|
|
|
|
চাভেসের টানে ছুতমার্গ ফেলে পথে সব বাম দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
আট বছর আগের এক বসন্তে তাঁর জন্য রাস্তায় নেমেছিল কলকাতা। আট বসন্ত পরে আবার তাঁরই জন্য পথে সেই শহর। উচ্ছ্বাস শুধু বদলে গিয়েছে শোকে।
ভেনেজুয়েলার সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্ট উগো চাভেসের স্মরণে বুধবার বিকালে অন্য রকম শোকমিছিল দেখল কলকাতা। যেখানে সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের সবক’টি দলের সঙ্গে পা মেলাল নকশালপন্থী সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। ছুৎমার্গ ঝেড়ে ফেলে তাদের সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটল এসইউসি-ও। বাবরি ধ্বংসের প্রতিবাদের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে হাতে-গোনা কয়েকটা উপলক্ষ ছাড়া নানা শিবিরের বামপন্থীদের এ ভাবে একজোট হতে দেখেনি এ শহর। যা করে দেখালেন প্রয়াত চাভেস!
কয়েক ঘণ্টার নোটিসে ধর্মতলার লেনিন মূর্তি থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মৌনী মিছিলে লোক হয়েছিল ভালই। বামফ্রন্টের ১০টি দলের সঙ্গে লিবারেশন, এসইউসি এবং বলশেভিক পার্টি। মদন ঘোষ, রবীন দেবদের সঙ্গে ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, মঞ্জুকুমার মজুমদার, হাফিজ আলম সৈরানি এবং তাঁদের পাশাপাশিই লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পার্থ ঘোষ, এসইউসি-র সৌমেন বসুরা লেনিন সরণি হয়ে ওয়েলিংটন ঘুরে কলেজ স্ট্রিট ধরে গাড়ি-ঘোড়া স্তব্ধ করে রেখে হাঁটলেন ‘ইন্টারন্যাশিওন্যাল’-এ গলা মেলাতে মেলাতে। সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে চাভেস ও তাঁর দেশের জনগণের ‘বীরত্ব’কে কুর্নিশ জানিয়ে মুহূর্তে তৈরি করে-ফেলা ব্যানার। |
|
অন্য মেজাজে। রাজারহাটে। —ফাইল চিত্র |
মার্কিন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে জেহাদ বামপন্থী ঘরানার জিয়ন মন্ত্র, ফলিত স্তরে তারই রূপকার হিসাবে চাভেসকে দেখতে অভ্যস্ত বাম নেতা-কর্মীরা। আমেরিকার প্রায় উঠোনে বসে তাদের চ্যালেঞ্জ করার চাভেসীয় কাহিনি তাই বারে বারে উঠে আসে নানা বামপন্থী দলের দলিলে, সম্মেলনে। সেই চাভেসের প্রয়াণে প্রকাশ কারাটের সঙ্গে বেদনার সুরে তাই মিলে যাচ্ছে দীপঙ্করদের বক্তব্য। শোক মিছিল শুরুর আগে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন বলছিলেন, “সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম চাভেস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে তাঁর এই অকাল মৃত্যু বিরাট ক্ষতি বটেই। তাঁর চলে যাওয়ার সময় তো এটা নয়। কিন্তু মারণ রোগের জন্য তাঁকে থেমে
যেতে হল।” চাভেসকে সামনে রেখে সব ধরনের বাম দলের এক জায়গায় আসা কি ইঙ্গিতবাহী? নিরুপমবাবুর মতে, “বামপন্থী দলগুলির মধ্যে
মত ও পথের ফারাক আছে। মতাদর্শগত আলাপ-আলোচনাতেই সে সব মেটানো সম্ভব। তবে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতায় সব বামপন্থী দলই একমত।” প্রসঙ্গত, এসইউসি নেতৃত্ব এ দিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন, চাভেস এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা বলেই তাঁরা সিপিএমের সঙ্গে এক রাস্তায় হেঁটেছেন। নচেৎ নয়! |
|
উগো চাভেসের স্মরণে বামেদের শোকমিছিল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
দিল্লি হয়ে কলকাতায় সংবর্ধনা নিতে চাভেস এসেছিলেন ২০০৫ সালের ৫-৬ মার্চ। আট বছর আগের স্মৃতি এ দিন কাতর করে তুলেছে অনেককেই। যেমন এসএফআই নেতা শতরূপ ঘোষের কথায়, “সে দিনই প্রথম আমার মিছিলে হাঁটার স্মৃতি। হাজরা মোড় থেকে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম। ভাবতেও পারিনি, প্রায় সেই একই তারিখে চাভেসের শোকবার্তা লেখার কাজে (সংগঠনের জন্য) হাত দিতে হবে!” আট
বছর আগের সেই ৫ মার্চ রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে তাঁর স্প্যানিশে উচ্চারিত রবীন্দ্র-কবিতা ঠিকমতো বাংলায় অনুবাদের দায়িত্ব পালন
করে দেওয়ার জন্য এক জনকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেরুন শার্টের চাভেস। শোকমিছিলে নানা মুখের সারিতে কোথাও সেই অনুবাদক ছিলেন না।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! শরীর খারাপ। শরীরই বোধহয় ধকল নিতে পারেনি। নাকি মনই বেশি খারাপ? |
|
|
|
|
|