|
|
|
|
‘মেষ মনমোহনের’ জবাব |
কবিতা-কটাক্ষে অচেনা আগ্রাসন প্রধানমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিরোধীরা নিয়মিতই তাঁকে কটাক্ষ করেন ‘দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী’ বলে। ব্যক্তিগত আক্রমণেও নামেন। তিনি, মনমোহন সিংহ সচরাচর জোরালো প্রতি-আক্রমণে যান না। কিন্তু আজ সংসদের যৌথ অধিবেশনে নজিরবিহীন আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গেল সেই মনমোহনকেই। যিনি কখনও কবিতার উদ্ধৃতিতে বিঁধলেন বিজেপিকে, কখনও কটাক্ষ করলেন খোদ লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। বিরোধীদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে গত বারের ফলাফলেরই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। বিজেপি যখন নরেন্দ্র মোদীকে বকলমে কাণ্ডারী করে লোকসভার লড়াইয়ে নামতে চলেছে, তখন রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাবি ভাষণের মাঝে মনমোহনের এই চেহারা তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে অনেকেরই।
এর আগে জবাবি বক্তৃতার বিতর্কে বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের ত্রুটি রাখেননি। সম্প্রতি কর্মসমিতির বৈঠকের মঞ্চ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপি নেতারা। মোদী বলেছিলেন, মনমোহনকে নৈশপ্রহরী রেখেছেন সনিয়া। প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হলে বরং ভাল হত।
এই পটভূমিকায় আজ আক্রমণাত্মক মনমোহন। কোন মনমোহন? যাঁকে দুর্বল বলেই থামেনি বিজেপি, উল্লেখ করেছিল ‘মেষ মনমোহন’ বলে। আজ সেই কটাক্ষেরই জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। বলেছেন, গত লোকসভা ভোটেই বোঝা গিয়েছিল সব। তখন ‘মেষ মনমোহন’-এর বিরুদ্ধে দলের ‘লৌহপুরুষ’কে যুদ্ধে নামিয়েছিল বিজেপি। সেই ভোটের ফলাফল কী হয়েছিল, দেশ জানে। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।
এটুকু বলেই আক্রমণ শেষ করেননি মনমোহন। আরও বলেন, “আমি ওঁদের মতো ভাষা ব্যবহার করব না। তবে কথায় আছে, যত গর্জায় তত বর্ষায় না। বিজেপির ভারত উদয় প্রচারের কী পরিণতি হয়েছিল সকলেরই জানা।” এই প্রসঙ্গেই তাঁর উর্দু কবিতার অবতারণা “হামকো নেহি ওয়াফা-কা উমিদ, জিনকো মালুম নেহি ওয়াফা কেয়া হ্যায়!”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রধানমন্ত্রী যখন ‘লৌহপুরুষ’ বলে আডবাণীকে কটাক্ষ করেন, তখন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তবে মনমোহনকে সহসা আগ্রাসী হতে দেখে বিজেপি নেতারা মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করেন। আর উল্টো দিকের ট্রেজারি বেঞ্চে বসে সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেস সাংসদরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।
তবে বিজেপিও রণে ভঙ্গ দিতে চায়নি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষ হতেই উর্দু কবিতায় তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর মন্তব্য, “কথায় বলে, কবিতার ঋণ রাখতে নেই। তাই আমি একটি কবিতা বলতে চাই কুছ তো মজবুরিয়া রহি হোগি, নেহিতো কোই বেওয়াফাই নেহি করতা।”
অনেকের মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আসলে বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপির অসহযোগিতা, সুষ্ঠু ভাবে সংসদ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা না রাখার মতো বিষয়গুলিকেই কবিতা দিয়ে বিঁধেছেন। তাই বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাসের মর্ম বোঝে না, তাদের কাছ থেকে আমি বিশ্বাস আশা করি না।’ আর সুষমা বলতে চেয়েছেন, তাঁদের কিছু তো বাধ্যবাধকতা ছিলই, নইলে কেনই বা ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করতে যাবেন!
সুষমা বরং অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীই দেশের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন। তবে মনমোহনের অচেনা চেহারা তাঁদের যে ভাবিয়েছে, তা বিজেপি নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। সভাপতি রাজনাথ সিংহ যেমন বলেন, “গত ন’বছরে প্রধানমন্ত্রীকে এতটা আগ্রাসী ভূমিকায় কখনও দেখিনি। এখন সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রহরে প্রধানমন্ত্রীর এই মূর্তি দেখে একটা কথাই মনে পড়ছে যে, প্রদীপ নেভার আগে দপ করে জ্বলে ওঠে।” আবার সংসদের বাইরে বিজেপি নেতারা এ-ও বলতে শুরু করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর পদ তাঁর অগ্রাধিকার নয় বলে রাহুল গাঁধী
মন্তব্য করার পরেই আজ তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন মনমোহন। প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে তার্কিক লড়াইও সমান তালে চালিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মনমোহন। বলেছেন, এনডিএ এবং ইউপিএ জমানার তুলনা করলেই মানুষ বুঝতে পারবে কারা দেশের ভাল করেছে। এনডিএ জমানায় বৃদ্ধির হার কখনও ৬ শতাংশ পার হয়নি। কিন্তু ইউপিএ আমলে গড় বৃদ্ধির হার হল ৭.৯ শতাংশ। শিল্পে বৃদ্ধি, দারিদ্রের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও ইউপিএ অনেক এগিয়ে বলে দাবি করেন প্রত্যয়ী মনমোহন। |
|
|
|
|
|