ফিরেই রাহুলকে বিঁধলেন মানিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজ্যবাসী জবাব দিয়েছেন ভোটযন্ত্রেই। এ বার জবাব দিলেন নিজে। দেশের একমাত্র বামশাসিত রাজ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের শপথ নেওয়ার পর।
ত্রিপুরায় প্রচারে গিয়ে গোটা দেশ থেকে বামেদের উৎখাত করার ডাক দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বলেছিলেন, “কেরল, বাংলা থেকে মানুষ বাম সরকারকে সরিয়ে দিয়েছেন। ত্রিপুরা থেকেও সরিয়ে দিতে হবে।” মানিক সরকার সে সময় এর কোনও জবাবই দেননি। কিন্তু বিপুল আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরার পর সেই আক্রমণ ফিরিয়ে দিলেন তিনি। রাহুলের ওই মন্তব্যকে ‘অপরিণত’ আখ্যা দিয়ে মানিকের দাবি, “ত্রিপুরার মানুষ এই অপরিণত মন্তব্যকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করেননি। বরং তাঁরা ওঁকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।” সিপিএমের দলীয় ইংরেজি মুখপত্র ‘পিপল্স ডেমোক্র্যাসি’-র আগামী সংখ্যায় মানিকবাবুর একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হতে চলেছে। সেখানেই রাহুলকে বিঁধেছেন তিনি।
ভোটের আগে রাহুলের প্রচারসভার দিনই আগরতলায় সাংবাদিক বৈঠক ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে মানিকবাবু শুধু বলেছিলেন, “রাহুল রাজ্যের অতিথি। ভাল ভাবে দলীয় কাজ করে ফিরে যান।” কিন্তু বামেরা যে ত্রিপুরায় শক্ত জমিতেই দাঁড়িয়ে, টানা পাঁচ বার সরকার গঠনেই তা প্রমাণ হয়েছে। এর পরে রাহুলকে যথোচিত জবাব দিতে ছাড়েননি মানিকবাবু। তাঁর বক্তব্য, “জাতীয় স্তরের একটি দলের সহ-সভাপতির মুখে গোটা দেশ থেকে বামেদের উৎখাত করার কথা অপরিণত মন্তব্য ছাড়া কিছুই নয়।” |
|
চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ত্রিপুরার সচিবালয়ের পথে মানিক সরকার। বুধবার, আগরতলায়। |
মানিকবাবুর আক্রমণের জবাবে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনও পাল্টা মন্তব্যে যেতে নারাজ। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ত্রিপুরার ভোটপ্রচারে গিয়ে রাহুল যা-ই বলে থাকুন, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড জাতীয় স্তরে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলাই রাখতে চাইছে। অতীতের মতো ২০১৪ সালেও বামেদের সমর্থন নিয়ে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ত্রিপুরার রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের আক্রমণ ঠিকই ছিল। প্রত্যাশিত মানিকবাবুর পাল্টা আক্রমণও। সাম্প্রতিক নির্বাচনী সাফল্যে দলে মানিকবাবুর গুরুত্ব বাড়ছে। তাই কংগ্রেসকে আক্রমণই হোক বা সিপিএমের বিকল্প নীতি দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রশ্ন মানিকবাবু এখন প্রকাশ কারাটের অন্যতম বাজি। ত্রিপুরার নির্বাচন নিয়ে নিবন্ধে তাই নিজ রাজ্যে বামেদের বিকল্প নীতির সাফল্যই তুলে ধরেছেন মানিকবাবু। সিপিএমের ‘সংঘর্ষ সন্দেশ জাঠা’-র শেষে ১৯ মার্চ জনসভা হবে দিল্লির রামলীলা ময়দানে। সেখানেও অন্যতম বক্তা মানিক সরকার। |
|
শপথ নেওয়ার পর রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিলের সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার
ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বুধবার আগরতলায়। |
দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস ও বিজেপি-র থেকে সিপিএমের পৃথক বিকল্প নীতি তুলে ধরার পাশাপাশি মনমোহন সরকারের উদার নীতিকেও আক্রমণ করবেন তিনি। দলীয় মুখপত্রের নিবন্ধেই সেই ইঙ্গিত দেন মানিকবাবু। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতিতে আর বিশ্বাস করেন না ত্রিপুরার মানুষ। স্বাধীনতার পরে ৫৫ বছর কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে। নেহরু থেকে মনমোহন সিংহের জমানা পর্যন্ত আম জনতার মন জিততে কংগ্রেস যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কোনও বারই তা পূরণ করেনি। ত্রিপুরাতেও তারা টানা ২৭ বছর ক্ষমতায় ছিল। তার পরেও পাঁচ বছর ছিল কংগ্রেস জোটের সরকার। প্রতিটি নির্বাচনের আগে তারা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কাজ হয়েছে তার উল্টো।
|
ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
|