|
|
|
|
কলকাতা ফেরার টিকিট কেটে ফেলেছিলাম,
গারদে বসে জানালেন মুন্না |
স্বপন সরকার • গয়া |
হাতে লোহার বেড়ি। খোঁচা-খোঁচা দাড়িতে ভরা চুপসে যাওয়া মুখ। ডেহরি-অন-শোন রেলপুলিশ থানার লক-আপের গারদ ধরে দাঁড়িয়ে তিনি দাবি করলেন, নেতারাই তাঁকে বলেছিলেন ক’টা দিন এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিতে।
তিনি, অর্থাৎ মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর তৃণমূল চেয়ারম্যান, তথা গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত। যাঁর অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে পুলিশকে হেনস্থা হতে হয়েছে, হরিমোহন কলেজে গণ্ডগোলের দিন যিনি পুলিশকে চড় মারতে যান বলে অভিযোগ। ওই দিনই যাঁকে দেখিয়ে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী এক পুলিশ-কর্তাকে বলেছিলেন, ‘ওঁকে স্যালুট করুন। উনি বরো চেয়ারম্যান!’
বৃহস্পতিবার ধরা পড়ার পরে শুক্রবার সকাল সাতটায় রেল-পুলিশের লক-আপে যে মুন্নাভাইয়ের দেখা মিলল, তাঁর চেহারা থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ‘চেয়ারম্যান সাবের’ ছায়াটুকুও যেন উধাও। পরনে কালচে-বেগুনি পুলওভার, ভ্যাবাচাকা খাওয়া চাউনি। ডান হাতে গারদ ধরে রেলপুলিশের অফিসারদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। জেরার মুখে অভিযুক্তেরা যেমন নিচু স্বরে কথা বলে, ঠিক সে ভাবে।
কী বললেন? “১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতা ছাড়লাম।” ডেরা পাল্টে পাল্টে কোথায় কোথায় গিয়েছেন, তা-ও জানালেন। শেষে ফিরলেন বৃহস্পতিবার রাতের কথায়। “প্রথমে ঠিক ছিল, গাড়ি করে জামশেদপুর যাব। সেখান থেকে কলকাতা। পরে ঠিক হল, ট্রেনে ফিরব। জোধপুর এক্সপ্রেসের টিকিটও কেটে ফেলি।”
এ পর্যন্ত বলে চুপ করলেন মুন্না। আর কিছু বলতে চাইলেন না। কার নির্দেশে কলকাতা ছাড়েন, পুলিশের সেই প্রশ্নের জবাবেও মুখ খোলেননি।
গ্রেফতার হওয়া ইস্তক কেমন আছেন উনি? পুলিশ সূত্রের খবর: বৃহস্পতিবার রাতে রেলপুলিশের ওসি রাজকুমার তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রাতের খাবার কখন দেওয়া হবে। ইকবাল তাঁদের জানান, সন্ধ্যায় তিনি খেয়েছেন, রাতে আর খাবেন না। আজ সকালে ওঁকে দেওয়া হয় বড় এক ভাঁড় চা আর বিস্কুট। মুন্না খেতে আপত্তি করেননি। বেলা দশটা নাগাদ মেয়ে সাবাতাজ ও ছোট ছেলে শোয়েফ এসে হাজির হন রেল পুলিশ থানায়। মেয়েকে দেখে মুন্নাভাই যেন কিছুটা ভরসা পেলেন। চোখের কোণে ফুটে উঠল জলের হাল্কা রেখা। ততক্ষণে মুন্নার কাছ থেকে পাওয়া ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮১৬ টাকা এবং কিছু জামাকাপড় সিজার লিস্টে ঢুকিয়ে নিয়েছে রেলপুলিশ। সাবাতাজকে