৬৫ বছরেও মেলেনি জমির পাট্টা, আদিবাসীরা বঞ্চিতই
দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরেও আদিবাসী মানুষজন জমির পাট্টা পাচ্ছেন না। মেদিনীপুরে এক কনভেনশনে এমনই অভিযোগ তুলল আদিবাসী বনবাসী অধিকার মঞ্চের দক্ষিণবঙ্গ শাখা। বুধবার বিদ্যাসাগর হলে এই কনভেনশনে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যোগ দেন। মঞ্চের আহ্বায়ক ঝর্না আচার্য বলেন, “নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পে সরকারি আধিকারিকেরা ভূমিহীন পরিবারগুলোকে জমির পাট্টা দিলেও সমস্যা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ওই ভূমিহীন ব্যক্তি যে জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন এবং চাষ করছেন, সেই জমির পাট্টা পাচ্ছেন অন্য জন। আবার যে ব্যক্তি বেশ কিছু দিন হল পাট্টা পেয়েছেন কিন্তু তা নথিভুক্ত হয়নি, সেই জমির পাট্টা নতুন করে অন্য কাউকে দেওয়া হচ্ছে।”
নিজেদের সমস্যার কথা জানালেন মঞ্চের আহ্বায়ক ঝর্না আচার্য।
সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে আগেও সংগঠন জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। সুরাহা হয়নি। ঝর্নাদেবীর কথায়, “ভূমিহীন পরিবারগুলোর জমির অধিকার বাস্তবায়িত করতে হলে শুধুমাত্র আইন করলেই হবে না। সরকারি আধিকারিকদের মানবিক হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ফের আমরা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছি।”
এ দিন নিজেদের নানা সমস্যার কথা জানান আদিবাসী মানুষেরা। নারায়ণগড়ের শম্ভু কোটালের বক্তব্য, “আমার এলাকার ৭৫টি পরিবার গত ৩৫ বছর ধরে ৩৮ বিঘা জমি চাষ করে আসছেন। কিন্তু, এই জমি সরকারি হিসেবে খাস। উচ্ছেদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বর্গা রেকর্ডের আবেদন করা হয়েছে। সুরাহা হয়নি।” ঝাড়গ্রামের গুণধর আড়ি বলেন, “৬৫ বছর ধরে বসবাসের পর ২০১০ সালে পাট্টার আবেদন করি। আজও মেলেনি।” কেশিয়াড়ির ভূপেন সিংহের বক্তব্য, “সরকারি প্রকল্পের সুফল পেতে আবেদন করেছিলাম। সমীক্ষা হয়েছে। তবে পাট্টা মেলেনি।” মঞ্চের আহ্বায়ক বলাইচন্দ্র নায়েক বলেন, “দ্রুত পাট্টা দেওয়ার দাবি আগামী দিনে আরও জোরদার আন্দোলন হবে।”
দাবিদাওয়া জানানোর মাঝেই নাচগানে মাতলেন আদিবাসীরা।
এক সংস্থার উদ্যোগে সমীক্ষা করেছেন মঞ্চের নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর ১, কেশিয়াড়ি, সাঁকরাইল, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর ১ ও ২, নারায়ণগড় এবং নয়াগ্রাম এই ৮টি ব্লকের ৬২টি গ্রামে ওই সমীক্ষা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, আদিবাসী মানুষের জমি সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমাধান খোঁজা। মঞ্চের এক নেতার বক্তব্য, “এ জেলায় আদিবাসী মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষেরও বেশি। মানবসম্পদ উন্নয়নের রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, বিনপুর ২ ব্লক এলাকাতেই জেলার সব থেকে বেশি আদিবাসীর বাস। দ্বিতীয় স্থানে নয়াগ্রাম। তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে গোপীবল্লভপুর ১ এবং কেশিয়াড়ি ব্লক। সমীক্ষা শেষে বোঝা গিয়েছে, গ্রামগুলোতে প্রচুর সমস্যা রয়েছে।” মঞ্চের দাবি, ওই ৬২টি গ্রামের মধ্যে ২০টি জঙ্গল এলাকায় রয়েছে। সেখানে বনাধিকার আইন কার্যকর করতে সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই আইন কার্যকর করার প্রথম পদক্ষেপ হল গ্রাম সভা গঠন করা এবং পরবর্তীতে বনাধিকার কমিটি গঠন করা। এই ২০টি গ্রামের একটিতেও তা হয়নি।
দেখা গিয়েছে, ৬২টি গ্রামে ১ হাজার ৮৩৩টি পরিবার রয়েছে, যাদের নামে জমি নেই। প্রায় ৬৭ শতাংশ পরিবার ভূমিহীন। এদের সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি। আবার এরমধ্যে ৮৭০টি পরিবার রয়েছে, যাদের কৃষিজমির পাট্টা নেই। অথচ, এই জমিতে ওই পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে চাষ করছে। মঞ্চের আহ্বায়ক ঝর্না আচার্য বলেন, “আমরা চাই, আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে যে জমিতে বাস করছেন, চাষ করছেন, সেই জমির পাট্টা তাঁদের কাছে থাকুক। যেখানে খাস জমি নেই, সেখানে প্রয়োজনে জমি কিনে দিতে হবে।”

রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.