দাবি দীর্ঘদিনের। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত ওই দাবি নিয়ে দরবার করেছেন বাসিন্দারা। তবু আজও ঝালদা ২ ব্লকের গুড়রাবেড়া গ্রাম লাগোয়া ঠাকুরচাটান গিড়গিড়ি খালের উপর একটি সেতু তৈরি হল না। বাসিন্দাদের বক্তব্য, “এত বছরের সমস্যা। তবু কেউ ফিরেও তাকায়নি।”
অযোধ্যা পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে মুরগুমা জলাধারের অদূরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই জঙ্গলঘেরা গ্রাম গুড়রাবেড়া। শছয়েক মানুষের বসবাস। জীবিকা বলতে দিনমজুরি ও জঙ্গলের ডালপালা বিক্রি করা। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ওই খালের পাড়েই তাঁদের গ্রাম। নীচে নেমে খাল পেরিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের বেগুনকোদরে হাট-বাজার রয়েছে। মহেশ্বর টুডুর কথায়, “গ্রামে তো কিছুই নেই। দিনমজুরি করতে যাওয়া কিংবা জ্বালানি কাঠ বিক্রি করতে যাওয়াসব কাজেই আমাদের বেগুনকোদরে যেতে হয়। ঘর-গেরস্থালির জিনিসপত্র কেনা কিংবা অসুখ-বিসুখ হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তার দেখানো, সবকিছুর জন্য আমরা বেগুনকোদরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ওই খাল পার হয়েই আমাদের যেতে হয়।” বাসিন্দারা জানান, বছরের শুখা সময়ে কষ্ট করে তাঁরা খাল পার হন। কিন্তু বর্ষাকালে খাল জলমগ্ন থাকায় পারাপার করতে বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তিতে পড়েন। প্রচণ্ড বৃষ্টি হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খালের এক পাড়ে বসে থাকতে হয়। গ্রামের বাসিন্দা পশুপতি মাণ্ডি বলেন, “বর্ষার সময় একবার ওই খালে প্রচণ্ড তোড়ে বান এসেছিলে। বজ্রাঘাতে আমাদের গ্রামের রবি মাণ্ডি নামে একজন আহত হলেন। খালে জল উঠে যাওয়ায় তাঁকে বেগুনকোদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়েই যাওয়া গেল না। সে দিন বিনা চিকিৎসায় মানুষটা মারা গেল।” |
বর্ষার সময় খালে জল থাকলে বাসিন্দাদের তুলনামূলক দূরে ঝালদায় যেতে হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জীতবাহন সিংহ বলেন, “খালে জল থাকলে তখন নওয়াগড়, পাঁড়ুয়া, বরুয়াকোচা হয়ে কমবেশি ১৫ কিলোমিটার পথ উজিয়ে ঝালদায় যেতে হয়। এ ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। গিড়গিড়ি খালের উপর সেতু নির্মাণের দাবি অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে। কিন্তু শুনছে কে?”
প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ তহবিল থেকে এই সেতু গড়ার জন্য ২০১০-১১ অর্থবর্ষে ৪২ লক্ষ টাকার কিছু বেশি বরাদ্দ হয়। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “তখন ওই এলাকা কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল। তাই টেন্ডার ডাকা হলেও কোন ঠিকাদারই টেন্ডারে অংশ নেয়নি।” ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা কুমার বলেন, “২০১১ সালে দু’বার ও ২০১২ সালে একবার টেন্ডার ডাকা হয়। আগ্রহী ঠিকাদারের অভাবে এখানে সেতু গড়ার কাজ শুরুই করা যায়নি। নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। কাজের অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই বাসিন্দাদের চাহিদা মিটবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, অতি সম্প্রতি ওই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে গ্রামবাসীরা বলছেন, “অনেকদিন ধরেই শুনছি এই খালের উপরে সেতু হবে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করছি। না আঁচিয়ে ভরসা নেই।” |