বাড়িতে বা শেয়ারে বিনিয়োগ
লাভ করলেই কর দেবেন না কি?
ম্পত্তি কিনে রাখা এখন রেওয়াজ হয়েছে উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-বিত্তদের মধ্যে। একাধিক ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। প্রথমটি বাদে পরেরগুলি সব সময়ে থাকার জন্য নয়, কেনা হয় ভবিষ্যতে বিক্রি করে মোটা লাভ ঘরে তোলার তাগিদে। গত পাঁচ-সাত বছরে অত্যন্ত ভাল লাভের সন্ধান দিয়েছে সম্পত্তি-বাড়ি -জমি। সম্পত্তি লগ্নির জায়গা হিসাবে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠায় অনেক নতুন হাউজিং কমপ্লেক্সে বেশ কিছু ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা কোনও সময়েই খোলা দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ, এগুলি কিনে রাখা হয়েছে ভবিষ্যতে বিক্রির জন্য। মোটা লাভ ঘরে আসবে বলে। শহরতলিতে মানুষ কিনে রাখছে ছোট ছোট প্লট। লোপাট হয়ে যাচ্ছে ধানজমি, আমবাগান। সম্পত্তির মতো শেয়ার থেকেও অনেক সময়ে মোটা লাভ আসে তা ছোট এবং বড় মেয়াদে ধরে রেখে। আয়কর আইন অনুযায়ী, এই ধরনের লাভ মূলধনী লাভের আখ্যা পায় এবং এই লাভের উপর দিতে হয় মূলধনী লাভ কর বা ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স।

মূলধনী সম্পদ
মূলধনী সম্পদ হস্তান্তর করে যে-লাভ হয়, তা-ই হল মূলধনী লাভ বা ক্যাপিটাল গেইন। প্রশ্ন হল, কোন সম্পদকে আমরা মূলধনী সম্পদ বলব। নীচের কয়েকটি সম্পত্তি ছাড়া বাকি সব সম্পদই এই মূলধনী সম্পদ বা ক্যাপিটাল অ্যাসেট-এর মর্যাদা পায়
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস, যেমন জামাকাপড়, আসবাব, গাড়ি ইত্যাদি। এর মধ্যে অবশ্য গয়না, প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ, ড্রইং, পেন্টিং, মূর্তি এবং কলাশিল্প পণ্যকে ধরা হবে না।
ব্যবসার স্টক ইন ট্রেড, কাঁচা মাল ইত্যাদি।
কৃষি জমি।
বিভিন্ন ধরনের গোল্ড বন্ড।
মালিকানার মেয়াদ অনুযায়ী মূলধনী সম্পদ দু’ধরনের হতে পারে। স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন। শেয়ার, মিউচুয়াল ইউনিট ইত্যাদি কেনার পর ১২ মাসের বেশি সময় ধরে রাখলে তা দীর্ঘকালীন মূলধনী সম্পদের মর্যাদা পায়। এর কম সময় ধরে রাখা হলে তা হয় স্বল্পকালীন মূলধনী সম্পদ। শেয়ার ছাড়া অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে, যেমন স্থাবর সম্পত্তি দীর্ঘকালীন মূলধনী সম্পত্তির মর্যাদা পায়, যদি তা ৩৬ মাসের বেশি সময় ধরে রাখা হয়। এর কম সময় ধরে রাখা হলে তা হয় স্বল্পকালীন মূলধনী সম্পদ।

মূলধনী লাভের অঙ্ক
কোনও মূলধনী সম্পদ হস্তান্তর করে যে-মূল্য পাওয়া যায়, তা থেকে সেই সম্পদ সংগ্রহের খরচ, উন্নতিসাধন এবং হস্তান্তরের আনুষঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বাদ দিয়ে যদি কোনও লাভ হয়, আয়করের ভাষায় তাকেই বলা হয় মূলধনী লাভ।

মূল্যবৃদ্ধির সূচক
(কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স)
দীর্ঘকালীন মূলধনী সম্পদ অধিগ্রহণের খরচ হিসাব করার সময়ে প্রয়োগ করা যায় মূল্যবৃদ্ধির সূচক। আয়কর দফতর প্রতি বছর প্রকাশ করে এই সূচক। ১৯৮১-’৮২ অর্থবর্ষকে ভিত্তির বছর ধরে (যাকে দেওয়া হয়েছে ১০০ অঙ্ক) পরের বছরগুলির সূচক ধার্য করা হয় মূল্যবৃদ্ধির হার অনুযায়ী। যেমন ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের সূচক বেড়ে হয়েছে ৮৫২ পয়েন্ট। এই নিয়ম অনুযায়ী ২০০৪-’০৫ সালে (যখন সূচক ছিল ৪৮০ পয়েন্ট) আপনি যদি ১৮ লক্ষ টাকা খরচে কোনও ফ্ল্যাট কিনে থাকেন এবং তা উন্নতির জন্য ওই বছর আরও ২ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকেন, তবে ২০১২-’১৩ সালে আপনার অধিগ্রহণের খরচ দাঁড়াবে—
২০ লক্ষ টাকা x (৮৫২/৪৮০) = ৩৫.৫০ লক্ষ টাকা।
এই ফ্ল্যাট যদি আপনি ৪৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন, তবে আপনার মূলধনী লাভ হবে ৯.৫ লক্ষ টাকা।
কতকগুলি সম্পদকে মূলধনী লাভ কর থেকে বিশেষ ভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল
(১) পূর্বতন ইউনিট ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া-র ইউনিট-৬৪।
(২) রাজনৈতিক দলের মূলধনী লাভ।
(৩) পুর / ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কোনও কৃষিজমি বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণ।
(৪) ইক্যুইটি শেয়ার হস্তান্তর করে যদি দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ হয়, যা হস্তান্তরের সময়ে সিকিউরিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স বা এসটিটি দেওয়া হয়েছে।

