অর্থমন্ত্রী তাঁহার বাজেট ভাষণে যে ভীতির কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন, দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা রঘুরাম রাজনও তাহার কথাই বলিলেন বাণিজ্য ঘাটতি। অর্থনীতির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনায় এই বিষয়টি কিছু দিন আগে পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে কম আলোচিত ছিল। বরং রাজকোষ ঘাটতির হার অনেক বেশি গুরুত্ব পাইত। তাহার একটি কারণ, ভারত আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটিবার পর বাণিজ্য ঘাটতির হার কখনও খুব বেসামাল হয় নাই। এখন তাহাই ঘটিয়াছে। বর্তমান অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫.৪ শতাংশে ঠেকিয়াছে। এই হার অভূতপূর্ব। অর্থমন্ত্রী তাঁহার বাজেট-ভাষণে জানাইয়াছিলেন, ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করিতে এই বৎসর, সম্ভবত আগামী বৎসরেও, ৭৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হইবে। স্বল্পমেয়াদে এই ঘাটতি সামলাইবার তিনটি পথের কথা অর্থমন্ত্রী বলিয়াছেন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ঋণ। তবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ডলারের ভরসায় যে বাণিজ্য ঘাটতির ন্যায় অতি জরুরি সমস্যাকে দীর্ঘমেয়াদে ছাড়িয়া রাখা যায় না, রঘুরাম রাজন তাহা জানাইতে ভুলেন নাই।
তিনি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানসূত্রের কথা ভাবিয়াছেন আমদানির তুলনায় রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি। এই কাজটি করিতে পারিলে শুধু বাণিজ্য ঘাটতিই কমিবে না, অর্থনীতির সার্বিক স্বাস্থ্যোন্নতি হইবে। কিন্তু পন্থা ভাবা এক, আর তাহাকে বাস্তবায়িত করিতে পারা আর এক। রাজন নিজেই বলিয়াছেন, রফতানির পরিমাণ বাড়িবে কি না, তাহা অনেকাংশেই উন্নত দুনিয়ার দেশগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করিতেছে। আশার কথা, ইউরোপের অর্থনীতি সম্ভবত স্বাভাবিক অবস্থার দিকে ফিরিবে। মার্কিন অর্থনীতিও স্থিতিশীল হইতেছে। তবুও, রফতানি বাড়াইয়া বাণিজ্য ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা আশু সম্ভাবনা নহে।
পড়িয়া থাকিল আমদানি। রঘুরাম রাজন ডিজেল ভর্তুকির পরিমাণ কমাইবার উপর জোর দিয়াছেন। তাঁহার সহিত ভিন্নমত হইবার কোনও অবকাশ নাই। ডিজেল ভর্তুকি ভারতের বৃহত্তম সমস্যা। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের সহিত দেশের বাজারে ডিজেলের দামের সমতা না আসা পর্যন্ত সমস্যা কমিবে না। সমতা প্রতিষ্ঠিত হইবার পরও যদি তেলের দাম অপ্রত্যাশিত ভাবে বাড়ে, তখন ভাবা যাইবে ভর্তুকি দেওয়া যায় কি না। অর্থমন্ত্রী পেট্রোলিয়াম খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৯৬,৮৮০ কোটি টাকা হইতে কমাইয়া ৬৫,০০০ কোটি টাকা করিয়াছেন। প্রয়োজনে আরও কঠোর হইতে হইবে বইকী। সোনা আমদানিও অর্থমন্ত্রীর চিন্তার কারণ হইয়াছে। তাহার জন্য অবশ্য অর্থনীতির স্বাস্থ্য বহুলাংশে দায়ী। যত ক্ষণ অন্য বিনিয়োগগুলি যথেষ্ট লাভজনক না হইতেছে, সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ থাকিবেই। অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফিরিলে তবেই সোনার খাতে বাণিজ্য ঘাটতির দুশ্চিন্তা খানিক কমিতে পারে। |