পারিবারিক বিবাদের জেরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার দায়ে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিল রায়গঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত (প্রথম )। বুধবার দুপুরে বিচারক শান্তনু রায় ওই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্তকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে সাজার মেয়াদ আরও দু’মাস বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্তের নাম অজয় হালদার। তাঁর বাড়ি রায়গঞ্জ থানার সোহারই মনিনপাড়া এলাকায়। সরকারি আইনজীবী শেখর পাল বলেন, “আদালতের নির্দেশে প্রায় দু’বছর ধরে অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে রেখেই বিচার চলছিল। পারিবারিক বিবাদের জেরেই অভিযুক্ত তাঁর স্ত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছেন বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে।
শেখরবাবু জানান, পেশায় কাঠমিস্ত্রী অজয়বাবুর সঙ্গে প্রায় ১৭ বছর আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরাম এলাকার বাসিন্দা কল্পনা হালদারের বিয়ে হয়। তাঁদের ১৪ বছর বয়সী এক ছেলেও রয়েছে। অজয়বাবু নিয়মিত কাজে যেতেন না। কল্পনাদেবী স্থানীয় একটি বেকারিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। অজয়বাবু নিয়মিত কাজে না যাওয়ায় সংসারে অভাব লেগেছিল। বিষয়টি নিয়েই স্ত্রী কল্পনাদেবীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিবাদ চলছিল। সেই বিবাদের জেরেই ২০১১ সালের ১ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ অজয়বাবু শোওয়ার ঘরে তাঁর স্ত্রী কল্পনাদেবীর (৩৬) গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। কল্পনাদেবী ঘর থেকে ছুটে বার হয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে যান। এর পরে প্রতিবেশীরাই বস্তা চাপা দিয়ে কল্পনাদেবীর শরীরের আগুন নিভিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এরপর চিকিৎসকেরা তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন ! সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর প্রতিবেশী দীনেশ দাস নামে এক ব্যক্তি অজয়বাবুর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে কয়েকদিন পর তাঁকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে সেই থেকেই তিনি জেল হেফাজতে ছিলেন। চিকিৎসক, প্রতিবেশী, পুলিশ সহ এই মামলায় মোট ১১ জনের সাক্ষ্যের উপরে ভিত্তি করে মঙ্গলবার অজয়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। অজয়বাবু নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। পরে তিনি অভিযোগ করেন, “আমার স্ত্রী মানসিক কোনও কারণে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি।” |