|
|
|
|
মুন্নার বাড়িতে তালা, চুপ মেরে গিয়েছে বন্দর |
শুভাশিস ঘটক |
গোলাপি রঙের তিন তলা বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে। সদর দরজায় তালা।
মাস খানেক আগেও আয়রন গেট রোডের এই বাড়িতে গুড়ে বসা
মাছির মতো ভিড় লেগে থাকত। সন্ধের পর বাড়ির লাগোয়া ওয়ার্ড অফিসে ‘আম দরবার’ বসাতেন বাড়ির মালিক। বন্দর এলাকার বেতাজ বাদশা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। শুক্রবার সেই অফিসের চার পাশে কাকপক্ষীর দেখা নেই।
১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর খুনের পর থেকেই বেপাত্তা ছিলেন ইকবাল। বৃহস্পতিবার রাতে বিহারের ডেহরি অন শোন স্টেশন চত্বর থেকে ধরা পড়েছেন তিনি। রাতেই টিভি দেখে ঘটনাটা জেনে যান এলাকার মানুষ।
আপাত দৃষ্টিতে শুক্রবার গার্ডেনরিচ আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক। দোকান-বাজার খোলা, রাস্তাঘাটে লোকজনও রয়েছে। কিন্তু সব যেন চুপ মেরে গিয়েছে। ফতেপুর রোড, বাতিকল, আলিফনগর, রামনগর এলাকায় বড় কোনও জটলা চোখে পড়েনি। শান্ত হরিমোহন ঘোষ কলেজ আর তার সংলগ্ন এলাকাও। কিন্তু ইকবাল সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করলেই গুটিয়ে যাচ্ছেন সবাই।
মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। খুব চাপাচাপি করলে বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন তাঁরা। কথা বলেছেন নিজেদের মধ্যেও। কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভরসা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনের কথায়, “ঘটনার পর থেকেই দলের শীর্ষনেতারা কেমন যেন হাত সরিয়ে নিয়েছেন। এক সময় যে কোনও ঘটনায় যাঁরা এগিয়ে আসতেন, এখন ফোনেও ভরসা দেন না।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, মুন্না বেপাত্তা হওয়ার পর থেকে বন্দর এলাকায় আনাগোনা কমেছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। এ দিন বন্দর এলাকার গোপাল ডাক্তার লেনের বিধায়ক অফিসেও গরহাজির তিনি। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা দাবি করলেন, বিধানসভা অধিবেশনের জন্যই আসেননি ফিরহাদ। তবে দলের অন্য নেতারা জানাচ্ছেন, আগের অধিবেশনের সময় বন্দর এলাকায় নিয়মিতই দেখা যেত তাঁকে। এ বার কী হল? মুন্না বিতর্ক থেকে দূরে থাকতেই কি আনাগোনা নেই পুরমন্ত্রীর? পরোক্ষে মানলেন দলীয় কর্মীরা। হাওয়া খারাপ দেখে ওঁরা অনেকটাই গুটিয়ে গিয়েছেন। এক জন বলেই ফেললেন, “দলের ভরসাতেই এই ঘটনায় জড়িয়েছিলেন মুন্না। তাঁরই যদি এমন পরিণতি হয়, তা হলে চুনোপুঁটিদের কী হবে!”
থমথমে ছবিটা ধরা পড়ল ১৫ নম্বর বরো অফিসেও। এক সময় এখানে বসেই এলাকা সামলাতেন মুন্না। আনাগোনা ছিল ঠিকেদার থেকে উমেদার, সব পক্ষেরই। রমরমিয়ে চলত গরু-মোষের খাটাল। পুলিশ এসে দেখা করে যেত এই অফিসে। অভিযোগ, এই অফিসেই তিনি এক বার এক পুলিশ অফিসারকে আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু এ দিন তাপ-উত্তাপ তো দূর, বরো চেয়ারম্যানের ঘরের আশপাশে দেখাই মিলল না কারও। এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী জানালেন, হরিমোহন কলেজের ঘটনার পরদিন চেয়ারম্যান সাহেব এক বার অফিসে এসেছিলেন। সেই শেষ। “এখন আর কেউ আসে না। আমি সকালে ঘর খুলে আলো জ্বালিয়ে দিই। বিকেলে বন্ধ করে চলে যাই।” তবে ওই অফিসেরই অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিন সকালে ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সদ্য পুত্রহারা রঞ্জিত শীল কিছু ক্ষণের জন্য অফিসে এসেছিলেন। বেলা বাড়তেই বাড়িমুখো হয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দা শাহবাজ আলম বলেন, “মুন্না ও মোক্তার, দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এখন দু’জতেই হাজতে ঢুকে যাওয়ায় তাঁদের শাগরেদরাও গা-ঢাকা দিয়েছে।” এলাকার বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, বন্দরে মুন্নার একচ্ছত্র আধিপত্যের ভিত নড়ে গিয়েছে। দিন দুয়েক তোষামুদে ঠিকেদারেরা বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করলেও এখন কাউকে দেখা যায় না। তবে এমনটা হওয়ায় বাসিন্দারা খুশি-ই। তাঁদের আশা, আপাতত কিছু দিন গুন্ডারাজের হাত থেকে রেহাই মিলবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলছেন, “ভরতের মতো সিংহাসনে খড়ম বসিয়ে রাজপাট চালানোর মতো মুন্নার আর কেউ নেই।” পরিজনেরা কোথায় গেলেন? ভাইপো রফিক বলছেন, “বড়পাপা (মুন্না) ধরা পড়ার খবর পেয়ে সবাই বিহারে চলে গিয়েছে।” |
|
|
|
|
|