|
|
|
|
গগৈয়ের বিরুদ্ধে জোট বাঁধছেন দলীয় বিধায়করা |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বিধানসভা চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধে জোট বাঁধলেন শাসক দলের অন্তত ১৫ জন বিধায়ক। আনুগত্য বিতর্কের জেরে বিরক্ত গগৈ আজ বলেন, “সনিয়া গাঁধীর নির্দেশ এলেই মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেব।” কেবল গগৈয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলাই নয়, তাঁদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে বলে চার কংগ্রেস বিধায়ক স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে স্পিকার প্রণব গগৈ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কার্যত বিরোধীহীন বিধানসভায়, আপাতত অন্তর্দ্বন্দ্বই কংগ্রেসকে অস্থির করে তুলেছে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর শিবির ও তাঁর বিরোধী-শিবিরের কাজিয়া বারবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বলা হচ্ছে, বিরুদ্ধে থাকা বিধায়কদের পুরোভাগে রয়েছেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গগৈয়ের বিরুদ্ধে অভিমানের জেরে হিমন্ত একবার পদত্যাগও করেন। তবে দিল্লির নির্দেশে তখনকার মতো মিটমাট হয়। কিন্তু ছাইচাপা আগুনের মতোই দলের ভিতরে তরুণ গগৈয়ের বিরোধীরা জোট বাঁধতে থাকেন। বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার পর তরুণ গগৈ ও এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলের ‘মিত্রতার ইঙ্গিত’ নিয়ে সরাসরি মুখ খোলেন হিমন্ত। তিনি বলেন, “আমরা কোনও মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মেলাব না।” এরপর সচিবালয়ে, নিজের ঘরে ১৫ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ বলে চিহ্নিত বিধায়কের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। যদিও তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনার জন্যই আমাদের কথা হয়েছে।” কিন্তু কিসের কর্মপন্থা তা বিশদে ব্যাখ্যা করেননি হিমন্ত। আজ তরুণ গগৈ সাফ বলেন, “এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে মিত্রতার বিষয়ে এআইসিসি কমিটি গড়েছে। এ নিয়ে হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কারও কোনও বক্তব্য থাকতেই পারে। তবে তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।” গগৈয়ের সাফ কথা, “পঞ্চায়েত ভোটে এআইইউডিএফ-এর শক্তি দেখা গিয়েছে। তাই লোকসভায় একসঙ্গে লড়লে ভাল ফল হবে। না হলে দলেরই লোকসান।”
কেবল এআইইউডিএফ প্রসঙ্গই নয়, ‘বিক্ষুব্ধ’ ১৫ জন বিধায়ক রাজ্য সরকারের সামগ্রিক কজকর্মের নিন্দায় সরব। সাংবাদিকদের তাঁরা জানান, যে পদ্ধতিতে তরুণ গগৈ সরকার চালাচ্ছেন তা তাঁদের না-পসন্দ। বাজেট অধিবেশনের পরে মন্ত্রিসভা, পরিষদীয় সচিবদের পদ ও বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মে অদল-বদল না ঘটালে তাঁরা আরও বড় আন্দোলনে নামবেন। পরিষদীয় সচিব চন্দন সরকার ও জয়ন্তমল্ল বরুয়া বলেন, “আমরা তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধাচরণ করার স্পর্ধা দেখাচ্ছি না। কিন্তু সরকার যেভাবে চলছে তাতে অধিকাংশ বিধায়কই খুশি হতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী কেবল তাঁর অনুগতদের কথা শুনেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু আমরাও নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদেরও সমান অধিকার রয়েছে। সরকার চালাবার ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্যকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না।” গগৈ এই অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে বলেন, “১৯৫২ সাল থেকেই এই ঘটনা চলছে। গণতান্ত্রিক দলে সকলকে খুশি করে চলা যায় না। প্রত্যেকের নিজস্ব মত থাকতে পারে। যদি ১০ জন বিধায়কও সনিয়া গাঁধীর কাছে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান, আমি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।” অন্য দিকে, ফোন ট্যাপের অভিযোগ নিয়ে, গগৈ বিরোধী শিবিরের জয়ন্তমল্ল বরুয়া, পল্লবলোচন দাস, পরিষদীয় সচিব রেকিবুদ্দিন আহমেদ, যুব কংগ্রেস সভাপতি পীযূষ হাজরিকা স্পিকারের কাছে আজ লিখিত অভিযোগ জমা দেন। স্পিকার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ সব মিথ্যা অভিযোগ। আমার আমলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে।” |
|
|
|
|
|