|
|
|
|
উত্তরপ্রদেশে ডিএসপি হত্যা |
রাজা ভাইয়া এখনও অধরাই, প্রবল চাপে অখিলেশ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পাঁচ দিন কেটে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ডিএসপি জিয়া উল হকের হত্যা নিয়ে সারা দেশ উত্তাল। অথচ রাজ্যের প্রভাবশালী প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে টুঁ শব্দটি করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। আর বুধবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নিহত ডিএসপি-র ময়না-তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করলেও, তা নিয়ে রয়ে গেল অনেক প্রশ্নই।
কুন্দায় জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে খুন হন পঞ্চায়েত প্রধান নানহে যাদব ও তাঁর ভাই। গত শনিবার সেখানেই তদন্ত করতে যান ডিএসপি জিয়া উল হক। উত্তেজিত জনতা তখন তাঁকে ঘেরাও করে। তার পর ভিড়ের মধ্যে থেকেই গুলি করা হয় তাঁকে। এই ঘটনায় যে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন এখনও অধরা।
খুনের পরেই ডিএসপি-র স্ত্রী পরভিন আজাদ সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন কুন্দার প্রভাবশালী বিধায়ক রাজা ভাইয়ার বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনা যে সপা ঘনিষ্ঠ এই নির্দল বিধায়কের নির্দেশেই হয়েছে, সারা দেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে তা খুলে বলেন পরভিন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও করেন নিহত ডিএসপি-র স্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের চাপে গত সোমবার মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন রাজা ভাইয়া। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তাঁকে গ্রেফতার করা তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করেনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। |
|
নিহত ডিএসপি-র স্ত্রী পরভিন আজাদ |
যদিও তাতে দমেননি পরভিন। মাত্র এক বছর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর অকাল-মৃত্যুতে ভেঙে না পড়ে, দোষীদের বিরুদ্ধে যেন লড়ার পণ নিয়েছেন পরভিন। তাঁর স্বামীর ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও গলদ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, একটা নয়, ডিএসপিকে মোট তিনটি গুলি করা হয়েছিল। আর তার আগে তাঁকে প্রচণ্ড মারধরও করা হয়। মেডিক্যালের ছাত্রী পরভিনের দাবি, জিয়া উল হকের পায়ে একটি গুলি করা হয়েছিল, যাতে তিনি পালাতে না পারেন। পরে আরও দু’বার গুলি করা হয়। আর তাঁর স্বামীর মাথায় এমন ভাবে আঘাত করা হয়েছিল, যে কবর দেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। পরভিনের প্রশ্ন, শুধুমাত্র গুলি করলে কোনও মানুষের মাথা থেকে এত রক্তক্ষরণ হয় কী করে?
তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পরভিনের বক্তব্য একেবারেই সমর্থন করছে না। উত্তরপ্রদেশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) আজ ময়না-তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করে স্পষ্ট জানিয়েছেন, মাত্র একটি গুলিই করা হয়েছিল ওই ডিএসপি-র পিঠে। তবে সেই বুলেটের খোঁজ এখনও মেলেনি। উত্তর মেলেনি আরও বেশ কিছু প্রশ্নের। ঘটনার পর থেকেই ডিএসপি-র সার্ভিস রিভলভারটি গায়েব। নিজের সার্ভিস রিভলভারেই কি তবে খুন হয়েছেন ওই ডিএসপি? বুলেট না মেলা পর্যন্ত সেই উত্তরও জানা যাচ্ছে না। পরভিনের আরও দাবি, প্রতাপগড়ের ডিএসপি হয়ে আসার পর থেকেই চাপে থাকতেন তাঁর স্বামী। স্ত্রীকে মাঝে-মধ্যে সে কথা তিনি বলেও ফেলতেন। পরভিনের কথায়, “রাজা ভাইয়া তো কুন্দার অলিখিত সম্রাট। আমার স্বামীর তো তাঁকে নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। ওর শুধু একটাই দোষ ছিল, ও রাজা ভাইয়ার দরবারে মাথা নোয়াতে যেত না।” বলাই বাহুল্য, পরভিনের এই ইঙ্গিত কতটা তাৎপর্যপূর্ণ।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার আজ উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। এবং কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়েছে, দোষীরা যাতে কোনও ভাবেই ছাড়া না পায়, তা-ও সুনিশ্চিত করতে হবে অখিলেশে যাদবের সরকারকে। উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু করেছেন। রাজ্যপাল বি এল জোশীর কাছে আজ এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে কংগ্রেস। মুখ খুলেছেন মায়াবতীও। তাঁর কথায়, “গোটা ঘটনায় রাজা ভাইয়াকে আড়াল করার চেষ্টা করছে এই সরকার।” এরই মধ্যে আজ খুন হওয়া পঞ্চায়েত প্রধান নানহে যাদবের বাড়ি যান অখিলেশ। আর সেখানও রাজা ভাইয়াকে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। প্রবল চাপের মুখে অখিলেশ শুধু বললেন, “ডিএসপি খুনের ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।” রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী রাজা ভাইয়া ওরফে রঘুরাজ প্রতাপ সিংহকে কি তা হলে গ্রেফতার করা হবে না? অখিলেশকে করা সাংবাদিকদের প্রশ্ন এ বার প্রায় ছিনিয়ে নিলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ আজম খান। বললেন, “একটু সবুর করুন।” |
|
|
|
|
|