নিজস্ব সংবাদদাতা • চণ্ডীতলা |
বিক্রি করা কিডনি ফের প্রতিস্থাপন করতে টাকার দরকার হয়ে পড়েছিল। এমন সময়ে বন্ধুদের ‘মগজধোলাইতে’ চণ্ডীতলার ষষ্ঠ শ্রেণির শুভজিৎ হালদারকে অপহরণ করতে রাজি হয়ে যায় প্রতিবেশী যুবক উত্তম বিশ্বাস। নিজেদের তৈরি করা ‘ক্লোরোফর্ম’ শোঁকাতে যায় বালকটির নাকে। কিন্তু অনভ্যস্থ হাতে তা করতে গিয়ে শিশিটি পড়ে যায়। চেঁচামেচি শুরু করে শুভজিৎ। তখনই জ্যাকেটের অংশ গলায় পেঁচিয়ে শুভজিৎকে মেরে ফেলে উত্তম। পরে অপহরণের গল্প ফেঁদে ৪ কোটি টাকা মুক্তিপণ চায়। পুলিশের দাবি, জেরায় এমনই জানিয়েছে উত্তম।
রবিবার পাঁচঘড়া দক্ষিণপাড়ায় উত্তমের বাড়ির পাশে খড়ের গাদা থেকে শুভজিতেরা দেহ উদ্ধার হয়। ওই রাতেই গাইঘাটা থেকে উত্তম ধরা পড়ে। অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আরও তিন যুবককে ধরেছে পুলিশ। নাম সুব্রত সরকার, ভবেশ বিশ্বাস এবং বিপুল বিশ্বাস। ধৃতেরা সকলেই অপরাধের কথা কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের বক্তব্য, সুব্রত দলের পাণ্ডা। সে এক সময়ে শুভজিতকে পড়াত।
পুলিশকে উত্তম জানিয়েছে, সে একটি কারখানায় কাজ করত। বছর কয়েক আগে মালিকের এক আত্মীয়কে একটি কিডনি বিক্রি করে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা পায়নি। পরে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় কিডনি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিল। সে কারণে যখন সে টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে, তখনই ওই তিন জন তাকে ‘টোপ’ দেয়। তাদের কাছে খবর ছিল, স্থানীয় একটি প্রকল্পে জমির দালালি করে প্রচুর টাকা পেয়েছেন শুভজিতের বাবা গোকুল হালদার এবং আরও ৩ গ্রামবাসী। গত বছরের এপ্রিল মাসে ওই চার জনের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগে অভিযোগ জমা করে ওই যুবকেরা। তারা ভেবেছিল, আয়কর দফতর হানা দিয়ে প্রচুর টাকা গোকুলবাবুদের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করবে এবং ওই টাকার ২০% তারা পাবে। কিন্তু ওই চিঠিতে কাজ না হওয়ায় তারা অপহরণের ছক কষে।
ধৃতদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে, শুভজিতকে অপহরণের জন্য উত্তমকে প্ররোচিত করত সুব্রতরা। শুভজিতকে দেখিয়ে বলত, ‘ওই দেখ তোর টাকা যাচ্ছে। অপহরণের সাহস নেই।’এ ভাবেই ক্রমে উত্তেজিত হয়ে পড়ে উত্তম। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ঘটনার দিন বিকেলেও শুভজিতকে দেখিয়ে তিন বন্ধু উত্তমকে বলে, ‘তোর দ্বারা হবে না’। বন্ধুদের টানা বিদ্রুপে অপহরণের জন্য মনস্থির করে ফেলে উত্তম। সন্ধ্যায় প্রাইভেট টিউশন থেকে ফিরে বাড়িতে ব্যাগ রেখে উত্তমের কাছে যাচ্ছিল শুভজিত। তখনই অন্ধকারে বালকটিকে চেপে ধরে সে।
খুনের পরে অবশ্য বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি উত্তমের মধ্যে। বাড়িতে গিয়ে কিছু ক্ষণ টিভি দেখে সে। মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরোয়। পরে পড়শিদের সঙ্গে ‘নিখোঁজ’ শুভজিতকে খুঁজতেও বেরোয়। পরের দিন ভোরে বাড়ি থেকে পালায়।
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সময় যত গড়াতে থাকে উত্তম বুঝতে পারে, মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। তার আগেই যেন তেন প্রকারেণ গোকুলবাবুর থেকে টাকা নিতে চাইছিল সে। সেই কারণে শেষমেষ ১ লক্ষ টাকাতেও রাজি হয়ে গিয়েছিল।”
হাওড়া, চাকদহ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, ফুলিয়া, বনগাঁ, ঠাকুরনগর এবং গাইঘাটায় গা-ঢাকা দেয় উত্তম। |