|
|
|
|
প্রশ্ন, টাকা আসবে কোথা থেকে |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘কন্যাশ্রী’ মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নাবালিকা বিবাহ এবং ছাত্রীদের স্কুলছুট রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাওয়াই ‘কন্যাশ্রী’। বুধবার এই প্রকল্প ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে জানালেন, এর জন্য বছরে লাগবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু কোথা থেকে এই অর্থ আসবে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। শুধু জানিয়েছেন, “আমাদের টাকা নেই। কিন্তু সামাজিক কাজ করতেই হবে। এ জন্য আমাদের টাকা তুলতে হবে।”
স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্প ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে, রাজকোষের হাল জেনেও এমন ঘোষণা কেন করলেন মুখ্যমন্ত্রী? বিরোধী পক্ষ প্রশ্ন তুলেছে, এ কি তবে পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে?
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে এর মধ্যেই শুধু মহিলাদের জন্য ৪৫টি আদালত খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৬৫টি মহিলা থানা খোলার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি থানা তৈরিও হয়েছে। তবে এ সব ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। কী রয়েছে এই প্রকল্পে?
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে অষ্টম শ্রেণির পর থেকে ছাত্রীর সংখ্যা কমে যায়। এই ঝোঁক কমাতেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভা ওই প্রকল্পে সিলমোহরও দিয়েছে। এই প্রকল্প অনুযায়ী, যে সব ছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার কম, অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরে তারা যদি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়, তা হলে সরকার তাদের বছরে মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে অনুদান দেবে। সংশ্লিষ্ট ছাত্রী এই অনুদান পাবে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাল্যবিবাহের জন্য অষ্টম শ্রেণির পরে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়ে যায়। তা ঠেকাতে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে আরও একটি অনুদান দেবে রাজ্য। ১৮ বছর পর্যন্ত যে সব ছাত্রী অবিবাহিত থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, তাদের পরিবারকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট পরিবারের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার কম হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ওই টাকা দিয়ে সে পরবর্তী পড়াশোনা চালাতে পারে। আবার বাবা-মা ওই টাকা তার বিয়ের জন্যও খরচ করতে পারেন।” ‘কন্যাশ্রী’ রূপায়ণের দায়িত্ব নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য যা খরচ হবে, নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের সারা বছরের বাজেটই এত নয়। তা হলে, এই টাকার সংস্থান হবে কোথা থেকে? মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী বারবার দাবি করছেন, তাঁদের বার্ষিক আয় ২৫ হাজার
কোটি টাকা হলেও কেন্দ্রকে সুদ-আসল বাবদ বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়। তা হলে রাজ্যের উন্নয়ন হবে কী ভাবে!
সরকারের এ হেন দাবি এবং পাশাপাশি ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্প ঘোষণার মধ্যে স্ব-বিরোধিতা দেখছেন প্রশাসনের একাংশ। শুধু ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পই নয়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে আরও কিছু এমন প্রকল্প ঘোষণা করা হবে বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর। দফতরের কর্তাদের প্রশ্ন, এই সব প্রকল্পের টাকা আসবে কোথা থেকে! তাঁদের কথায়, “ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশে একই ধাঁচে ‘কন্যাদান’ প্রকল্প জনপ্রিয় হয়েছে। একই ধরনের প্রকল্প চলে রাজস্থান, বিহার-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেও।” কিন্তু কর্তাদের দাবি, “ওই সব রাজ্যের আর্থিক হাল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো নয়। প্রকল্পের জন্য অর্থের সংস্থান করার পরেই ওই সব রাজ্য তা ঘোষণা করেছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘চমক দেওয়ার চেষ্টা’ দেখছে সিপিএম। এত সব ঘোষণার কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে তারা। বিরোধী দলের বক্তব্য, ২১ মাসের শাসনকালে একের পর এক ঘোষণা করে তার জন্য জমি বা পরিকাঠামোর ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই করে উঠতে পারেনি সরকার। টাকার বরাদ্দও হয়নি।
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, “প্রতিটি জেলা সদরে মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, প্রতি ব্লকে আইটিআই, প্রতি ব্লকে আধুনিক হিমঘর এই রকম ঘোষণা তো হয়েই চলেছে! বোঝাই যায়, এগুলো ঘোষণার জন্য ঘোষণা! বিভিন্ন ঘটনায় এত সব কমিশন বা ট্রাইব্যুনাল যে গড়া হয়েছে, তাদের কাজ করার জন্য বসার ঘরই দিতে পারেনি সরকার।” সেলিমের মতে, “এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হলে আগে একটা বা দু’টো পাইলট প্রকল্প করতে হয়। সফল হলে তখন এগোতে হয়। তা ছাড়া, শুধু ঘোষণা করে দিলেই তো হল না! তার জন্য অর্থের প্রয়োজন। সেই টাকা কোথায়? নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের মানবসম্পদও চাই। টাকা ছাড়া সেটাই বা সম্ভব কী ভাবে?” বাম সূত্রের আরও বক্তব্য, বাবা-মায়ের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার নীচে হলে কন্যাসন্তানের জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা বামফ্রন্ট আমলেও ছিল। আগে ২০০ টাকা দেওয়া হত। মুখ্যমন্ত্রী এখন বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করার ঘোষণা করেছেন।
তবে এই সব ধর্তব্যের মধ্যে আনছেন না মুখ্যমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দু’দিন আগে তিনি আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখলেন রাজ্যের মহিলাদের। |
|
|
|
|
|