|
|
|
|
|
|
সঞ্চয়ের সাজ |
এক ঢিলে
দুই পাখি |
সোনার হার। রুপোর বিছে। প্ল্যাটিনামের আংটি। হিরের নাকছাবি। শুধু নজরকাড়া সাজের জন্যই
এ সব কিনছেন? না কি মাথায় রয়েছে প্রয়োজনে তা বিক্রির সুবিধার কথাও? এক ঢিলে
দুই পাখি মারার ‘মিথ’কে কষ্টি পাথরে যাচাই করলেন গার্গী গুহঠাকুরতা |
|
হিরের দ্যুতি |
ভাল...
• আকর্ষণ অমোঘ। তাই হিরের বাজার বাড়ছে পৃথিবী জুড়েই। ২০১১-’১২ সালে হিরের গয়নার আন্তর্জাতিক বাজারের মাপ ছিল ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। তার আগের বছর ওই অঙ্কটা ছিল ৩ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি।
• পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতের বাজারও। ২০০৫ সালেও এই বাজারের আয়তন ছিল ৮০০০ কোটি টাকা। এখন তা ৪৬ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে (যার ১৫% পূর্বাঞ্চলে)। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই ‘সলিটেয়ার’ বা এক খণ্ডের হিরের দখলে।
• চাহিদার নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পরেই রয়েছে ভারত। এই দেশে ফি-বছর হিরের গয়নার চাহিদা বাড়ছে ১৭% হারে। চিনের (১৮%) পর যা দুনিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
• হিরেকে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরতে তার হাতফেরতা বাজার তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে মুম্বইয়ের সংস্থা ডিভাইন সলিটেয়ার্স। গয়নায় বসানোর জন্য হিরে তৈরি করা এই সংস্থা এ বার চাইছে হিরের দামের সূচক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু...
• দু’একটি সংস্থা বিচ্ছিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু হাতফেরতা বাজার তৈরি না- হওয়ার কারণেই এখনও সে ভাবে সঞ্চয়ের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারেনি হিরে।
• বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারে সর্বত্র সোনার দাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। তাই তা বিক্রির ঝামেলা কম। অথচ এই সুবিধা না-থাকায় ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে হিরে কেনা থেকে পিছিয়ে যান অনেকে।
• অনেক দাম দিয়ে কেনা হিরেও পরে বিক্রি করতে গেলে কী দর পাবেন, তা নির্ভর করবে ব্যবসায়ীর ‘মর্জি’র উপর।
• এই একই সমস্যার মুখে পড়তে হবে চুনি, নীলা, পান্না ইত্যাদি পাথরের ক্ষেত্রেও।
|
সোনার সংসার |
ভাল...
• লগ্নির নিরাপদ জায়গা হিসেবে সোনার সাথে পাল্লা দেওয়া কঠিন। চড়া মূল্যবৃদ্ধির কামড় বাঁচিয়ে ভাল রিটার্ন দিতেও এর জুড়ি মেলা ভার। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে সোনার দাম উঁচু হারে বাড়েনি, এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া শক্ত।
• বিশেষজ্ঞদের মতে, মোট সঞ্চয়ের ৩.৩-৭.৫ শতাংশ সোনায় ঢাললে, বিনিয়োগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
• ২০০১ থেকে এখনও পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে ৪৬০%! ব্যাঙ্ক-ডাক ঘরের কথা তো বাদই দিন। আপনাকে এত চড়া রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতা রাখে খুব কম শেয়ারও।
• সোনায় বিনিয়োগে আপনি একলা নন। বিশেষত এই দেশে। মনে রাখবেন, বিশ্বে সোনার বৃহত্তম বাজার ভারত। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে ভারতে বিক্রি হয়েছে ৭৪৬ টন সোনা। যার ৫০ শতাংশই কেনা হয়েছে বিয়ের যৌতুক হিসেবে। |
|
কিন্তু...
