চিকিৎসা বিমা করিয়েও স্ত্রীর কিডনি অস্ত্রোপচারে খরচ হওয়া টাকা পাচ্ছিলেন না উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অপূর্ব মাজি। চার লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে স্ত্রীর কিডনি বদল করিয়েছিলেন তিনি। এক দিকে অসুস্থ স্ত্রী, অন্য দিকে অভাবের সংসারে জর্জরিত অপূর্ববাবুর মুখে অবশেষে হাসি ফোটাল রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। সম্প্রতি ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপে চিকিৎসা খরচের প্রায় পুরো টাকাটাই বিমা সংস্থার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি।
২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে অপূর্ববাবুর স্ত্রীর কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয় কলকাতার একটি নার্সিংহোমে। তারও দু’বছর আগে জীবন বিমা নিগম বা এলআইসি-র হেলথ প্লাস স্কিমে তাঁর চিকিৎসা বিমা করানো হয়েছিল। অপূর্ববাবু বলেন, “অস্ত্রোপচারের আগেই বিমা সংস্থা নিযুক্ত টিপিএ (থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর)-কে সব জানাই। রোগিণী নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ওদের কাছে সব বিল নিয়ে হাজিরও হই। তখন থেকেই ওরা আমাকে ঘোরাতে শুরু করে।”
এলআইসি-র ব্যাপারে নয়, অপূর্ববাবুর মূল অভিযোগ টিপিএ-র বিরুদ্ধেই। তিনি বলেন, “ওঁরা তো আমাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, স্ত্রীর অসুখটা আগেই ছিল। তাই ওঁদের কিছু করণীয় নেই। যদিও এর কোনও প্রমাণ ওঁরা দিতে পারেননি।” প্রায় দু’বছর ঘোরাঘুরির পরেও ফল মেলেনি। অগত্যা ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে আবেদন জানান অপূর্ববাবু।
চিকিৎসা বিমায় টাকা না-পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে। ওই দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানান, বিষয়টি
নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই যেন বিমাকারীরা বঞ্চিত না-হন। সাধনবাবুর কথায়, “যে-সব টিপিএ মানুষকে অযথা হয়রান করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিমা সংস্থাগুলিকে।”
অপূর্ববাবুর লিখিত অভিযোগ পেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে ডেকে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা এবং টিপিএ-কে। ওই অভিযোগের কথা তাঁদের জানানো হয়। অপূর্ববাবু জানান, ওই বৈঠকের পরে গত সপ্তাহে আমার বাড়িতে চার লক্ষ ১৯ হাজার টাকার চেক আসে। টাকা পেলেও অবশ্য টিপিএ-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমেনি তাঁর। অপূর্ববাবুর প্রশ্ন, অযথা হয়রান করলে টিপিএ-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি?
এ বিষয়ে বিমা অম্বুডসম্যান মনিকা দত্ত বলেন, “টিপিএ-র সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। চিকিৎসা বিমার টাকা না-পাওয়ার কোনও অভিযোগ এলে সরাসরি বিমা কোম্পানি ও বিমাকারীর সঙ্গে কথা বলা হয়।” তবে বিমাকারীকে চিকিৎসা খাতে খরচ করা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অযথা দেরি হওয়ার অভিযোগ তাঁদের কাছেও আসে বলে জানান মনিকাদেবী। সে-ক্ষেত্রে কেন ওই দেরি হচ্ছে, তার কারণ জানাতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে। তিনি বলেন, “জবাব যুক্তিপূর্ণ না-হলে বিমাকারীর টাকা অবিলম্বে দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে হয় বিমা সংস্থাকে।” তিনি জানান, বিমা-কর্তৃপক্ষ টিপিএ নিয়োগ করেন। কোনও কিছু করতে হলে ওঁরাই তা করতে পারেন। |