পঞ্চায়েতে মমতার উদ্যোগ
নারীদের ‘মধুর ভুবন’ বোঝাতে প্রমীলা বাহিনী
হিলা-মন জয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রমীলা বাহিনীকেই ময়দানে নামাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে বিরোধী পক্ষ ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রচারের মোকাবিলায় দলের মহিলাদের নিয়ে গড়া হচ্ছে বিশেষ বাহিনী। তার সদস্যারা পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি ঘরে গিয়ে প্রচার করবেন। কারণ তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, বিশেষত মহিলা নির্যাতনের বিষয়টি বিরোধীদের প্রচারের বড় হাতিয়ার হবেই। মহিলাদের দিয়েই পাল্টা প্রচারে সেই হাতিয়ার অনেকটাই ভোঁতা করা যাবে বলে তৃণমূলের ধারণা।
দলের প্রমীলা বাহিনীর সদস্যারা কী বলবেন? তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমাদের মেয়েদের স্লোগান হবে রাজ্য সরকারের একুশ মাস, বাংলার মেয়েদের স্বস্তির শ্বাস।” বাংলার মহিলারা আগের চেয়ে অনেক শান্তি ও নিরাপত্তায় বাস করছেন দাবি করে চন্দ্রিমা বলেন, “রাজ্যে মহিলা নির্যাতন বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা মেয়েরা ঘরে ঘরে গিয়ে জানাবেন। বলবেন, এই প্রথম মহিলাদের জন্যই আলাদা থানা তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার।” একটি পুস্তিকাও মহিলাদের হাতে তুলে দেবে ওই প্রমীলা বাহিনী।
গত সেপ্টেম্বরে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে চন্দ্রিমারা ‘চিত্রাঙ্গদা’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব বোঝাতে রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদার লাইন উদ্ধৃত করে ‘নহি সামান্যা নারী’ বলে পুস্তিকা তৈরি করেছিলেন। এ বারও ভরসা রবীন্দ্রনাথ! কবিগুরুর ‘মুক্তি’র লাইন উদ্ধৃত করে ‘মধুর ভুবন’ নাম রাখা হয়েছে পুস্তিকার। চন্দ্রিমার ব্যাখ্যা, “মুক্তি কবিতায় আছে: ‘সবাই আমায় বললে লক্ষ্মী সতী, ভাল মানুষ অতি’। তার পরে আছে: ‘মধুর ভুবন, মধুর আমি নারী’। নারীদের গুরুত্ব দিয়ে সরকার কী কী কাজ করেছে, তার বিবরণ থাকবে পুস্তিকায়।” শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের মহিলা সমাবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘মধুর ভুবন’ প্রকাশ করার কথা মমমতার।
মহিলাদের উপরে নির্যাতন বন্ধ করতে মমতা-সরকার কতটা সক্রিয়, তা বোঝাতে রাজ্যে মহিলা পরিচালিত থানা, আদালত থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রামে এক জন মহিলাকে পুলিশ সুপার পদে নিয়োগের উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য মহিলা পরিচালিত ১০টি থানা চালু হয়েছে। যদিও রাজ্যের ৬৫টি মহকুমায় একটি করে মহিলা পরিচালিত থানা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন। চন্দ্রিমার কথায়, “এখন রাজ্যে মহিলাদের জন্যই মহিলা পরিচালিত থানা হয়েছে। আগে মহিলারা থানায় যেতে সাহস পেত না। এখন থানায় অভিযোগ নেওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু যেটা দরকার, সমাজে মানসিকতার পরিবর্তন। মহিলাদের উপরে অত্যাচার একটা আদিম রিপু। সামাজিক ব্যাধি। শুধু আইন করে বা বিরোধীরা আমাদের সরকারকে সমালোচনা করলেই এটা বন্ধ হয়ে যাবে না!”
চন্দ্রিমা তো বটেই, সংগঠনের দুই কার্যনির্বাহী সভানেত্রী বিধায়ক স্মিতা বক্সী, মালা সাহাদেরও বক্তব্য, তাঁদের প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা ঘরে ঘরে প্রচারে বলবেন, নারী ‘ভোগ্য পণ্য’ নয়। বলবেন, নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা। বলবেন, মুখ্যমন্ত্রী মহিলা বলেই তাঁদের যন্ত্রণার কথা বোঝেন। তাই তাঁর সরকার মহিলাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সব রকম সহযোগিতা করছে। পঞ্চায়েতের প্রচারে প্রমীলা বাহিনী গড়তে ইতিমধ্যেই বুথ পিছু পাঁচ জন করে মহিলার তালিকা তৈরি। নেতাজি ইন্ডোরে সমাবেশের পরেই বাহিনী কাজ শুরু করবে বলে চন্দ্রিমা জানান।
প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের মহিলা সমিতির এক নেত্রীর অবশ্য কটাক্ষ, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই পশ্চিমবঙ্গ নারী নিগ্রহের ঘটনায় দেশের মধ্যে এক নম্বর! ওঁদের স্লোগানই একটু পাল্টে বলতে হবে, তৃণমূল সরকারের একুশ মাস, বাংলার মেয়েদের সাড়ে সর্বনাশ!” বিরোধীদের কটাক্ষে কান দেওয়ার সময় নেই তৃণমূলের মহিলা নেত্রীদের। আগে ‘চিত্রাঙ্গদা’, এ বার প্রমীলা বাহিনী। পঞ্চায়েতে ‘মধুর ভুবন’ তাঁদের চাই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.