• গয়নার সঙ্গে আবেগ জড়িত থাকে ঠিকই। কিন্তু মনে রাখবেন, সোনায় লগ্নির জন্য গয়না কিন্তু সেরা মাধ্যম নয়।
• হলমার্ক না-থাকলে তো কথাই নেই। এমনকী তা থাকলেও সোনার গয়না বিক্রি করে নগদ টাকা পেতে হলে অনেকটাই খোয়াতে হবে আপনাকে।
• সব জায়গায় প্রাপ্যর অঙ্ক সমান নয়। যে-দোকান থেকে কিনেছিলেন, সেখানে বেচলেই বরং তুলনায় বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা।
• গয়না বেচলেই গত কালের দাম হাতে পাবেন, তা ভাববেন না। কারণ, এমনিতেই ওই দামের থেকে প্রথমে অন্তত ১০% কম দেবে বিপণি। ধরে নেবে, সোনার দাম, মজুরি ইত্যাদি খাতে ওই লাভ রেখে তবেই আপনাকে ওই গয়না বিক্রি করা হয়েছিল। তাই সোনা কেনার সময়ে যে-দাম দেবেন, বিক্রির সময়ে সেই একই দর আশা করবেন না।
• এমনিতে এক দোকানে কেনা গয়না অন্য বিপণিতে বেচতে চাইলে কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সুবিধা পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে সোনার বদলে নগদ টাকা দিতে চায় না অনেক দোকানই। এমনকী তা হলমার্ক সোনা হলেও না। আর দিলেও, অনেকখানি ক্ষতি স্বীকার করতে হতে
পারে আপনাকে।
|
রুপোর মাধুরী |
ভাল...
• চাহিদায় এখনও বহু যোজন পিছনে। কিন্তু রিটার্নের মাপকাঠিতে সোনাকেও টেক্কা দেয় রুপো। অর্থাৎ, দীর্ঘ মেয়াদে রুপো ধরে রাখার পর তা বেচে যে-অনুপাতে ‘মুনাফা’ করা যায়, অন্তত সাম্প্রতিক কালে তা সোনার থেকেও বেশি।
• শুধু ভারতে নয়, এই ছবি বিশ্বের প্রায় সর্বত্র। এক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০০১ সালে সোনায় লগ্নি করে রিটার্ন ঘরে তোলা গিয়েছিল ২৫%। অথচ ওই একই বছরে রুপোয় টাকা খাটিয়ে রিটার্ন? ৮০-৮৫%
কিন্তু...
• সোনার গয়না বিক্রির ক্ষেত্রে যে যে সমস্যার কথা বলেছি, সেগুলি প্রযোজ্য রুপোর গয়নাতেও। এখানেও অন্য দোকানে রুপোর গয়না নগদে বিক্রি করা ঝক্কির। মজুরি-সহ বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেওয়ার চল আছে এখানেও।
• উপরি মুশকিল হল, সোনার শুদ্ধতার যেমন হলমার্ক আছে, রুপোয় এখনও তেমন জনপ্রিয় কিছু নেই। ফলে বিক্রি করতে গিয়ে দাম ঠিক হওয়ার সময়ে এ বিষয়ে পুরোপুরি দোকানির উপরই নির্ভর করতে হবে আপনাকে।
|
প্ল্যাটিনামের চমক |
ভাল... • এমনিতে এই সাদা ধাতু সোনার
চেয়েও দামি।
• সম্প্রতি দেশে তার চাহিদা কিছুটা হলেও ঊর্ধ্বমুখী।
কিন্তু...
• হিরের মতো প্ল্যাটিনামেরও কেনা-বেচার পদ্ধতি স্বচ্ছ নয়। স্পষ্ট নয় দাম নির্ধারণের অঙ্ক।
• হাতফেরতা বাজারে দাম নিয়ে ধোঁয়াশার কারণেই এর ব্যবহার এখনও এ দেশে অতি সামান্য। বছরে মাত্র ১০ টন। যা সোনার চাহিদার তুলনায় নস্যি।
• নগদে গয়না বিক্রি বেশ ঝক্কির। দাম নির্ভর করে মূলত ব্যবসায়ীদের মর্জির উপর। বিক্রি করতে গেলে সাধারণত মূল দামের ৮৫% ফেরত পান গয়না-মালিক।
|
|
|
জিজ্ঞেশ মেটা
(প্রধান, ডিভাইন সলিটেয়ার্স)
হিরের দামের সূচক করেছি। নিজেদের বিক্রি করা হিরে পরে ক্রেতার কাছ থেকে কিনতেও তৈরি আমরা। |
|
|
রুদ্র রায় চৌধুরী
(কর্ণধার, এম পি জুয়েলার্স)
কেনা-বেচার সহজ পদ্ধতি ও দামের নিশ্চয়তা সোনাকে শুধু গয়নার বাজারে আটকে রাখেনি। লগ্নির ক্ষেত্র হিসেবেও সমান আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর
সব মাপকাঠি মেনে হিরের দামের সূচক
হলে, তা অবশ্যই স্বাগত। এতে হিরের ব্যবসা বাড়বে। |
|
|
পঙ্কজ পারেখ
(কর্তা, জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল)
জমির মতোই সোনার দাম বাড়ছে। তা ছাড়া সোনার গয়না কিনে ভবিষ্যৎ
সুরক্ষিত রাখার প্রথা
বহু পুরনো। |
|
|
|
|
|
|
|