পঞ্চায়েতের মুখে চাল মমতার
সংখ্যালঘু সংরক্ষণ উচ্চশিক্ষাতেও
চ্চশিক্ষায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) ছেলেমেয়েদের জন্য ১৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বুধবার মহাকরণে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
১৭ শতাংশ ওবিসি-র মধ্যে ৭ শতাংশ অ-সংখ্যালঘু শ্রেণির, বাকি ১০ শতাংশ সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট। সংখ্যালঘু শ্রেণির ওবিসিদের মধ্যে আবার রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমদের ৯৮ ভাগকেই আনা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের দাবি। ফলে এ দিনের সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে মুসলিমদের সিংহভাগই উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন বলে অনগ্রসর দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। যাকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা শাসক দলের মাস্টার স্ট্রোক বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার বিরোধিতা করতে পারেনি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। কারণ, ক্ষমতায় থাকাকালীন রঙ্গনাথ মিশ্র কমিটির সুপারিশ মেনে ওবিসি-দের জন্য প্রথমে সরকারি চাকরি ও পরে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ চালুর কথা বলেছিল তারা। চাকরিতে সংরক্ষণ চালুও করেছিল। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় করে উঠতে পারেনি। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে মমতা তা করে ফায়দা লুঠতে পারেন আন্দাজ করে সিপিএম বলছে, ‘মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না! কাজে করে দেখাতে হবে।’
মমতা এ দিন জানান, ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট হায়ার এডুকেশন রিজার্ভেশন অ্যান্ড অ্যাডমিশন বিল, ২০১৩’ বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনেই পেশ করা হবে। বিলে বলা হয়েছে, তফসিলি উপজাতিদের জন্য ৬ শতাংশ, তফসিলি জাতির জন্য ২২ শতাংশ এবং ওবিসি-র জন্য ১৭ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৪৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এত দিন উচ্চশিক্ষায় ওবিসিদের জন্য আসন সংরক্ষণ ছিল না। সেই সংরক্ষণের ফলে সাধারণ শ্রেণির পড়ুয়াদের আসন যাতে না কমে, সে জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়ানো হবে। তবে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসনবৃদ্ধি যে হেতু রাজ্য সরকারের হাতে নয়, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষ, সে হেতু এই সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণ এখনই হবে কি না সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
প্রশ্ন উঠেছে বেহাল কোষাগার নিয়ে জেরবার সরকার বাড়তি আসন তৈরির খরচ কী ভাবে জোগাবে তা নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। যদিও জানিয়েছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়াতে হলে পরিকাঠামো বাড়ানো দরকার। প্রয়োজন আরও শিক্ষক-শিক্ষিকাও। অতিরিক্ত পরিকাঠামোর জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরকে এককালীন ১,০০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন ইত্যাদি বর্ধিত খরচের জন্য পরবর্তী ছ’বছর ৬০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আগামী ছ’বছরে ৪৬০০ কোটি টাকা দরকার হবে।
সরকারি কোষাগার কী ভাবে এই বিপুল খরচ জোগাবে, সেই প্রশ্নের উত্তর না থাকলেও এ দিনের ঘোষণা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ভোটবাক্স অনেকটাই ভরে দেবে বলে দলীয় নেতৃত্বের আশা। মমতার ক্ষমতায় আসার পিছনে সংখ্যালঘু ভোটের অবদান অনেকটাই। তাই মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি সংখ্যালঘু উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি, প্রায় নিয়ম করেই সভা-সমাবেশে দাবি করেছেন, সংখ্যালঘুদের জন্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ৯০ শতাংশই পূরণ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে যে তৃণমূল সরকার সম্পর্কে অসন্তোষ অল্প অল্প করে মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা আর গোপন নেই। মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে ঈদের নমাজে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ধর্মীয় নেতা। আবার ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি ধর্মতলার সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন কড়া ভাষায়। ইমাম ভাতা নিয়েও মুসলিমদের মধ্যে নানা মত। সরকার ৩০ হাজার ইমামের জন্য এই ভাতা ঘোষণা করলেও ১৬ হাজার ইমাম ভাতা নিচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা এই সব ‘ক্ষত’তে প্রলেপ দিতে চান। উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য সেটাই।
তবে এই ঘোষণার সবটুকু সুফল যাতে তৃণমূলের ভাঁড়ারে না-ওঠে, সে জন্য আসরে নেমেছে সিপিএম-ও। তাদের বক্তব্য, বাম আমলেই ওবিসি-দের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে মমতার জমানায় মুসলিমদের সরকারি চাকরি পাওয়ার বহর তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কলকাতা পুলিশে গত দু’বছরে যত নিয়োগ হয়েছে তার মাত্র ২% মুসলিম। ফলে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের কাজ তৃণমূল সরকার বাস্তবে কতটা করতে পারেবে, সন্দেহ থাকছেই।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “চাকরিতে সংরক্ষণের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে বাকি ক্ষেত্রে আর কী আশা করা যায়? সংরক্ষণের হিসাব শুধু মুখের কথায় হবে না। এর জন্য নির্দিষ্ট সরকারি প্রক্রিয়া চাই। মিশ্র কমিশনের সুপারিশ মেনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাইলে ভাল কথা। তবে কথায় আছে, ফলেন পরিচীয়তে! তাই কাজে কী করেন, দেখা যাক।”
একই কথা কংগ্রেসেরও। প্রাক্তন মন্ত্রী ও কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “উচ্চশিক্ষায় ওবিসিদের ১৭% সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস লড়াই চালিয়েছে। বিধানসভা ভোটের ইস্তাহারেও আমাদের এই দাবি ছিল। এই ঘোষণা ভাল উদ্যোগ। বাস্তবায়ন হলে ভাল। তবে ঘোষণা ও রূপায়ণে মিল থাকুক, সেটাই চাই।”
বিজেপি-র রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভাজনের রাজনীতি করছেন। আইনসভায় বিলটি পাশ হলেও সুপ্রিম কোর্ট তা মানবে না। কারণ ভারতীয় সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরোধী।” প্রসঙ্গত, চাকরিতে ওবিসি তালিকায় সংরক্ষণ ঠেকাতে আগেই মামলা করেছে বিজেপি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.