মূলধনী লাভের উপর করের হার
মূলধনী লাভের উপর কর দিতে হয় বিশেষ হারে।
(ক) স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ
বাজারে নথিবদ্ধ শেয়ার এবং ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ইউনিট, যা বিক্রির সময়ে সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশন ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে, তার উপর যে-লাভ হয়েছে তার ১৫%।
অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে আয়করদাতার জন্য প্রযোজ্য স্বাভাবিক করের হার।
(খ) দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ
বাজারে নথিবদ্ধ শেয়ার, যা বিক্রির সময়ে এসটিটি দেওয়া হয়েছে, তার উপর লাভ মূলধনী করমুক্ত।
অন্যান্য শেয়ার এবং মিউচুয়াল ইউনিটের ক্ষেত্রে কম হারে ইনফ্লেশন ইনডেক্স প্রয়োগ করা হলে ২০% এবং তা প্রয়োগ না-করা হলে ১০%।
অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে (বাড়ি জমি ফ্ল্যাট-সহ) ২০%। অবশ্য ১১৫ এবি, এসি, এডি এবং এই ধারা অনুযায়ী মূলধনী লাভের ক্ষেত্রে কর ধার্য হবে ১০% হারে।

কর সাশ্রয়কারী ক্যাপিটাল গেইনস বন্ড
ইস্যুকারী সংস্থা এনএইচএআই এবং আরইসি
ফেস ভ্যালু প্রতিটি ১০,০০০ টাকা
ন্যূনতম আবেদন ১টি বন্ড
সর্বাধিক আবেদন ৫০০টি বন্ড (৫০,০০,০০০ টাকা)
আবেদনের সঙ্গে ১০০ শতাংশ জমা করতে হবে
অ্যালটমেন্টের দিন যে-মাসে আবেদন করা হবে, তার শেষ দিন
লক-ইন মেয়াদ ৩ বছর
হস্তান্তরযোগ্যতা নেই
সুদের হার বাৎসরিক ৬ শতাংশ
সুদ প্রদান বছরে এক বার
রেটিং এএএ (ট্রিপল এ)
কর সাশ্রয় দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের যতটা লগ্নি
করা হবে, তার উপর কর ধার্য হবে না।
লগ্নি করতে হবে সম্পত্তি হস্তান্তরের ৬ মাসের মধ্যে

কর বাঁচানোর রাস্তা
মোটা লাভ হলেই মোটা কর দিতে হবে, এমন কিন্তু নয়। যে-আয়কর আইন অনুযায়ী কর ধার্য হয়, সেই আইনেই দেখানো আছে কর সাশ্রয়ের রাস্তাও। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক।
কোনও বাড়ি বিক্রি করে যদি দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ হয়, তবে তার উপর কর বাঁচানো যায়
(ক) বিক্রির ১ বছর আগে অথবা ২ বছরের মধ্যে যদি একটি বাড়ি কেনা হয়, অথবা
(খ) ৩ বছরের মধ্যে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়, অথবা নির্মীয়মাণ বাড়ি কেনা হয়।
বাড়ি/ফ্ল্যাট কেনা এবং তৈরির জন্য মূলধনী লাভের যতটা ব্যবহার করা হবে, তার উপর কোনও কর দিতে হবে না। যত দিন পর্যন্ত বাড়ি কেনা অথবা নির্মাণ করা না-হবে, তত দিন পর্যন্ত মূলধনী লাভের টাকা কোনও ব্যাঙ্কে মূলধনী লাভ অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত রাখতে হবে। এই টাকা রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট বছরের রিটার্ন ফাইল করার আগে অথবা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে।
দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর বাঁচানো যায়, লাভের টাকা ৫৪ ইসি ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্যাপিটাল গেইনস বন্ডে লগ্নি করে। এই বন্ড ইস্যু করে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন। কর বাঁচাতে লগ্নি করতে হবে ছ’মাসের মধ্যে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল এর মূল বৈশিষ্ট্য।

লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.