দিয়ে সিজার লিস্টে সইও করিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর পরে গয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পালা। ট্রানজিট রিমান্ডের জন্য সেখানকার কোর্টে ইকবালকে পেশ করতে হবে। মুন্নাভাইও তৈরি। মেয়ের কাছ থেকে পুরো হাতা সাদা পাঞ্জাবি চেয়ে নিলেন। লক আপ থেকে বেরিয়ে পুলওভার খুলে নিজেই গলিয়ে নিলেন। পুলিশ এনে দিল সবুজ-কমলা রংয়ের বালিশের ওয়াড়। সেটিতে দ্রুত মুখ-মাথা ঢেকে সিআইডি ফিসারদের বললেন, “চলিয়ে স্যর, কাঁহা যানা হ্যায়।” বেলা সাড়ে এগারোটা। ইকবালকে নিয়ে গয়া রেল আদালতের দিকে রওনা দিল বিহার রেল পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি-র দল। স্করপিও গাড়িতে। বাবাকে গাড়িতে উঠতে দেখে সাবাতাজ ও তাঁর ভাই অন্য গাড়িতে পিছু নে ন। তবে সিআইডি-অফিসারেরা তাঁদের যেতে দেননি।
দেড়শো কিমি পাড়ি দিয়ে বেলা আড়াইটে নাগাদ গয়ার আদালতে পৌঁছে সিআইডি জানতে পারে, বিচারক রাজেন্দ্রকুমার ত্রিপাঠী ছুটিতে। যিনি এ দিন দায়িত্বে রয়েছেন, সেই বিচারক নমিতা সিংহও বাড়ি চলে গিয়েছেন। অগত্যা ইকবালকে নিয়ে আরও দু’কিলেমিটার দূরে নমিতাদেবীর বাড়িতেই যেতে হল পুলিশকে। ইকবালকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিচারকের কাছ থেকে মিলল ৪৮ ঘণ্টার ‘ট্রানজিট রিমান্ড।’
এ বার ফেরার পালা। সন্ধে পৌনে ছ’টায় গয়া রেলপুলিশ থানায় হাজির হলেন গোয়েন্দারা। মুন্নাভাইকে ফের ঢুকিয়ে দেওয়া হল লক-আপে। রাত একটা পঞ্চাশে কালকা মেলে তোলা হয় মুন্নাকে। ট্রেনের আপার বার্থে শুতে দেওয়া হয়। হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেওয়া হয় বার্থের সঙ্গে।
|
গার্ডেনরিচ পর্ব
|
১১ ফেব্রুয়ারি |
জখম তৃণমূল কাউন্সিলর-পুত্র অভিজিৎ। বোমা বাঁধার অভিযোগ। পরে মৃত্যু। |
১২ ফেব্রুয়ারি |
সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী খুন। |
১৩ ফেব্রুয়ারি |
ইবনে-সুহান ধৃত। ইকবালের বিরুদ্ধে এফআইআর। |
১৩ ফেব্রুয়ারি |
পুরমন্ত্রী বললেন,“ইকবাল যুক্ত,
বিশ্বাস করি না।” |
১৪ ফেব্রুয়ারি |
পচনন্দা অপসারিত। তদন্তভার
সিআইডি-কে। |
১৫ ফেব্রুয়ারি |
বর্ধমানে ইকবালের সঙ্গী রাজ, শাকিল, চুড়ি ফিরোজ ধৃত। |
১৬ ফেব্রুয়ারি |
তাপসের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী। অভিযুক্তদের ধরার প্রতিশ্রুতি। |
২০ ফেব্রুয়ারি |
খুনে ব্যবহৃত সুহানের ‘ওয়ানশটার’ উদ্ধার। |
২৫ ফেব্রুয়ারি |
ইবনের অস্ত্র উদ্ধার। |
২৬ ফেব্রুয়ারি |
ধৃত মোক্তার আহমেদ, মুস্তাক, ইকবাল-ঘনিষ্ঠ ইমতিয়াজ। |
৭ মার্চ |
বিহারে ইকবালকে ধরল রেল পুলিশ। |
৮ মার্চ |
দুপুরে গয়ার আদালতে ইকবাল। রাতে
রওনা কলকাতায়। |
|
|
|
|
|
|