|
|
|
|
নির্মাণের দিশা নেই, সেতুভঙ্গের উৎস সন্ধানে জোর |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
জখম রোগী শয্যাশায়ী চোখের সামনে। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে তাকে দাঁড় করানোর গরজ কারও নেই। কেন সে অসুখে পড়ল, তা নিয়েই জল্পনা চলছে।
বিমানবন্দর থেকে মহানগরী কলকাতায় ঢোকার অন্যতম প্রধান প্রবেশপথের ধারে উল্টোডাঙা উড়ালপুল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রয়েছে তিন দিন হয়ে গেল। কী ভাবে সেটা ফের খাড়া করা হবে, এখনও তার দিশা মেলেনি। বরং কী ভাবে সেতু ভাঙল, তারই চুলচেরা বিশ্লেষণের অপেক্ষায় রয়েছে প্রশাসন। পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “ব্রিজের কোথায় গলদ ছিল, বিশেষজ্ঞেরা তা না-বললে আমাদের এগোনোর উপায় নেই।” মহাকরণের কর্তারা অবশ্য মানছেন, নগরীর প্রবেশমুখে ধরাশায়ী সেতুর দৃশ্য রাজ্যের ভাবমূর্তির পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয়। কিন্তু তাঁদের দাবি, আপাতত সেতুভঙ্গের কারণ খোঁজাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এবং সেই কাজের ভার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষকের উপরে ন্যস্ত করেছে রাজ্য। পাশাপাশি আইআইটি খড়্গপুরের শিক্ষকেরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ‘কেস-স্টাডি’ হিসেবে উড়ালপুল-পতনের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। তাঁদেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বুধবার নগরোন্নয়ন-সচিব দেবাশিস সেনের নেতৃত্বে গড়া হয়েছে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি, যারা গোটা নির্মাণ-প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে যাচাই করবে, কোথাও কোনও অনিয়ম হয়েছিল কি না। সুপারিশ করবে, ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রুখতে কী করণীয়। দু’মাস বাদে কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার কথা। |
|
তদন্তের পর তদন্ত, কমিটির পর কমিটি। বস্তুত যে কোনও ঘটনা-দুর্ঘটনার পরে এমন নানা কিসিমের কমিটির বাড়বাড়ন্ত রাজ্য দেখে আসছে। কমিটির সুপারিশে কে কী ব্যবস্থা নেন, বাস্তব কত দূর পাল্টায়— সচরাচর তার জবাবও মেলে না। ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে অন্তত তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতি শুরু করা যেতে পারত। এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ দিন মার্কিন মুলুকে উড়ালপুলের কাজে হাত-পাকানো স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার অলোক সরকারের মনে পড়ে যাচ্ছে, ম্যানহাটনে ওয়েস্টসাইড হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে কী ভাবে ক’ঘণ্টায় একটি বিগড়ে যাওয়া বেয়ারিং পাল্টেছিলেন। কিংবা কী ভাবে নিউ ইয়র্কের কনকনে ঠান্ডায় রাতভর খেটে দু’মাইল লম্বা ফ্লাইওভারের গার্ডার পাল্টানো হয়েছিল। “সরকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পতনের কারণ খুঁজছে, ভাল কথা। ভাঙা সেতু সারানোর কথাটাও একই সঙ্গে ভাবুক না!” মন্তব্য অলোকবাবুর।
কিন্তু তড়িঘড়ি উড়ালপুল পুনর্গঠনে নামতে মহাকরণ দ্বিধায় ভুগছে। এক সরকারি কর্তা বলছেন, “মাথা খারাপ! যা ঘটল তার পরে আর কখনও কোনও সেতু নিয়ে তাড়াহুড়ো করব না। উল্টোডাঙায় তো নয়ই!” উপরন্তু তাঁর অভিযোগ, ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে যাতে উড়ালপুলটির উদ্বোধন করা যায়, সে জন্য তদানীন্তন রাজ্য সরকার নির্মাতা সংস্থার উপরে রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করেছিল।
নির্মাতা ম্যাকিনটস বার্নের কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগটি মানেন না। উল্টে তাঁদের দাবি, উপকরণের গুণগত মান ঠিক রাখতে গিয়ে কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছিল। “সেল-এর থেকে সেরা ইস্পাত কেনার প্রক্রিয়ায় বাড়তি চার মাস লেগে যায়।” জানাচ্ছেন সংস্থার এক কর্তা। বাম জমানায় উড়ালপুলটির নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকা এক প্রশাসনিক কর্তারও দাবি, নির্মাণের মান নিয়ে আপস করা হয়নি। তাঁর বক্তব্য, “জেএনএনইউআরএমে প্রকল্পটির জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৩ কোটি টাকা। রাজ্যকে দিতে হচ্ছিল ২৫ কোটি। মোট ওই ৩৮ কোটিতে যে উড়ালপুল বানানো অসম্ভব, তা বুঝেই নাগরিক-স্বার্থে তৎকালীন সরকার ৬৮ কোটি টাকা ধার্য করে।”
মহাকরণের বর্তমান কর্তারা এই প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে যাবতীয় খুঁটিনাটি দিক বিশ্লেষণ করছেন। নির্মাতার রিপোর্টও নিয়েছেন। এ দিন মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ম্যাকিনটস বার্ন আমাকে রিপোর্ট দিয়েছে। আমি তা উচ্চতর পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
অর্থাৎ, কাটা-ছেঁড়া চলছেই। কিন্তু সেটাও যথাযথ ভাবে হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। যেমন, যাদবপুরের বিশেষজ্ঞেরা এখনও কেএমডিএ-র কাছ থেকে সেতুর নক্শা পাননি। প্রশ্ন উঠছে, তদন্তে পেশাদার ইঞ্জিনিয়ারদের কেন কাজে লাগানো হল না? মহাকরণের এক প্রাক্তন আধিকারিকের অবশ্য যুক্তি, “সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। তাই যাদবপুর বা আইআইটি’র মতো
প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানকে ধরে এগোতে হবে। নচেৎ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে।”
|
কমিটি-কথা |
নাম |
দায়িত্বে |
খুঁজবে |
মেয়াদ |
তদন্ত কমিটি |
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় |
পতনের কারণ |
অনির্দিষ্ট |
অনুসন্ধান কমিটি |
নগরোন্নয়ন দফতর |
নির্মাণে অনিয়ম |
২ মাস |
উপদেষ্টা দল |
আইআইটি (খড়্গপুর) |
কী ভাবে দুর্ঘটনা |
অনির্দিষ্ট |
|
|
|
|
|
|