|
|
|
|
মমতার কোপে পড়ে ছাড়লেন শিল্প উপদেষ্টার পদ |
জমি জটের কথা বলতেই সৌগত-বিদায় |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
জমি সমস্যার কারণে রাজ্যে বড় শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোপে পড়লেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়। দলীয় সূত্রের খবর, মতান্তর এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন সৌগতবাবু। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি।
যদিও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সৌগতবাবু বলেন, “আপনি লিখতে চাইলে লিখতে পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
তবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যের জমি সমস্যা নিয়ে সৌগতবাবুর সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মন কষাকষির সূত্রপাত। সম্প্রতি বণিকসভার একাধিক অনুষ্ঠানে সৌগতবাবু যা বলেছেন তার অর্থ, জমি সমস্যার কারণে বড় শিল্প আশাই করছে না রাজ্য। গত মাসের ১৭ তারিখ কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভায় তিনি বলেন, এ রাজ্যে জমির যা চরিত্র এবং রাজ্য সরকার যে হেতু জমি অধিগ্রহণের বিরোধী, সে হেতু বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে জমি পাওয়া কঠিন। সেই কারণেই তিনি খসড়া শিল্পনীতিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
গত শনিবারও ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠন ‘ফ্যাসি’ আয়োজিত সভায় সৌগতবাবু বলেন, “একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় বড় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেখানে পরিকাঠামো অপর্যাপ্ত। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশের মাধ্যমেই রাজ্যকে শিল্পের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে।”
কিন্তু সে দিনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৌগতবাবুর মতকে কার্যত খারিজ করে দিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জানি না সৌগতবাবু কী বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে শুধু বলতে পারি, শিল্পের জন্য কোনও জমির সমস্যা নেই। তা সে ছোট শিল্প হোক বা বড় শিল্প।” পার্থবাবু পরে এ-ও বলেন, “সৌগত রায় জমি সমস্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মত, সরকারের মত নয়।”
সূত্রের খবর, এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সৌগতবাবুকে ফোন করে কেন এই ধরনের মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে কৈফিয়ত চান। এমনকী এ-ও বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা এই পরিচয় তিনি কেন দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তখনই মৌখিক ব্যাখ্যা দেন সৌগতবাবু। পরে একটি চিঠিও পাঠান।
সরকারি সূত্রের খবর, চিঠিতে সৌগতবাবু জানিয়েছেন, শিল্পের জন্য রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে কতটা জমি রয়েছে, সেই পরিসংখ্যান তিনি রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার সচিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সচিব তাঁকে জানান, সেই অর্থে কোনও ল্যান্ড ব্যাঙ্ক নেই। মূলত সেই কারণেই তিনি বলেছেন যে, বড় শিল্পের জন্য জমির সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া, সরকারের ঘোষিত নীতিই তো হল যে শিল্পের জন্য জোর করে জমি নেওয়া হবে না। এবং উর্বর জমিতে শিল্প হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যাও চিঠিতে দিয়েছেন সৌগতবাবু। তিনি লিখেছেন, পাঁচ মাস আগে মুখ্যসচিব তাঁকে যে নিয়োগপত্র পাঠিয়েছিলেন, তাতেই বলা ছিল, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদের মর্যাদা পাবেন। সেই কারণেই তিনি তাঁর লেটার হেডে সেই পদ উল্লেখ করতেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এতে যখন আপত্তি রয়েছে, তখন আর ওই লেটার হেড ব্যবহার করবেন না, তাঁর দফতরে যাবেন না এবং মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও উপদেশও দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই মতান্তর ও চিঠি দেওয়ার বিষয়টি সতীর্থ তৃণমূল সাংসদদেরও কয়েক জনকে জানিয়েছেন সৌগতবাবু।
গোটা বিতর্কে অনেকেই সৌগতবাবুর সঙ্গে শিল্পমন্ত্রীর রেষারেষির গন্ধ পাচ্ছেন। তার নজির এর আগেও দেখা গিয়েছে। দিল্লিতে শিল্পমহলের কর্তাদের সঙ্গে মমতা ও শিল্পমন্ত্রীর বৈঠকে সৌগতবাবুকে ডাকা হয়নি। যদিও শিল্পমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হচ্ছে, এই বিতর্কে অনর্থক তাঁকে জড়ানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী যখন বারবার বলে চলেছেন যে শিল্পের জন্য জমি কোনও সমস্যা নয়, তখন সৌগতবাবুর বক্তব্য তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তির কারণ। কিন্তু তিনি যা বলেছেন, সেটাই বাস্তব পরিস্থিতি। রাজ্যের যে জায়গায় সহজে এক লপ্তে জমি পাওয়া সম্ভব, সেখানে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। আর যেখানে পরিকাঠামো আছে, সেখানে সরকারের নীতি মেনে শিল্পপতিদের পক্ষে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে বড় মাপের জমি কেনা কার্যত অসম্ভব।
সরকারের এই অবস্থান বজায় থাকলে রাজ্যে যে আর ভারী শিল্প গড়ে উঠবে না, বহু শিল্পপতিই সে কথা বলছেন। আর ছোট ও মাঝারি শিল্প মূলত বড় শিল্পের সহযোগী এবং অনুসারী হিসেবেই গড়ে ওঠে। ফলে বড় শিল্প না হলে রাজ্যে ছোট-মাঝারি শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনাও কম।
ঘটনাচক্রে শতাব্দী প্রাচীন জমি অধিগ্রহণ নীতির পরিবর্তে নতুন জমি আইন প্রণয়নের জন্য আগামিকালই দিল্লিতে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তৃণমূলের তরফে ওই বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকার কথা।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সুদীপবাবু বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেবেন, তৃণমূল চায় না বেসরকারি শিল্পের জন্য সরকার এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করুক। বিলে এর ব্যতিক্রম হলে সংসদে তার বিরোধিতা করবে তৃণমূল। |
|
|
|
|
|