পাঁচের দশকের শেষ দিকে তৈরি সেতু। নয়ের দশক থেকেই জীর্ণ দশা। এক-দু’বার সামান্য সংস্কার করে দায় সেরেছে প্রশাসন। নতুন করে তৈরির জন্য শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে মাস আটেক আগে। কিন্তু কাজ আর হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার কাছে হিজলি টাইডাল খাল পারাপারের জন্য তাই পুরনো বেহাল সেতুটিই এখনও একমাত্র ভরসা। কলকাতার উল্টোডাঙায় নতুন উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে ব্যস্ততম হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ওই জীর্ণ সেতু নিয়ে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ মিটার ও ৭ মিটার চওড়া এই সেতুটি বছর সাতেক আগে দুলতে শুরু করায় সামান্য মেরামত করেছিল পূর্ত দফতর। ওই শেষ বার। তারপর আর কোনও সংস্কার না হওয়ায় সেতুর একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। হলদিয়া থেকে নন্দকুমার, তমলুক, মেচেদা, মেদিনীপুর যাতায়াতের একমাত্র রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। ফলে ভারী যানবাহন চলাচলে ফাটল বাড়ছে ক্রমশ। ভেঙে গিয়েছে ‘গার্ড ওয়াল’ও। |
রাজ্যে পালাবদলের পরে মহিষাদলের গেঁওখালিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় রাজ্য সরকার। গেঁওখালি পৌঁছতে এই সেতুটি অন্যতম ভরসা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সেতু সংস্কারে উদ্যোগী হয় তৃণমূলের সরকার। কিন্তু ততদিনে সেতুর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান মেরামত নয়, নতুন করে সেতু গড়তে হবে। ঠিক হয়, পুরনো সেতুটি ভেঙে নতুন করে ১২ মিটার চওড়া সেতু করা হবে। যান চলাচলের জন্য সাময়িক ভাবে অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়। বরাদ্দ হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। গত বছর ২৭ জুন ঘটা করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার শিলান্যাস করেন নতুন সেতুর। তবে ৮ মাস কেটে গেলেও কাজ শুরু করতে পারেনি পূর্ত দফতর।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ‘ওয়ার্ক ওর্ডার’-ই তৈরি হয়নি সেতুর কাজের। প্রাথমিক ভাবে কোনও ঠিকাদার সংস্থা আগ্রহও প্রকাশ করেনি ওই টেন্ডারে। মেলেনি রাজ্য অর্থ দফতরের অনুমোদনও। জেলা পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শঙ্করনারায়ণ সাহা বলেন, “আমাদের তরফে যা করার তা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিটা রাজ্য স্তরে। আশা করছি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
শিলান্যাসের পরেও এই গড়িমসিতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত ভুঁইয়ার কথায়, “দীর্ঘ দিন ধরেই ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছি। শিলান্যাস হলেও এখনও শুরু হল না কাজ।” আতঙ্কে বাস চালকরাও। মেদিনীপুর থেকে হলদিয়া রুটে বাসের চালক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “এত যাত্রী নিয়ে প্রতি দিন যাতায়াত করছি। সেতুর ফাটলগুলি দেখে ভয় লাগে। গড়িমসি না করে দ্রুত সেতুর সংস্কার করা উচিত।”
রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের আশ্বাস, “সেতু তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। খুব বেশি দেরি হয়নি। দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
কিন্তু তার আগেই যদি ভেঙে পড়ে সেতু, দায় নেবে কে? জবাব মেলেনি কারও কাছে। |