|
|
|
|
সময়ে কাজ না হলে জরিমানা |
‘আসি যাই মাইনে পাই’ বদলাতে বিল রাজ্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
করণিক পদে তিন বছরের শিক্ষানবিশি চালুর পরে এ বার পরিষেবার অধিকার কায়েম করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাই বাঁধা মেয়াদের মধ্যে পরিষেবা দিতে না-পারলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীর জরিমানার সংস্থান রেখে ‘লোক পরিষেবা অধিকার’ বিল বুধবার পাশ হল রাজ্য মন্ত্রিসভায়। তাতে থাকছে ভাল কাজের জন্য পুরস্কার লাভের সুযোগও।
এবং এর প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে নানাবিধ জল্পনা। সরকারি কর্মীদের ‘আসি যাই, মাইনে পাই’-এর দিন কি সত্যিই শেষ হতে চলল? শীতের রোদে পিঠ পেতে গল্পে মশগুল হওয়া, কিংবা গরমে মুখে রুমাল পেতে একটু চোখ বুজে ‘জিরিয়ে নেওয়া’র দৃশ্য কি বিদায় নেবে মহাকরণ থেকে?
প্রশ্নগুলো উঠেছে লালবাড়ির অলিন্দেই। যার মূলে এক সপ্তাহের মধ্যে নেওয়া ওই দু’টি সরকারি সিদ্ধান্ত। একটা হল সরকারি কেরানির চাকরিতে ঢুকে ‘ব্যাস, নিশ্চিন্ত’ আর বলতে পারবেন না শিক্ষানবিশেরা। স্থায়ী কর্মীর তুলনায় আধা বেতন নিয়ে টানা তিন বছর চাপের মুখে কাজ করতে হবে। তার পরে দিতে হবে মান যাচাইয়ের পরীক্ষা। পাশ করলে তবেই নিশ্চিন্ত। তার সঙ্গে এ দিন জুড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা। মহাকরণে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “আমরা একটা বিল আনছি। তার নাম লোক পরিষেবা অধিকার বিল। সাধারণ মানুষকে সময়মতো পরিষেবা দিতেই আজ (বুধবার) তা ক্যাবিনেটে পাশ করে দিলাম।” |
|
সেলাম:
মহাকরণে ঢোকার মুখে। বুধবার রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
যার মর্মার্থ, ফাইলের ফাঁকে মাথা গলিয়ে টেবিলের ও-পারের লোককে ‘কাল আসুন’ বলার আগে এখন সাত বার ভাবতে হবে সরকারি কর্মীদের। মহাকরণের কর্তারাও জানাচ্ছেন, সরকারের লক্ষ্য কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা। মুখ্যমন্ত্রী সে দিকেই ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন। কিন্তু উনি-ই তো ক্ষমতায় এসে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছেন? সেটা কি কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর পরিপন্থী নয়?
রাজ্য প্রশাসনের একাংশ এ প্রশ্নও তুলেছেন। যদিও পরের পর দুই ‘কঠোর’ সিদ্ধান্তের জেরে সেই বিতর্ক আপাতত কিছুটা ধামাচাপা। উপরন্তু মহাকরণের কানাঘুষো, অর্জিত ছুটির সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩০০ থেকে ছেঁটে ১৮০ দিন করার কথাও ভাবছে সরকার। খুব শিগগির নাকি মন্ত্রিসভায় এই মর্মে প্রস্তাব আসতে পারে। শুনে কর্মীদের উদ্বেগ বেড়েছে কয়েক গুণ।
এ হেন পরিস্থিতিতেই এ দিন কাজের মানের নিরিখে সরকারি কর্মীদের পুরস্কার-তিরস্কারের কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, আমজনতাকে পরিষেবাদানের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে আবেদনকারীর আর্জির নিষ্পত্তি করতে না-পারলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীর জরিমানা হবে। কী ভাবে?
প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, পরিষেবা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতি দিন আড়াইশো টাকা করে, সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বাবদ কাটা হবে। এবং সরকারি কর্মীর কাছ থেকে আদায় করা ওই টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ বাবদ দেওয়া হবে আবেদনকারীকে। আর আইন মেনে কাজ করলে?
সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা ইনামের বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। সঙ্গে মিলবে সরকারের দেওয়া শংসাপত্র। কর্মীর সার্ভিস বুকে যার উল্লেখ থাকবে।
প্রস্তাবিত আইন মোতাবেক, সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থায় নাগরিক পরিষেবা চেয়ে কেউ আবেদন করলে কোন কাজের জন্য কত দিন সময় লাগতে পারে, আবেদনকারীকে তা তখনই জানিয়ে দিতে হবে। সরকারই সময়সীমা বেঁধে দেবে। আবেদনের দিন থেকে মেয়াদ গোনা শুরু হবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারী যাতে তাঁর আবেদনের বর্তমান অবস্থান (স্টেটাস) জানতে পারেন, সে জন্য পরিষেবা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অন-লাইনে রাখতে হবে। অতিরিক্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থার মূল অফিসে কিংবা সচিবের ওয়েবসাইটে জানিয়ে রাখতে হবে পরিষেবার খুঁটিনাটি।
কিন্তু কেউ এই আইনের সুযোগ নিয়ে যদি সরকারি কর্মী-অফিসারদের হয়রান করে? প্রস্তাবিত বিলে সেটাও খেয়ালে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, আবেদনকারীর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সব দফতরে এক জন অফিসারকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হবে। তাঁর উপরে থাকবে রিভিউ কমিটি। এবং সবার মাথায় স্টেট পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি কমিশন নামে একটি ‘অ্যাপিলেট অথরিটি।’ আবেদনকারী থেকে কর্মী-অফিসার প্রয়োজনে সকলেই বক্তব্য জানাতে কমিশনে যেতে পারবেন। কমিশনের রায়ই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। আপাতত যে যে পরিষেবাকে প্রস্তাবিত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, সেগুলো হল: ড্রাইভিং লাইসেন্স, জমির চরিত্র বদল, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, রেশন কার্ড, বিপিএল কার্ড, কৃষি ও স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং মার্কশিট। পরে আরও কিছু বিষয়কে এর আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
|
|
|
|
|