|
|
|
|
পরীক্ষা হবে আরও দুই উড়ালপুল |
অশোক সেনগুপ্ত |
উল্টোডাঙার ভেঙে পড়া উড়ালপুলের নকশা তৈরি করেছিল একটি সংস্থা। অন্য একটি সংস্থা ছিল উড়ালপুলটির নির্মাণের দায়িত্বে। কলকাতায় সম্প্রতি চালু হওয়া খিদিরপুর ও নাগেরবাজার উড়ালপুলের নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত ছিল এই দুই সংস্থা। তাই ওই দু’টি উড়ালপুলেরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করছে রাজ্যের সংস্থা ‘হুগলি রিভারব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি)।
এইচআরবিসি-র কর্তারা জানিয়েছেন, নাগেরবাজারের উড়ালপুলটির নকশা তৈরি করে ‘কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’ (সিইএস)। খিদিরপুর উড়ালপুলটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ‘ম্যাকিনটশ বার্ন’। এই দু’টি সংস্থাই উল্টোডাঙার ভেঙে পড়া উড়ালপুলটির নকশা তৈরি ও নির্মাণের দায়িত্বে ছিল। তাই নাগেরবাজার ও খিদিরপুরে উড়ালপুল দু’টি কতটা নিরাপদ, তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সুরক্ষার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতেও।
বাম আমলে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের অধীন এইচআরবিসি কলকাতায় ছ’টি উড়ালপুল তৈরি করিয়েছে। এগুলি হল গড়িয়াহাট (২০০২), এ জে সি বসু রোড (২০০৩), লক গেট (২০০৪), পার্ক স্ট্রিট (২০০৫), খিদিরপুর (২০০৭) এবং নাগেরবাজার (২০১২)। উল্টোডাঙার বিপর্যয়ের পরে সংস্থার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা তাঁদের নির্মিত এই প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনায় বসেন। সংস্থার চেয়ারম্যান কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় দিল্লি থেকে বলেন, “আমাদের তত্ত্বাবধানে তৈরি সেতুগুলোর নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।” |
 |
নাগেরবাজার |
কী সেই ব্যবস্থা? এক দশক ধরে এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, “যেহেতু নাগেরবাজারের নকশা করেছে সিইএস এবং খিদিরপুরের কাজটা করেছে ম্যাকিনটশ বার্ন, তাই এ দু’টি আমরা বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখব।” কারা করবে এই সমীক্ষা? সাধনবাবু বলেন, “আমাদের ২৮ জন ইঞ্জিনিয়ার আছেন। প্রয়োজনে বাইরের কিছু অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকেও নেওয়া হবে।”
দুই উড়ালপুলে কী কী সতর্কতা নেওয়া হবে? এইচআরবিসি জানিয়েছে, দু’টি সেতুতে ব্যবহৃত বেয়ারিং-সহ অন্য যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। নাগেরবাজার উড়ালপুলে একটি বাঁক আছে। সেখান দিয়ে যাতে গাড়ি জোরে না চলতে পারে, তাই প্রথমে বাঁক সংলগ্ন রাস্তায় ‘রাম্বল স্ট্রিপ’ (ছোট একগুচ্ছ গতি-নিয়ন্ত্রক) করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, ওখান দিয়ে ভারী গাড়ি যাওয়ার সময়ে একটা কম্পন তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তির ভাষায় একে বলে ‘ডিফ্লেক্শন’। এতে সেতুর উপরে সামান্য বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছিল। এই চাপ এড়াতে ‘রাম্বল স্ট্রিপ’ তুলে দেওয়া হয়েছে। গাড়ির গতি সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা যাতে অত্যন্ত কঠোর ভাবে রূপায়িত হয়, সে জন্য পুলিশকে ওই বাঁকের দু’পাশে সিসিটিভি বসানোর আর্জি জানানো হবে।
কবে থেকে শুরু হবে সমীক্ষা? সাধনবাবু বলেন, “শুক্রবার কল্যাণবাবু দিল্লি থেকে ফিরছেন। তাঁর সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হবে।”
সিইএস-এর নকশায় তৈরি হচ্ছে এ শহরের দীর্ঘতম পার্ক সার্কাস-ইএম বাইপাস উড়ালপুলটিও। যার সবচেয়ে বড় বাঁকটি বাইপাস সংযোগস্থলে। প্রকল্পের ৯০ শতাংশ ‘গার্ডার’ বসানো হলেও, ওই বাঁকে এখনও তা বসানো হয়নি। কেন? কেএমডিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সমর সরকার বলেন, “এ মাসেই ওই গার্ডার বসানোর কথা। রাস্তা থেকে ওই অংশটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। বাঁকের ব্যাস ১৪০ মিটার।” তাঁর দাবি, এর জন্য যথেষ্ট সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। |
 |
খিদিরপুর |
এইচআরবিসি-র তৈরি দ্বিতীয় হুগলি সেতুর বয়স হল ২১ বছর। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার। সংযোগকারী (অ্যাপ্রোচ) পথ হাওড়ার দিকে ৯ কিলোমিটার, কলকাতার দিকে ৭.২ কিলোমিটার। বছর সাত আগে ওই সেতুর উপর দিয়ে দিনে ৩০ হাজার গাড়ি চলত। এখন চলছে ৭০ হাজার। নদীর দু’ধারে প্রায় ৩০ মিটার উঁচু চারটি স্তম্ভ। এর সঙ্গে ৯০ মিটার দীর্ঘ ১২৮টি ‘কেব্ল’ সেতুটিকে উপরে টেনে রেখেছে। এটির সতর্কতা কী ভাবে নেওয়া হচ্ছে? এইচআরবিসি-কর্তারা বলেন, “এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির জন্য প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তবে, বাড়তি সতর্কতার জন্য এর সংবেদনশীল অংশগুলো ফের ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে।” |
|
|
 |
|
|