বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিজেই রুগণ
মানুষের রোগ সারবে কি? হাসপাতাল নিজেই যে রুগণ। বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। সুদৃশ্য ঝাঁ চকচকে বিল্ডিং। সকাল থেকেই ‘আউটডোরের’ সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু চিকিৎসক মাত্র একজন। তিনিই ‘আউটডোর’, ‘ইনডোর’ সামলে আগলে রাখেন ‘এমারজেন্সি। অথচ বর্তমানে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সংখ্যা বিএমওএইচ-সহ পাঁচ জন। যাঁদের সপ্তাহে ছ’দিন হাসপাতালে ডিউটি করার কথা বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন একজন চিকিৎসককে একটানা ২৪ ঘণ্টা গোটা হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ সামলে দিতে হয়? হাসপাতাল কর্মীরাই জানিয়েছেন, “ডাক্তারদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে।” কর্মীর কথায়, গড়ে সপ্তাহে দু’দিন করে ‘ডিউটি’ করেন এক এক জন ডাক্তার। প্রতিদিন একজন করে দায়িত্ব নেন। বাকিরা সে দিন হাসপাতালের ত্রিসীমানায় ঘেঁষেন না। টানা ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল চালানোর পরদিন ছুটি ওই চিকিৎসকের। অন্য জন এসে দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেন, দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। এটা এখানকার ওপেন সিক্রেট। চলছে জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের চোখের সামনে। কর্মচারী সংগঠন থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা দলমত নির্বিশেষে এর প্রতিকার চেয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি।

ভেঙে পড়েছে আবাসন। নিজস্ব চিত্র।
এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও জেলা তূণমূল কংগ্রেস সভাপতি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। এই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ মন্ত্রী নিজেও। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে নানা সমস্যা আছে। চিকিৎসকের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। হাসপাতালটি যাতে সঠিক ভাবে পরিচালিত হয় তার জন্য আমি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেছি। কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সিপিএম-এর জোয়ানিয়া ভালুকা লোকাল কমিটির সম্পাদক স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর মিত্র বলেন, “২৪ ঘণ্টা একজন মাত্র চিকিৎসক গোটা হাসপাতালটা সামলান। হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনও কোনও দিন চারশোরও বেশি রোগী হয়। এখন প্রশ্ন হল একজন চিকিৎসকের পক্ষে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটানা চারশো রোগী দেখা সম্ভব কি না? তার উপর এমারজেন্সি, ইনডোরের চাপ তো আছেই। তিনি বলেন, “এ ভাবে রোগীরা কি সঠিক চিকিৎসা পেতে পারেন? একজন চিকিৎসকের পক্ষে সব দিক সামলানো সম্ভব হয় না বলেই সামান্য কারণেই রোগীদের জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। নন গেজেটেড হেলথ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক গোপাল চক্রবর্তী বলেন, বিষ্ণুপুর হাসপাতালে প্রতিদিন একজন করে চিকিৎসক ডিউটি করায় রোগীরা ঠিকমতো পরিষেবা পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি একজন চিকিৎসকের পক্ষে দিনে চারশো রোগী দেখে অন্যান্য বিভাগ সামলানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের হাসপাতাল চত্বরেই থাকার কথা। তার জন্য কোয়ার্টার আছে। কিন্তু বি এম ও এইচ নিজেই কৃষ্ণনগর থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ফলে অন্য চিকিৎসকদের কিছু বলার নৈতিক অধিকার তার থাকে না। যদিও চিকিৎসকদের পাল্টা দাবি, হাসপাতালের পাশেই যে ২০টির মতো কোয়ার্টার আছে তার প্রতিটির অবস্থাই খুব বেহাল। বসবাসযোগ্য নয়। তার উপর বছর খানেক আগেও আবাসনের বসবাসকারী এক কর্মীর ঘর থেকে সর্বস্ব চুরি হয়ে গেছে। তারপর থেকে তিনি আবাসন ছাড়া। ফলে ইচ্ছা থাকলেও তারা আবাসনে থাকতে পারেন না। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, আগে আবাসন ভালই ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর কেউ না থাকায় বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকায় দরজা জানালাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো সংস্কার করে নিলেই বসবাস করা সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্যোগটুকুও স্বাস্থ্যদফতর নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও এর বাইরেও হাসপাতালটিতে একাধিক সমস্যা আছে। হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
ফলে প্রসূতি থেকে শুরু করে শিশু সব ক্ষেত্রেই অবস্থা সামান্যতেই ঠেলে দেওয়া হয় জেলা হাসপাতালে। একটি অপারেশন থিয়েটার আছে। কিন্তু না আছে গাইনোকোলজিস্ট, না আছে সার্জেন, না আছে অ্যানাস্থেসিস্ট। ফলে সিজার তো দূরের কথা ছোটখাটো অপারেশনটুকুও হয় না। হাসপাতালের সামনেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আস্ত একটা অ্যাম্বুল্যান্স। স্থানীয় বিষ্ণুপুর-রাউতরা সমবায় ব্যাঙ্কের সম্পাদক প্রবীর মিত্র বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সটি সরকারি অর্থে কেনা। পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই অ্যাম্বুল্যান্সটি না চলে পড়ে আছে।” তিনি বলেন, “আমরা সিএমওএইচ-কে বলেছিলাম যে এলাকার দরিদ্র মানুষের স্বার্থে অ্যাম্বুল্যান্সটি পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হোক। নিজেদের টাকায় সারাই করে নিয়ে আমরাই চালাব। কিন্তু উনি সেই আবেদনে কর্ণপাত করেনি। বি এম ও এইচ দেবলীনা হালদার হাসপাতাল সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “চিকিৎসকদের সপ্তাহে অন্তত ৬ দিন ডিউটি করার কথা। তারা কেন সেটা করছেন না সেটা আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, “শুধু চিকিৎসকমাত্র বিষয়েই তো নয় গোটা হাসপাতালটিকে নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা আছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.