নিজেদের দলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা প্রকাশ করলেন সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের অর্ধেক। সঙ্গী কংগ্রেসের পাঁচ জন।
নানা কারণে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বহু বার প্রকাশ্যে এসেছে। বুধবার ফের তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল সিউড়িতে। বীরভূমের ওই পুরসভায় ১৮ জন সদস্যের মধ্যে ১২ জনই তৃণমূলের, বাকি ৬ জন কংগ্রেসের। নির্দল হিসেবে জিতে এক সময়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁরই বিরুদ্ধে বেনিয়ম ও এক তহবিলের টাকা অন্য খাতে খরচ করা-সহ নানা অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন তৃণমূলের ছয় কাউন্সিলর। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাতে সই করেছেন কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলর। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) সুজয় আচার্য বলেন, “অনাস্থার কথা জানি। নিয়ম মেনে এগোনো হবে।” |
এই পুরসভায় মোট ১৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে তৃণমূলের ১২ ও কংগ্রেসের ৬ জন রয়েছেন। বর্তমান পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় নির্দলের টিকিটে জিতেছিলেন। শহরবাসীর একাংশের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি ভাল। তা সত্ত্বেও তৃণমূল তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় তিনি নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং জেতেন। সে কারণে, বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কাছে তিনি চক্ষুশূল বলে তৃণমূলেরই একাংশের দাবি। এ দিন যাঁরা অনাস্থা এনেছেন তাঁদের মধ্যে এক তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক দাস বলেন, “বর্তমান পুরপ্রধান নির্দল হয়ে জিতেছেন। উনি তৃণমূলের কেউ নন।” তাঁর দাবি, “কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। পুরপ্রধান হয়েও উনি পুরবাসীকে পরিষেবা দিতে পারেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে পুরপ্রধান করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রীতিকণা ভট্টাচার্যকে পুরপ্রধান করব।”
অনাস্থা আনা তৃণমূল কাউন্সিলরেরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার না করলেও উপ-পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাই ফুটে উঠছে। উপপুরপ্রধানের দাবি, “সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে এ সব হচ্ছে। দলীয় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে গেলে জেলা সভাপতিকে জানানো দরকার। সে সব করা হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।” যদিও সিউড়ির বিধায়ক স্বপনবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। অসুস্থতার কারণে দু’সপ্তাহ সিউড়ি যেতে পারিনি। আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, জানি না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আবার বলেন, “দলীয় নিয়ম অনুসারে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে গেলে জেলা সভাপতির অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। যাঁরা অনাস্থা এনেছেন, তাঁরা দলবিরোধী কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
‘উন্নয়নের স্বার্থে এক খাতের টাকা
অন্য খাতে খরচ হয়েই থাকে।’
উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, পুরপ্রধান |
‘সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক
স্বপনকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে হচ্ছে।’
উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, উপপুরপ্রধান |
|
তৃণমূলের এই অনাস্থা প্রস্তাবে কংগ্রেস কাউন্সিলররা কেন সই করলেন? ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইয়াসিন আখতারের দাবি, “প্রীতিকণাদেবীকে যখন প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল, তখন আমরা উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছিলাম নির্দল প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু পরে উনিও তৃণমূলে যোগ দেন। ভেবেছিলাম, ভাল কাজ করবেন। কিন্তু তিনি পুরবাসীকে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করেছেন। এই সব নানা কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ৫ কাউন্সিলর সই করেছি।” পুরপ্রধান বলেন, “কেন এবং কী কারণে অনাস্থা আনা হয়েছে বলতে পারব না। তবে সিউড়ি জলপ্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। বোর্ডের সব সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ভাবে পাশ হয়েছে। উন্নয়েনর স্বার্থে এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ হয়েই থাকে। দেখা যাক, শেষে কী হয়।” |