মর্গ্যানের ফাটকা খেটে গেল |
ইস্টবেঙ্গল- ২ (বরিসিচ, মননদীপ-পেনাল্টি)
ওএনজিসি-১(লালমুনপুইয়া) |
তাঁর জার্সির পকেটে ‘বিল্লা নম্বর ৭৮৬’ থাকে কি না জানা নেই। তবে বুধবারের চরম নাটকীয় ম্যাচ প্রমাণ করে দিল, মর্গ্যানের চওড়া কপাল তুকতাককে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে!
ম্যাচের শুরুতে তাঁর দল পিছিয়ে পড়েছে শুনে, বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আর হোটেলে ঢোকেননি ওএনজিসি কোচ সন্তোষ কাশ্যপ। সটান রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসেন ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা পর। মিনিট তিনেকের মধ্যেই কাশ্যপের দলের কাতসুমির শট ইস্টবেঙ্গলের সাইড-পোস্টে লাগল। একটা অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে গেল। বিরতির ঠিক আগে খাবরার ব্যাকপাস গোলকিপার অভিজিৎ মণ্ডল ঘাবড়ে গিয়ে তুলে দিলেন বিপক্ষের লালমুনপুইয়ার পায়ে। তিনি ১-১ করতে ভুল করেননি।
এবং সেই যে সন্তোষ চেয়ারে বসলেন, উঠলেন একেবারে শেষ বাঁশির পরে। কোনও তুকতাক কি? থাকলেও, সেটা লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচের সামনে অকেজো হয়ে গেল! উলটে সাহেবি কপালের জোরে মর্গ্যান তাঁর দলের কার্যত সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করলেন মননদীপ সিংহের ইনজুরি টাইমের পেনাল্টি গোলে। |
জেতালেন যাঁরা: মননদীপ-বরিসিচ। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
শিল্ডের মাঝপথে মর্গ্যানকে দেখে মনে হল, তিনি উভয় সঙ্কটে! চিডি-বরিসিচরা থাকলেও, ইস্টবেঙ্গল ফরোয়ার্ড লাইন মোহনবাগানের মতো সমৃদ্ধশালী নয়। সেটা ঢাকতে বেশি মনযোগী হবেন, না শুরু থেকেই তুলনায় শক্তিশালী মাঝমাঠের দাপটে আক্রমণের ঢেউ তুলবেন? এ দিন প্রথম কৌশলটাই নিলেন। কিন্তু সেখানেও একটা বড় ফাটকা খেললেন। আর সেটাতেও উতরে গেলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। মেহতাব হোসেন শিলিগুড়িতে নেই জেনেও, পেনকে শেষ মুহূর্তে খেলালেন না। চিডি-বরিসিচকে দিয়ে শুরু করলেন। কিন্তু দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া কই? শুরুর গোলটা ফাঁকতালে পেয়ে যাওয়ার পরে আর একটাও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারলেন না বরিসিচ। মাঝমাঠ থেকে বলের সাপ্লাই না থাকায় চিডিকেও স্বমহিমায় পাওয়া গেল না। যখন বোধদয় হল যে, শুধু কেভিন লোবো-ইসফাকদের দিয়ে কাজ হবে না, তখন ম্যাচের আর পঁচিশ মিনিট বাকি। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে পেন-সঞ্জু এবং মননদীপকে নামিয়ে দিলেন মর্গ্যান। কিন্তু নিজের জেদ ছাড়লেন না। পেনকে নামালেন কিন্তু চিডিকে তুলে, বরিসিচকে রেখে। বোঝাপড়ার যে সমস্যা চিডির সঙ্গে হচ্ছিল, সেটা পেনের সঙ্গে আরও বেড়ে গেল বরিসিচের। তবে যে মননদীপের ফর্ম খারাপ বলে তাঁকে প্রথম দলে রাখেননি, সেই ‘পঞ্জাব দ্য পুত্তর’-ই অবশেষে মুখ রক্ষা করলেন লাল-হলুদ কোচের।
অযথা গোল খাওয়ার জন্য যে অভিজিতকে লাল-হলুদ সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বিরতিতে, সেই সমর্থকরাও ম্যাচ জেতার আনন্দে ক্ষমা চেয়ে নিলেন তাঁর কাছে। তবে রক্ষা পেলেন না লালরিনডিকা ও পারমিন্দর সিংহ। ম্যাচে মারামারি করার অপরাধে লাল কার্ড দেখার হাত থেকে। দু’জনকে দু’ম্যাচ সাসপেন্ড করা তো হচ্ছেই, সতর্কবার্তাও পাঠানো হতে পারে দুই ক্লাবকে। মর্গ্যান বললেন, “লালরিনডিকার দোষ প্রমাণ হলে, ওকে জরিমানা করা হবে।”
কিন্তু ম্যাচের শেষ মিনিটে যদি বিপক্ষের লালরিনমুয়ানা নিজের বক্সে হ্যান্ডবল না করতেন, তা হলে কী জবাব দিতেন মর্গ্যান সাহেব? একরাশ বিরক্তি নিয়ে উত্তর এল, “হয়নি তো? হলে ভাবা যেত!”
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, ওপারা, গুরবিন্দর, খাবরা, সৌমিক, ইসফাক (সঞ্জু), লালরিনডিকা, লোবো (মননদীপ), সুবোধ, চিডি (পেন), বরিসিচ। |