর ঘেরাওয়ের ঘটনায় কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, “কয়েক জন ছোট ছেলেমেয়েকে যিনি সরকারি নির্দেশিকার মানে বোঝাতে পারেন না, তিনি কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন?” মন্ত্রীর এই মন্তব্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য। যাদবপুরের কিছু পড়ুয়ার এই ঘেরাও কর্মসূচির নেপথ্যে অন্য কোনও শক্তি কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখে উচ্চশিক্ষা সচিবকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, ওই রিপোর্ট আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। এ দিনই আবার বডিগার্ড লাইন্সে একটি অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেছেন, “আমি ঘেরাওয়ের বিরোধী। এটা চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার কাজ।”
যাদবপুরে ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনের পিছনে কারও প্ররোচনা আছে বলে মানতে চাননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “আন্দোলন যাদবপুরের বহু দিনের ঐতিহ্য। এ বারেও ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই আন্দোলন করেছে। তাদের দাবি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে বলেই শিক্ষকেরা সেটাকে সমর্থন জানিয়েছেন। পিছন থেকে প্ররোচনা দেওয়ার ভূত দেখার কোনও কারণ নেই।” অন্য এক শিক্ষক বলেন, “মন্ত্রীর বক্তব্যে আমি বিস্মিত!”
১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে গোলমালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কলকাতা পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টর। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার নির্দেশ দেয়, আপাতত সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন স্থগিত থাকবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ মার্চের মধ্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করার কথা। অনিবার্য কারণে তা করা না-গেলে নির্বাচনী উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান সংসদের মেয়াদ সাময়িক ভাবে বাড়ানো যেতে পারে। বৃহস্পতিবার ছিল যাদবপুরের উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রাজ্যকে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হয়। ৩১ মার্চের পরে বর্তমান সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়। তবে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দীর্ঘ সময়ের জন্য ওই মেয়াদ বাড়ানোর সংস্থান নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে। যদিও ওই নিয়মে ছাত্র সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির কোনও সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া নেই।
ঘেরাওকারী ছাত্রছাত্রীদের দাবি ছিল, অবিলম্বে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে হবে। এই দাবিতে ঘেরাও চালায় তাঁরা। রাতে টিন পিটিয়ে চেঁচামেচি, গালিগালাজ চলে বলেও অভিযোগ। কালো কালি দিয়ে স্লোগান লেখা হয় উপাচার্যের গাড়িতে। শুক্রবার ক্লাস বয়কট করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা ঘোষণা করেন, দাবি না-মেটা পর্যন্ত তাঁরা ক্লাস বয়কট চালিয়ে যাবেন। এ দিন সকাল থেকে শিক্ষক সংগঠন জুটা ও আবুটার প্রতিনিধিরা ঘেরাওকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষকদের মধ্যস্থতাতেই শেষ পর্যন্ত ঘেরাও ওঠে শুক্রবার বেলা ৩টেয়।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা এড়াতেই পরীক্ষার মরসুমে ছাত্রভোট স্থগিত রেখেছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে যাদবপুরকে নির্বাচনের অনুমতি দিলে তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই দাবি জানাবে। রাজ্যের প্রথম সারির একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে এমন আবেদন জানাতে চাইছে কেন?
যাদবপুরের এক কর্তা বলেন, “এখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কখনও বড়সড় গোলমাল হয়নি। বরং নির্বাচন স্থগিত রাখায় ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.