পাচারের মার্বেলে পাড়ায় ‘প্রস্তর যুগ’, পাত্তাহীন পুলিশ
ল্টোডাঙায় উড়ালপুল দুর্ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থল দেখভালের দায়িত্ব যৌথ ভাবে কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের উপরে ছিল। কিন্তু তেরাত্তির না পোহাতেই বুধবার সকালে দেখা গেল, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ উধাও। আর সেই সুযোগে দিনভর উল্টে পড়া ট্রাকের আশপাশে পড়ে থাকা মার্বেলের টুকরো নিয়ে চলে গেলেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, ভাঙা ট্রাকের যন্ত্রাংশও একটু একটু করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ভাঙা স্তম্ভের কাছে বিপজ্জনক জায়গায় যেখানে নিরাপত্তার কারণে এত দিন ধরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল, সেখানেও অনেকে ঢুকে পড়ে দেদার ছবি তুলেছেন। অতি উৎসাহীরা ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়ার চেষ্টা করেছেন খালে পড়ে থাকা ভাঙা ডেকে। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি এখনও ঘটনাস্থলে আসছে, যেখানে নমুনা সংগ্রহ এখনও শেষ হয়নি, সেখানে সাধারণ মানুষ এত অবাধে কী ভাবে ঢুকে পড়ছে? আর কেনই বা উঠে গেল পুলিশ-প্রহরা?
এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ দেখা গেল, দুই কিশোর নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে চলে এসেছে দুর্ঘটনার মূল জায়গায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকের আশপাশে পড়ে থাকা টুকরো টুকরো মার্বেল একটি বস্তার মধ্যে তুলে নিচ্ছে তারা। কয়েক জন আবার ভাঙা ট্রাকের বাইরে পড়ে থাকা স্ক্রু বা নাটবল্টুও পকেটে পুরছে। এগুলো নিয়ে কী করবে, প্রশ্ন করতেই ওরা উধাও খালপাড় দিয়ে।
এ ভাবেই পাচার হয়ে যাচ্ছে দামি মার্বেল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
শুধু মূল ঘটনাস্থলেই নয়, গত তিন দিন ধরে ভি আই পি রোড ও স্লিপ রোডের সংযোগস্থলেও পুলিশ মোতায়েন ছিল। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কারণেই পুলিশ স্লিপ রোডের ফুটপাথে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না।
কিন্তু এ দিন সকাল দশটা থেকে ওই স্লিপ রোডেও কোনও পুলিশের দেখা মেলেনি। ভি আই পি রোডের খালপাড়ের ধারে দড়ি দিয়ে করা নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে অনায়াসেই ঢুকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মূল ঘটনাস্থলে ঢোকার গেটে ব্যারিকেড থাকলেও পুলিশ ছিল না।
এত দিন ওই ব্যারিকেডের ভিতর দিয়ে মূল ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি ছিল শুধু বিশেষজ্ঞের দল ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। এ দিন দুপুর থেকে দেখা গেল, ওই ব্যারিকেড সরিয়ে দলে দলে লোক ঢুকছে। মূল ঘটনাস্থলে ঢুকে কেউ একেবারে সোজা ডেকে ওঠার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার ঘটনাস্থল থেকে ‘স্মৃতি’ নিয়ে যাওয়ার জন্য টুকরো টুকরো জিনিস পকেটে পুরছেন। জনাকয়েক স্কুলছাত্র মার্বেলের টুকরো নিয়ে খালের জলে ছুড়ে খেলছে। দেখা গেল, ভেঙে পড়ে থাকা ট্রাকের পিছনের লোহার পাতের একটি অংশ উধাও। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, এখনও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন। তাই ভেঙে যাওয়া উড়ালপুলের ডেক ও ট্রাক সরানো হচ্ছে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেল, গত তিন দিন ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তা ও মূল ঘটনাস্থলে ঢোকার গেটে দায়িত্বে ছিল কলকাতা পুলিশ ও মূল ঘটনাস্থলের দায়িত্বে ছিল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। তবে বুধবার সকাল থেকে যে ঘটনাস্থলে পুলিশ নেই, তা জানেনই না পুলিশকর্তারা। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসি কৃষ্ণকলি লাহিড়ী বলেন, “মূল ঘটনাস্থলের ভিতরে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের থাকার কথা। কেন নেই, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাস্থলের সামনে থেকে পুলিশ ফোর্স এখনও তোলা হয়নি। পুলিশ তো থাকার কথা। খোঁজ নিচ্ছি।”
পুলিশ কেন নেই, এ ব্যাপারে পুলিশকর্তাদের কাছে খোঁজ নেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য দেখা গেল পুলিশ চলে এসেছে ঘটনাস্থলে। কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ যৌথ ভাবে ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছে। ততক্ষণে অবশ্য বেলা গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা বিকেল চারটে ছুঁয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.